যশোরের কোতোয়ালি মডেল থানার কিছু পুলিশের বিরুদ্ধে এক যুবককে ঘুষের জন্য নির্মমভাবে ঝুলিয়ে পেটানোর অভিযোগ রয়েছে। জনগনের জানমালের নিরাপত্তার জন্য নিয়োযিত পুলিশের বিরুদ্ধে এমন বর্বরতা নতুন নয়। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সন্ত্রাস, রাজনৈতিক নৈরাজ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে আমরা ক্রমশ ওপরের দিকে যাচ্ছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অপকর্ম, জুলুম ও নির্যাতন দিনের পর দিন মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ওদের অপকর্ম দমন করার যেন কোন অভিভাবক নেই। নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারন আইন-২০১৩ থামাতে পারছে না পুলিশের ক্রমবর্ধমান অপরাধ। পত্রিকার পাতা খুললে দেখা যায় চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, শ্লীলতাহানী, খুন, দাবিকৃত টাকা না পেয়ে হত্যা, বিচারবহির্ভুত হত্যা, ধর্ষন, গুম, অপহরণ, চাঁদাবাজি, ঘুষ, হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন, গ্রেফতার বাণিজ্য, সাধারন মানুষকে হয়রানি-এক কথায় অপরাধের সব শাখায় পুলিশের বিচরন। পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। নারায়নগঞ্জ জেলার সাত খুনে র্যাবের কাহিনী শুধু দেশের ভেতরেই নয়, গোটা বিশ্ব জেনে গেছে। হেফাজতে নিয়ে এক ব্যবসায়ীর কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় ২জুন, ২০১৫ র্যাবে-১ এর ছয় সদস্যের জেল হয়। ২০১১ সালে ৪ নভেম্বর চট্টগ্রামে দরবার লুটের ঘটনায় জেল খাটেন র্যাব-৭ এর তৎকালীন অধিনায়ক জুলফিকারসহ তিন কর্মকর্তা। তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কাদের নির্যাতনের অপরাধে কারাদন্ড ও অর্থদন্ড উভয় দন্ডে দন্ডিত হন ওসি হেলাল। এত কিছুর পরও র্যাব-পুলিশের ‘কুছ পরোয়া নেহি’ ভাব। রহস্যজনক ও অপ্রতিরোধ্যভাবে বেড়েই চলছে তাদের দৌড়াত্ব। ৯ জানুয়ারি, ২০১৬ বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাম রাব্বিকে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের বেধড়ক মারধর ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, ১৫ জানুয়ারি, ২০১৬ ডিসিসির পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা বিকাশকে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ কর্তৃক নির্যাতন, মিরপুরে চা দিতে অস্বীকার করায় চা দোকানদার বাবুলক মারধর ও চুলায় ফেলে হত্যা, খুলনায় ট্রাফিক পুলিশ মুনির হোসেনের বিরুদ্ধে ভ্যানচালক ওবায়দুল ইসলামকে প্রকাশ্যে লাথি মেরে, প্লায়ার্স দিয়ে মাথায় আঘাত করে রক্তাক্ত করা নিয়ে গণমাধ্যমে ঝড় বয়ে গেছে। এর সাথে সম্প্রতি যোগ হয়েছে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মানের বিরোধিতাকারী মিছিলে পুলিশের বর্বরোচিত হামলা ও এক প্রবীন ব্যাক্তিকে লাথি মেরে রাস্তায় ফেলে ও টেনে হেঁচড়ে শরীলের গেঞ্জি খুলে ফেলা, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাভার প্রতিনিধির নামে একাধিক মিথ্যা মামলা ও তাকে নির্মম নির্যাতন করা, শাহবাগে এক সাংবাদিককে নির্মমভাবে পেটানো। জাতির জন্য দুর্ভাগ্য পুলিশের অপকর্মের তদন্ত পুলিশই করছে। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বহাল তবিয়তে অপরাধি পুলিশ। শিয়ালের মুরগি চুরির তদন্ত শিয়ালকে করতে দিলে এমনই তো হবে!