ফারহান আব্দুল্লাহ: সল্প বেতনের কর্মকর্তা হওয়ার পরেও কয়েক কোটি টাকা বাড়ির মালিক রাজউকের কানুনগো রাফেলুল ইসলাম জিন্নাহ। গ্রামের বাড়ী জামালপুর হলেও স্থায়ী বসতি স্থাপন করেছেন রাজধাণীর উত্তরা মডেল টাউনে। বানিয়েছেন কয়েক কোটি টাকার আলিশান বাড়ি। কিনেছেন দামি গাড়ি ও।
কিছু বছর আগেও জিনি স্বল্প টাকার ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি এত সম্পদ কোথায় পেলেন তা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক গুঞ্জন রয়েছে। আগে উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৯ নাম্বার রোডের আনোয়ার মাস্টারের বাড়ীতে ভাড়া থকতেন রাফেলুল। এই বিষয়ে আনোয়ার মাস্টারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, কয়েক বছর আগে আবার বাড়ীতে ভাড়া থাকতেন। হঠাৎ করে তিনি এত টাকার মালিক হলেন কিভাবে সেটাই বুজতে পারছিনা।
এভাবেই একের পর এক ঘটনার জন্ম দিচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের ঘুষ, দুনীতি এবং অনিয়মের কারণে বার বার আলোচনায় আসছে রাজউক। রাজউকের কর্মচারীদের বাড়ি-গাড়ি: অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ ও দিয়েছে দুদক।
কেউ উচ্চমান সহকারী, কেউ নিম্নমান সহকারী, কেউবা বেঞ্চ সহকারী। তবে সবাই কোটিপতি। রাজউকের তৃতীয় কিংবা চতুর্থ শ্রেণির ২০-৩০ হাজার টাকা মাসিক বেতনের কর্মচারী হলেও অনেকের রাজধানীতে রয়েছে এক বা একাধিক বহুতল বাড়ি, আধুনিক গাড়ি। অনেকের আছে প্লট, ফ্ল্যাট, দোকানপাট।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে রাজউকের কয়েকজন কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলা আছে। তবে তদন্তের গতি ধীর। অধিকাংশকে আইন স্পর্শ করছে না। কয়েকজনের নামে দুদকে মামলা হলেও ধরা ছোঁওয়ার বাহিরে রয়ে গেছে অনেকেই।
স্বল্প বেতনের চাকরি করেও ওই কর্মচারীরা কীভাবে বিত্তবৈভবের মালিক তা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কয়েকজনের নামে দুদকে মামলা হলেও ধরা ছোঁওয়ার বাহিরে রয়ে গেছে অনেকেই।
তার মধ্যে একজন হলেন রাজউক উত্তরা অফিসের কানুনগো রাফেলুল ইসলাম জিন্নাহ। রাফেলুল জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা ফজলুল হকের ছেলে। ১৯৯৭ সালের ১ এপ্রিল রাজউকে সার্ভেয়ার পদে চাকুরী নেন। পরবর্তীতে ১২-১১-২০১৩ তে সার্ভেয়ার থেকে কানুনগো পদে পদায়ন করেন।
রাজউকে চাকরী হওয়ার পরেই জেনো আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়েছেন রাফেলুল। উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরে আলিশান ৬ তলা বাড়ি করেছেন। কিনেছেন দামি প্রাইভেট কার ও। অনুসন্ধানে জানা যায়, দপ্তরটির কতিপয় কর্মকর্তা, কানুনগো, সার্ভেয়ার এবং অফিস সহকারীদের কমিশন বাণিজ্য, দালালদের যোগসাজশে বিভিন্ন উপায়ে ক্ষতিপূরণের টাকা আত্মসাৎস করে আসছেন।
রাজউকের দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মকর্তাদের বিষয়ে অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, কমিশন বাণিজ্য, ভুয়া পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি দিয়ে একজনের ক্ষতিপূরণ অন্য ব্যক্তিকে দিয়ে দেওয়ার, প্রকৃত মালিকদের মামলা-মোকদ্দমার ফাঁদে আটকে ক্ষতিপূরণের টাকা আত্মসাৎ করাসহ নানান দুর্নীতি-অনিয়ম করে আসছে একটি চক্র। ওই চক্রের সমন্বিত একটি তালিকাও করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। ওই চক্রে আছেন বর্তমান এবং সাবেক কিছু ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা, কানুনগো, সার্ভেয়ার, অফিস সহকারী, চেইনম্যান, জারিকারক, উমেদার, আইনজীবী কথিত দালাল।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘রাজউক থেকে বিনা ঘুষে সাধারণ মানুষ সেবা পেয়েছেন, এমন ঘটনা বিরল। রাজউক কর্মকর্তা, দালাল ও সেবাগ্রহীতাদের একাংশের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় আঁতাতের মাধ্যমে চুক্তি করে সুনির্দিষ্ট হারে ঘুষ নেওয়া হয়। রাজউক ও দুর্নীতি একাকার এবং সমার্থক শব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, রাজউকে দুর্নীতি ও অপব্যবস্থা রয়েছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। পরিকল্পনা প্রণয়ন, উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার প্রতিষ্ঠানকে আবার নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে গোড়া থেকে স্বার্থের দ্বন্দ্ব ছিল। সেটিই অনিয়ন্ত্রণ, অব্যবস্থাপনা, নিয়ম-নীতির লঙ্ঘন ও রক্ষককে ভক্ষকের ভূমিকায় রূপান্তরিত করার জায়গাটি তৈরি করেছে।
এই বিষয়ে কানুনগো রাফেলুলের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তার ফাইলে বাড়ি গাড়ি নারি সব আছে বলেই ফোন কেটে দেন।