গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৩টি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব রয়েছে তা হলো

0
59

১. দেশের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের জাতীয় সংসদ সদস্য পদে নির্বাচনের জন্য মনোনীত করা। ২. মনোনীত ব্যক্তিদের মধ্য থেকে প্রয়োজনীয়সংখ্যক সদস্যদের নির্বাচিত করা। ৩. নির্বাচিত সংসদ সদস্যদেয়কে নিয়ে সরকার গঠন করা।

এই তিনটি বাষ্ট্রীয়কার্য সম্পন্ন করার দায়িত্ব সরকারের। একাজ কোনোভাবেই কোনো রাজনৈতিক দলের ইচ্ছা অনুযায়ী রাজনৈতিক দল কর্তৃক হতে পারে না। কিন্তু নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের এই কাজ সরকার কর্তৃক করা হয় না। এই কাজ রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী কমিটি কর্তৃক করা হয়।

এখানে বলা যেতে পারে যে, বাজনৈতিক দলের নির্বাচনী কমিটি শুধুমাত্র তাদের দলের প্রার্থীদের মনোনীত করেন। একথার প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, দলের প্রার্থী বলতে কি বুঝায়? রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীরা কি জনগণের প্রার্থী নয়? জনগণ কি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের ভোট দেয় না? নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাজনৈতিক দলের ভুল মনোনয়নের ছিদ্রপথেই অসৎ ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে অনুপ্রবেশ করেন এবং তাদের অসৎ উদ্দেশ্য পূর্ণ করেন।

তাদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তারা গণতান্ত্রিক রাজনীতির নামে অগ্নিসন্ত্রাস, আগুনে পুড়িয়ে এবং রেললাইন কেটে চলন্ত ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটিয়ে মানুষ হত্যা, হরতাল, নৈরাজ্য, রাজনৈতিক হানাহানী ইত্যাদি করেন। এই অসৎ ব্যবসায়ী রাজনৈতিক নেতারা রাজনীতি এবং বাষ্ট্রক্ষমতাকে তাদের অসৎ ব্যবসার হাতিয়ারে হিসেবে করছেন। জোর যার মুলুক তার। এই প্রথা বহু পুরানো। এই প্রথা কখনই বিলুপ্ত হয়নি। প্রচলিত নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ার মুখ্য পন্থা হলো, জোর যার মুল্লুক তার চিরাচরিত প্রথা।

এই পন্থায় ভোট ও ব্যালটের এই নির্বাচন গণতান্ত্রিক না হয়ে, জোর যার মুল্লুক তার প্রথার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এই পদ্ধতি সামরিক একনায়কতন্ত্রের মত দলীয় একনায়কতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পর্যবসিত হয়েছে। বিভাজিত হিংসা-বিদ্বেষের দলীয় এই নির্বাচনে অবাধে নির্বাচিত হওয়ার পথ সম্পূর্ণভাবে রুদ্ধ হয়ে পড়েছে। প্রচলিত নির্বাচনী ব্যবস্থায় স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং প্রার্থী হওয়া গেলেও বিদ্যমান বিভক্তি বা বিভাজিত রাজনৈতিক সংস্কৃতি অনুসারে দলীয় প্রার্থী হতে না পারলে নির্বাচিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।এই পদ্ধতিতে দলীয় প্রার্থীরা নির্বাচিত হওয়ার লক্ষ্যে ব্যবহার করেন কালো টাকা, বে-আইনী অস্ত্র এবং মিথ্যা কূট-কৌশল।

প্রচলিত নির্বাচনকে জনগণ হার-জিতের একটি খেলা মনে করেন। একারণে ভোট টাকার বিনিময়ে বিক্রি হয়। কখনও চাপের মুখে এবং কখনও বা সাময়িক বন্ধুত্ব এবং সস্তা অঙ্গীকারের ভরসায় একে ব্যবহার করা হয়। প্রচলিত নির্বাচনী ব্যবস্থা অতি ব্যয়বহুল। এতে সন্ত্রাসের বিস্তার হয়। জাতির মধ্যে বিভক্তি পাকাপোক্ত করে। এটি দলবাজির সীমাহীন স্বেচ্ছাচারিতায় পরিপূর্ণ। এই নির্বাচনী ব্যবস্থা আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ, হিংসা-প্রতিহিংসা, মিথ্যা-প্রতারণা, নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় প্রাণহানীর নানাবিধ অশুভ কার্যকলাপে জর্জরিত।

