এইডস দিবসঃ প্রতিরোধের এখনই সময়

0
1173

আলহাজ্ব মকবুল হুসাইন সুমন‍ঃ বিশ্ব এইডস দিবস সারা বিশ্বের ন্যায় আমাদের দেশেও এই দিবস পালন করা হবে। আমি হাতে কলম নিয়ে ভাবছিলাম আজ কোন বিষয়ের ওপর লিখব, লেখার একাধিক বিষয় সামনে থাকলে কোন কোন দিন এমন চিন্তা করতে হয়। পাঠকদেরকে আজ কোন বিষয়ের উপর লেখা উপহার দেব। ভাবছি আর হাতে কলম নিয়ে পত্রিকা পড়ছি। মনে মনে ভাবছি সব লেখক তো আর এক রকম নয়, মনে যা আসবে তাই লিখবে, তা ছাড়া আমার ধারণা এমন বিষয়ের উপর লেখা দরকার যে লেখা পড়ে জাতি ও সমাজের উপকার আসবে। এমন লেখা না লেখাই ভাল যা পড়ে পাঠক ও সমাজের মানুষ বিপথগামী হবে। আমরা পত্রিকায় সংবাদ পড়ি। পত্রিকা থেকে দেশ-বিদেশের সংবাদ পাই। পত্রিকা পড়ছি আর ভাবছি এমন সময় সংবাদের উপর নজর পড়ল, সংবাদটি ছিল এরকম। “ভয়ঙ্কর মরণ ব্যাধি এইডস থেকে সচেতন হওয়ার প্রয়োজন”। তখন মনে পড়ল প্রতি বছর সারা বিশ্বের ন্যায় আমাদের দেশে ১লা ডিসেম্বর পালিত হয় আন্তর্জাতিক এইডস দিবস। তাই আজ ভাবলাম এইডস দিবস নিয়েই লিখি। বর্তমানে আমাদের দেশে এই মরণ ব্যাধি নিয়ে মিডিয়ায় বেশ আলোচনা হচ্ছে। এছাড়া অনেক বেসরকারি সেবা সংস্থাগুলো সেমিনার ও জনগণকে সচেতন করার জন্য কর্মসুচি পালন করছে। যারা শিক্ষিত ও সচেতন তারা মোটামুটি ভাবে এইডস সম্পের্কে জানেন, এটা এমন একটা রোগ যার মধ্যে একবার প্রবেশ করবে তার মৃত্যু ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই। শুধু কি তাই যে ব্যক্তি এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে সে নিজেই মরবে পাশাপাশি একটি সমাজ তথা পরিবারকে ধ্বংস করবে। বর্তমানে বিশ্বের মানব সভ্যতার জন্য সর্বোচ্চ হুমকি প্রতিষেধকহীন ঘাতক ব্যাধি এইডস, বিশ শতকের শেষের দিকে শুরু হলেও একুশ শতকের এইডস আইভি/এইডসের প্রবল বিস্তার সমগ্র বিশ্বকে কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। কারণ এই রোগের একমাত্র পরিনাম মৃত্যু। আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি সোনার বাংলাদেশও এই রোগ ক্রমশঃ বাড়ছে। দেশে এইসআইভি জীবাণু বহনকারী লোকের সংখ্যা ও এইডস আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত কত লোকের মৃত্যু হয়েছে সে সম্পের্কে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের নজরদারি থাকলেও বিশেজ্ঞরা মনে করেন এটা আসল চিত্র নয়, অর্থের বিনিময়ে যারা নিয়মিত শুধু যৌন ক্রিয়ার লিপ্ত হয়ে বিদেশে ভ্রমণ করেন এমন বিশেষ শ্রেণী এখনও দেশের স্পর্শকাতর চেইনে প্রবেশ করেনি। আশঙ্কা করা হচ্ছে দেশের হাই রিস্ক এরিয়াতে এই বিশেষ শ্রেণী ঢুকে পড়লে আমাদের দেশও এইডসের মহামারী আকার ধারণ করবে। তাছাড়া এইডস যেখান থেকে বিস্তার লাভ করে সেটা হল নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা। আমাদের দেশে যেভাবে এই সংস্কৃতি চালু হয়েছে তাতে মনে হয় আর সেই দিন বেশি দূরে নয় যেদিন এদেশে মহামারি আকার ধারণ করবে এই রোগ। বাংলাদেশের মত একটি উন্নয়নশীল জনাধিক্যের দেশে এইডস এর ব্যাপক বিস্তার ঘটলে এটা নিয়ন্ত্রণ করা হবে দুঃসাধ্য। আফ্রিকার এইচআইভি/এইডস আক্রমণে ব্যাপক মরকের পর প্রতিবেশি দেশ ভারত ও আফ্রিকার মহাদেশ সর্বোচ্চ এইচ আইভি বহনকারী দেশ হিসাবে স্বীকৃত। বাংলাদেশ এই রোগের আক্রান্তের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে