অপরিকল্পিত শিল্পায়ন-বিপর্যস্ত কৃষি ও পরিবেশ

0
3582

মাহবুব সৈয়দঃ
কৃষি প্রধান দেশে কৃষি জমি সুরক্ষার নেই” কোনো আইন। ভাবতেই অবাক লাগে। যে যার মতো করে কৃষি জমিকে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করছে। জমির শ্রেণিকরণ না থাকায় চিহ্নিত করা যাচ্ছে না কৃষি ও শিল্পের জমি। জমির সিএস, আর এস এবং বি আর  এস-এর কোথাও উল্লেখ নেই যে জমিটি কৃষি জমি না অন্য কোনো জমি। জমির ধরনে যেটা উল্লেখ থাকে সেটি হল নামা, বিল, উঁচু বা কান্দা, বাড়ি ইত্যাদি। জমির সর্বশেষ যে মাঠ পর্চাটি বাংলাদেশ সরকার তৈরি করেছে যেটি বি আর এস নামে পরিচিত সেখানেও জমিকে ভূমির বন্ধুরতা অনুযায়ী শ্রেণিকরণ করা হয়েছে, জমির উপযোগিতা বিবেচনা করে নয়। এতে একজন কোম্পানির মালিককে কৃষি জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোনো বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে না। এসব কোম্পানি কৃষি জমিতে শিল্প-কারখানা স্থাপন করে বিশাল অঞ্চল জুড়ে কৃষি ও পরিবেশ করছে নষ্ট। রাসায়নিক দূষণের ফলে শিল্প-কারখানার আশেপাশের কৃষি জমির উৎপাদনশীলতা স্থায়ীভাবে হ্রাস পাচ্ছে। রাতারাতি নদী- নালা, খাল-বিল, ডোবা ভরাট করে কৃষি জমির স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট করছে। কৃষিজমি রক্ষার জন্য দেশে কার্যকর কোনো আইন নেই বললেই চলে। ভূমি-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জমির শ্রেণি পরিবর্তনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো বিধান ভূমি ব্যবস্থাপনা আইনে নেই। তবে-ইউরোপের মতো উন্নত দেশগুলোতে পরিকল্পিতভাবে জমির ব্যবহার করা হয়। বন্ধুপ্রিয় দেশ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কৃষক ছাড়া অন্য কেউ কৃষিজমি কিনতে পারে না। কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, গুজরাট ও হিমাচলে কৃষকরাই কেবল কৃষিকাজের জন্য কৃষিজমি কিনতে পারে। হরিয়ানায় কৃষিজমির এলাকাকে নিয়ন্ত্রিত এলাকা হিসেবে নির্ধারণ করা আছে। সেখানে জমি কিনে কৃষিকাজের বাইরে অন্য কোনো কাজ করতে গেলে সরকারের অনুমতি লাগে। অপরিকল্পিত নগরায়ন, শিল্পায়নের ফলে দিনদিন কৃষি জমির সংখ্যা কমছে, আর বিপর্যস্ত হচ্ছে কৃষি ও পরিবেশ। দ্রুত ভূমি রক্ষায় সমন্বিত নীতিমালা গ্রহণ না করলে সামনে ভয়াবহ বিপর্যয় অপেক্ষা করছে নদী মাতৃক স্নর্ণভূমি বাংলাদেশের সামনে। তখন চরম খাদ্য সঙ্কটেরমুখে পড়বে বাংলাদেশ। দেশে মোট ভূমির পরিমাণ ৩ কোটি ৫৭ লাখ ৬৩ হাজার একর। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে চাষযোগ্য জমি রয়েছে মাত্র ৮০ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর। এর এক-চতুর্থাংশই এখন হুমকির মুখে। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গেছে, বছরে বাড়ছে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ। দিনে ২২০ হেক্টরের বেশি কৃষি জমি অকৃষি খাতে যাচ্ছে। বছরে কমছে ৮২ হাজার হেক্টর জমি। যা মোট জমির এক ভাগ। বছরে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে এক হাজার হেক্টর জমি। ৮০ শতাংশ সরকারী খাস জমিতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। নির্মাণ কাজের কারণে বছরে বিলীন হচ্ছে তিন হাজার হেক্টর জমি। কৃষিজমি যে কেউ যে কোন কাজে ব্যবহার করতে পারে। এটা রোধ করার কোন আইনী ব্যবস্থা নেই। তাই আইনের বড় পরিবর্তন করে উর্বর ও কৃষি উপযোগী জমি ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করা প্রয়োজন। নচেৎ অন্য দেশ থেকে খাদ্য আমদানি করা ছাড়া কোন বিকল্প পথ থাকবেনা। দেশও হারাবে খাদ্য স্বয়ংস্পূর্ণতা অর্জন থেকে। শুধু তাই নয় প্রাকৃতিক পরিবেশ মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হবে।
লেখক পরিচিতি:-মাহবুব সৈয়দ (সমন্বয়ক  বাঁচাও শীতলক্ষ্যা নদী আন্দোলন-
জেলা প্রতিনিধি-অপরাধ বিচিত্রা

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

nineteen + 11 =