নির্বাচনে ইরলেক্ট্রনিক ভোটিং ম্যাসিন (ইভিএম) ও ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা ও ভোটারের এনআইডি কার্ডের ব্যবহারে ভোট গণনা ও জালভোট প্রদান, ব্যালট বাক্স এবং ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনা হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু নির্বাচনে সৎ ও যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন এবং নির্বাচিত করার ব্যাপারে ইভিএম পদ্ধতি কোনো ভূমিকা রাখতে সক্ষম নয়। ইতিপূর্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইলেক্ট্রনিক ভোটিং ম্যাসিনের মতোই নির্বাচনে দেশের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের প্রার্থী মনোনয়ন এবং নির্বাচিত করার ব্যাপারে কোনো ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচিত সরকার যেসব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে সক্ষম হয়নি তা হলো- ১. দেশের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের নির্বাচিত করতে সক্ষম হয়নি। ২. অযোগ্য-অসৎ ব্যক্তিদের নির্বাচিত হওয়ার পথ বন্ধ করতে সক্ষম নয়। ৩. নির্বাচনে কালো টাকার প্রভাব বিস্তার বন্ধ করতে সক্ষম হয়নি। ৪. নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা বন্ধ করতে সক্ষম হয়নি। ৫. নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ মিথ্যা প্রোপাগান্ডা বন্ধ করতে সক্ষম হয়নি। ৬. টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যাধি নিরাময় করতে সক্ষম হয়নি। ৭. সামরিক আইন মার্শাল ল’ জারি হওয়ার আশঙ্কা বিলুপ্ত করতে সক্ষম হয়নি।

৮. আন্দোলনের নামে অগ্নিসংযোগ ভাংচুর, বোমাবাজি, হরতাল-নৈরাজ্য করার দূরারোগ্য ব্যধি নির্মূল করতে সক্ষম নয়। ৯. একনায়কতান্ত্রিকতা বা ব্যক্তিশৃঙ্খল থেকে রাজনীতিকে মুক্ত করতে সক্ষম নয়। ১০. তোষামোদী-খোষামোদী রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিলুপ্ত করতে সক্ষম হয়নি। ১১. ঘুষ-দুর্নীতি সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি নির্মূল করতে সক্ষম হয়নি। ১২. দুশমনি ঘৃণা-বিদ্বেষ আর হিংসা-প্রতিহিংসার রাজনীতি বিলুপ্ত করতে সক্ষম নয়। ১৩. বিদ্যমান রাজনৈতিক কারণে জনগণের মধ্যে যে বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে- তা বিলুপ্ত করতে সক্ষম নয়। ১৪. পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করে বিরোধীদলের আন্দোলন সংগ্রাম ও নেতা- কর্মীদের দমন-পীড়নের অপসংস্কৃতি বিলুপ্ত করতে সক্ষম নয়। ১৫. জাতীয় সংসদে দলীয় স্বার্থরক্ষা ব্যতীত জনগণের স্বার্থরক্ষার পক্ষে সংসদ সদস্যগণ কোন ভূমিকা রাখতে সক্ষম নয়।

১৬. প্রধান বিচারপতি/বিচারপতি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার/নির্ব চন কমিশনার, সরকারী কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান/সদস্য এবং জনপ্রশাসনের উচ্চপদে ক্ষমতাসীন দলের অনুগত ব্যক্তিদের নিয়োগদান বন্ধ করতে সক্ষম হয়নি। ১৭. সিন্ডিকেটের মাধ্যমে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি করে জনগণের টাকা-পয়সা লুটপাট করার অপকর্ম বন্ধ করতে সক্ষম হয়নি। সুতরাং জাতীয় নির্বাচনে দেশপ্রেমিক সৎশুদ্ধ দেশের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের নির্বাচিত করার বিকল্প নেই। কিন্তু ক্ষমতাশালী আওয়ামী লীগ ও বিেনপিতে যেভাবে অসৎ ব্যবসায়ীরা অনুপ্রবেশ করেছে তাতে সৎশুদ্ধ ব্যক্তিদের জাতীয় নির্বািচনে দলের মনোনয়ন পাওয়া দূরে থাক তাদের দলের নেতৃত্বে টিকে থাকাও অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

12 + 19 =