বলা না গেলেও কয়েকদিন আগের এক জাতীয় দৈনিক পত্রিকার তথ্যানুযায়ী এইচআইভি রোগীর সংখ্যা প্রায় লক্ষাধিক। সর্বশেষ সরকারী তথ্যনুযায়ী বাংলাদেশে এখন মরণাক্রান্ত এরোগের বহনকারীর সংখ্যা অনেক। জাতীয় এইডস কমিটির চেয়ারম্যান তার লিখিত প্রতিবেদনে বর্তমানে এইডসের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণতার কয়েকটি কারণ হিসাবে উল্লেখ করছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পাশ্ববর্তীদেশ সমূহ এবং আমাদের দেশের মানুষের এইডস সম্পের্কে অসচেনতা বাণিজ্যিক যৌনকর্মী, সমকামীতা, ড্রাগ ব্যবহারকারী, পেশাদার রক্ত বিক্রেতা এবং কনডম ব্যবহারের স্বল্পতাকে চিহ্নিত করেছেন। বাংলাদেশে প্রায় ৩০টি প্রতিষ্ঠান এইডস এবং মারাত্মক যৌন রোগ প্রতিরোধের জন্য কাজ করে। এমন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল ব্যক্তি (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, দেশে সত্যিকারে এইচআইভি পজিটিভ লোকের সংখ্যা প্রায় কয়েক লাখের কাছাকাছি। তার ধারণা এ পর্যন্ত এইডসে আক্রান্ত হয়ে দেশে প্রায় কয়েক শত লোকের মৃত্যু হয়েছে। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর অধিকাংশই রেকর্ড থাকে না। তথ্য গোপন করা হয়। ফলে সত্যিকারে চিত্র ভিন্ন এজন্য সমাজের কিছু প্রচলিত ধ্যান ধারণা এবং মানুষের অসচেতনতাকে দায়ী করা চলে। কারণ যদি কোন পরিবারের এইচ আইভি পজিটিভ লোকের সন্ধান পাওয়া যায়, আর তা প্রকাশ হয়ে পড়ে, তবে ওই ব্যক্তিকে আমৃত্যু পালিয়ে বেড়াতে হয়। এই রোগের ব্যক্তিরা অনেকেই নিজেদের আড়াল করে রেখেছেন। অনেকে পরীক্ষার আওতার মধ্যে আসেনি। তার জন্য আমাদের মাঝে সঠিক তথ্য আসেনি যে কতজন লোক এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তবে মিডিয়াগুলোতে যেভাবে প্রচার করা হচ্ছে তাতে মনে হয় এই রোগ  কিছুদিনের মধ্যে আমাদের দেশে ব্যাপক আকার ধারণ করবে। এইডস বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রোগে পরিনত হয়েছে। মূলত ইউরোপ, আমেরিকা ও পাশ্চাত্য দেশগুলোতে এই ভয়ানক রোগে পরিণতি হয়েছে। মূলত ইউরোপ, আমেরিকা ও পাশ্চাত্য দেশগুলোতে এই ভয়ানক রোগটি বেশি বিস্তার করেছে। এই রোগে মূলতঃ নারী ও অবাধ স্বাধীনতা, সমকামী পুরুষ ও নেশাখোর দ্রব্য গ্রহীতাদের মধ্যেই বেশি দেখা যায় আর আফ্রিকায় দেখা যায় সমাজের সকল স্তরের মানুষের মধ্যে। এ রোগে নারী পুরুষ নির্বিশেষে নিশ্চিন্তে আক্রামণ করে। অবৈধ যৌন সঙ্গমের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায় সবচেয়ে বেশি। মহিলারা পুরুষদের তুলনায় ১০ শতাংশ এইডস সংক্রমণের ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। বিশ্বের বড় বড় চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা এ ভয়ঙ্কর রোগ হবার বা প্রসারের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। অবৈধ যৌন মিলন, নারী পুরুষের সঙ্গম অবাধ মেলামেলা, সমকামীতা ও ধর্মীয় অনুশীলন না মানার কারণে, আর সবচেয়ে লজ্জাকর ব্যাপার এই যে, যারা আজ এই রোগ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য কোটি কোটি বিলিয়ন খরচ করছে এবং আধুনিক সভ্যতার দাবিদার পাশ্চাত্য জগতের কোন কোন দেশে আইন করে সমকামীতা, অবাধ যৌন মিলনকে বৈধ করা হয়েছে। কিন্তু দেরিতে হলেও এখন তারা বুঝতে পেরেছে