নানামুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন বৈশ্বিক অর্থনীতি। উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং উচ্চ সুদহারের কারণে বাড়ছে অনিশ্চয়তা। ঝুঁকি
আছে আগামী দিনে ভূ-অর্থনৈতিক পরিস্থিতির এবং উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর। এসব কারণে অর্থবছরের বাকি সময়ে
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত থেকে পাওয়া রপ্তানি আয় প্রাপ্তি বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে। সম্প্রতি তৈরি
পোশাকের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন আভাস দেওয়া হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে এই ধরনের প্রতিকুল পরিস্থিতি মোকাবিলার সক্ষমতা অর্জনে প্রয়োজনীয় সুপারিশও রাখা হয়েছে। এতে
রপ্তানির গতিশীলতা ধরে রাখতে পোশাক উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনা, উৎপাদনশীলতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি, লিড টাইম
কমানো, পণ্যের উদ্ভাবন, নতুন বাজার অনুসন্ধান, কার্যকর গবেষণা নিশ্চিত করা, তৈরি পোশাক কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়ন
এবং উৎপাদন প্রক্রিয়ার আধুনিকীকরণ করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
বর্তমানে দেশের রপ্তানি আয় মূলত তৈরি পোশাকনির্ভর। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী উচ্চ
মূল্যস্ফীতির চাপে রপ্তানির এই অন্যতম স্তম্ভ পোশাক খাতের আয়ে ভাটা শুরু হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয়
মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) এ খাত থেকে রপ্তানি আয় কমেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের তৈরি পো শাক খাতের ক্রয়াদেশ ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে; আন্তর্জাতিক বড় বড় ব্র্যান্ড
ও খুচরা বিক্রেতা প্রতি ষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে বড় পরিমাণে ক্রয়াদেশ পাচ্ছে দেশের তৈরি পোশাক খাত। কভিড-১৯
মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ এটি। এ অবস্থায় উচ্চ সুদহার,
মূল্যস্ফীতি, ভবিষ্যৎ ভূ-অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অনিশ্চয়তা, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির হার কমে যাওয়া ও জটিল
আর্থিক পরি স্থিতির কারণে আগামী মাসগুলোতে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে
পারে। সম্প্রতি এই খাতটি দেশীয় রাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, তুলার দামের
ওঠানামা, কভিড-১৯ মহামারি এবং ইইউ-ভিয়েতনাম মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিসহ একাধিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। এ
ছাড়া আসন্ন এলডিসি উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে এই শিল্পের বিকাশের আরেকটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিতে পারে। তা
সত্ত্বেও বিদায়ী বছরে জিডিপিতে তৈরি পোশাক খাতের অবদান ছিল ১০ দশমিক ৩৫ শতাংশ, আর মোট রপ্তানি আয়
১০ দশমিক ২৭ শতাংশ বেড়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর ) তৈরি পোশাক খাত থেকে মোট ১
হাজার ১৭৭ কোটি ডলার আয় করেছে, যা আগের প্রান্তিকের তুলনায় ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি। তবে গত বছরের
একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ কম। আর আলোচ্য সময়ের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৩ দশমিক ৪০
শতাংশ কম। এর মধ্যে নিটওয়্যার পোশাকে রপ্তানি বেশি হারে কমেছে। অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে নিটওয়্যার পোশাকে
রপ্তানি আয় হয়েছে ৬৭১ কোটি ডলার, যা আগের প্রান্তিক সেপ্টেম্বরের তুলনায় শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং গত
বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ কম। আর একই সময়ের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৯ দশমিক ১৬
শতাংশ কম। রপ্তানিকা রকরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলো পোশাক আমদানি কমিয়ে
দেওয়ায় এ সংকট তৈরি হয়েছে। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশের ক্রেতারা পোশাকের মতো খাতে এখনো কম
অর্থব্যয় করছেন। তাই রপ্তানি আয় কিছুটা কমে গেছে। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ব্যাংক সুদের হার
বাড়ানোয় আরও কয়েক মাস এ প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান এ প্রসঙ্গে
বলেন, প্রতি বেদনটি ডিসেম্বরের তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছে। তবে চলতি বছরের শুরু থেকে তৈরি পোশাক খাতে
রপ্তানি পুনরুদ্ধার শুরু হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে (জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ থেকে সব মিলিয়ে
৯৪৭ কোটি মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ দশমিক
১৫ শতাংশ বেশি। এর আগের ছয় মাস তৈরি পোশাকের রপ্তানি ছিল বেশ চ্যালেঞ্জিং।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে যে পরামর্শগুলো দেওয়া হয়েছে, সেগুলো যথার্থএবং আমরা
সেগুলো নিয়ে কাজ করছি। এরই মধ্যে পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ অনেক হয়েছে, নতুন বাজারও আমাদের আগের চেয়ে
বেড়েছে, কর্মীদের দক্ষতা নিয়েও আমরা কাজ করছি, কর্মীদের দক্ষতা বাড়াতে আমরা ইনোভেশন সেন্টার করেছি, তবে
আরও করা দরকার। আমরা সেই চেষ্টা করছি।