এটি একটি অমানবিক এবং অশ্লীল কাজ যার ফলে সমাজ এবং দেশ নিশ্চিত ধ্বংস বা বিপর্যয়ের সম্মুখিন হওয়া ছাড়া কোন পথ নেই। অনেকে আবার এ সমস্ত রোগকে আল্লাহর আযাব মনে করেন। কথাটি যে একদম মিথ্যা তা কিন্তু নয়। কারণ যারা আল্লাহর ও তার রাসূলের হুকুম মেনে চলে না তাদের উপর তো আযাব আসবেই। এসব আযাবকে যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন, এসব আযাব থেকে সহজে রেহাই মিলে না। একমাত্র আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়া ছাড়া আযাবের কোন প্রতিষেধক নেই। এসব থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। যারা শিক্ষা নেয় তারাই এর রহস্য উদঘাটন করতে পারে, মনে প্রশান্তি লাভ করতে পারে। নিজের শক্তি বৃদ্ধি ও কষমতার পরিমাণ পরিধি সম্পর্কে সঠিক অনুমান করতে পারে। মানুষের ক্ষমতা যে কত সীমিত ও সীমাবদ্ধ। যারা এ নিয়ে ভাবেন, তারাই বুঝতে পারে, একথা আমাদের অবশ্যই স্মরণে রাখতে হবে যে, সর্বময় ক্ষমতার মালিক হচ্ছেন তিনি, যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন। স্রষ্টার চেয়ে সৃষ্টি কখনো বড় নয় এবং শক্তিধরও নয়। এই উপলব্ধি যার যত গভীর তার জীবন তত স্থির। বিজ্ঞান বলে আমরা যতই চিৎকার করি, সেই বিজ্ঞানও কিন্তু আল্লাহর দান। আমরা বিজ্ঞান বলতে সাধারণত যা বুঝি, সেই বিজ্ঞানের পরিধিতে নৈতিক অবক্ষয় ও ভয়ঙ্কর এই মরণ ব্যাধি আমাদের মাঝে আসছে। আবার যার মধ্যে নৈতিক বোধ ও আমল যত বেশি তিনি যদি বিজ্ঞানী হোন তাহলে তার বিজ্ঞান হয়ে ওঠে আশীর্বাদ স্বরূপ হিসাবে।
মোটকথা, মানব জাতির অস্তিত্ব রক্ষায় যে সব অপকর্মের বিরুদ্ধে পবিত্র কুরআন ও হাদিসের বাণী দ্বারা মানুষকে বা অনাচারের বিরুদ্ধে বলা হয়েছে। আমরা যদি আজ শুধু গান গেয়ে সভা সমিতির করে বড় বড় বক্তব্য বা বিবৃত্তি দিয়ে মূল্যবান পোষ্টার লিফলেট লাগালেই এ আন্দোলনে জয়ী হওয়া বা এ মহাবিপদ এবং বিপর্যয়ের হাত থেকে মুক্ত হওয়া যাবে না। এ মহাবিপদ এবং বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে মানবতা বিরোধী সকল প্রকার অশ্লীল কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়তে হবে এবং এগুলিকে গুরুতর অন্যায় মনে করে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি ধর্মীয় জ্ঞান থাকতে হবে এবং ধর্মীয় অনুশীলন মেনে চলতে হবে। তা হলে এসব আযাব ও মরণব্যাধি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। আমরা অতীত ইতিহাস থেকে জানতে পারি বিভিন্ন মানবগোষ্ঠি শয়তানের প্ররোচনায় নানা রকম অসামাজিক, অশ্লীল এবং পাশবিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়ে সমাজ সভ্যতাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এ সমস্ত ইতিহাস জানার পরও আমরা তা থেকে কোন রকম শিক্ষা গ্রহণ করার চেষ্টা করিনি। বর্তমানে বিশ্বের সর্বাপ্রেক্ষা ভয়াবহ আতঙ্ক সৃষ্টিকারী মরণ ব্যাধি এইডস ও তেমনি এক ঘৃণিত অশ্লীল অবাধ কর্মকান্ডের ফল। যার বহু নিশ্চিত প্রমাণ রয়েছে। আমরা কি এ বছরের এইডস দিবস থেকে শপথ নিতে পারি না। এখন থেকে সকল প্রকার অশ্লীল কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকবো। বিষয়টি যত তাড়াতাড়ি আমরা বুঝতে পারব তত তাড়াতাড়ি এইডস থেকে মুক্তি থাকবে আমাদের এই দেশ।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

5 × five =