দুর্নীতির ডিপো জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট-২ কেনাকাটায় পুকুর চুরি ভুয়া বিলের ছড়াছড়ি

0
1001

অপরাধ বিচিত্রা ঃ
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে (আইপিএইচ) সংঘবদ্ধচক্র লুটের মচ্ছোবে মেতে উঠেছে। ভুয়া বিল-ভাউচারে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। কেনাকাটায় চলছে পুকুর চুরি। অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী সিন্ডিকেটের অপতৎপরতায় স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়াধীন সর্ববৃহৎ এই প্রতিষ্ঠানটি এখন ধ্বংসের মুখোমুখি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি দায়িত্বে নিয়োজিত ক্ষমতাধর সহকারী পরিচালক ডাঃ আলাউদ্দিন আল আজাদ এবং ক্রয় কর্মকর্তা (পিও) মনিরুজ্জামান চৌধুরী লুটের রাজত্ব কায়েম করতে একটি বিশেষ সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। এই প্রতিষ্ঠানকে  দুর্নীতিবাজদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত করার অন্যতম কুশীলব ক্রয় কর্মকর্তা (পিও) মনির চৌধুরী। তিনি প্রকল্পে নিয়োগপ্রাপ্ত একজন কর্মচারি। বিধিবহির্ভুতভাবে ক্রয় কর্মকর্তা হয়েছেন। অবৈধ কাজে সহায়তার সুবিধার্থে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে তদবির করে পরিচালক নিয়োগ করতে তিনি পারঙ্গম। তার পছন্দের বাইরে জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে পরিচালক নিয়োগ পেতে পারেন না  কোন কর্মকর্তা। সূত্র জানায়, ডাঃ আলাউদ্দিন আল আজাদ কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত থাকাবস্থায় সরকারী অর্থ অপচয়, সরকারী বাসায় বসবাস করে নির্ধারিত ভাড়া কর্তন না করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত এবং বিভাগীয় মামলায় জড়িয়ে পড়েন। এনিয়ে নিজেকে রক্ষায় ব্যস্ত ছিলেন তিনি। ক্রয় কর্মকর্তা মনির চৌধুরীর সঙ্গে পরিচয় সূত্রে তার ভাগ্য বদলে গেছে। পিও’র সহায়তা এবং বিশেষ তদ্বিরের জোরে গুরুত্বপূর্ণ এ প্রতিষ্ঠানে সহকারী পরিচালক (এডি) হিসেবে বদলী হন তিনি। এদিকে পরিচালক ডা. কার্ত্তিক চন্দ্র’র বেশিরভাগ সিদ্ধান্ত সহকারী পরিচালক ডাঃ আলাউদ্দিন আল আজাদ বাতিল করে দিচ্ছেন। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের নামে প্রতিটি ভাউচার ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ৯৯ হাজার টাকার মধ্যে ভুয়া বিল তৈরী করে সহকারী পরিচালক এবং পিয়ন আত্বসাত করছেন। গত অর্থবছরে সমাপ্ত উন্নয়ন কাজেরও নতুন বিল তৈরী করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

MG 22
গত অর্থবছরে পরিশোধিত মূল ফটকে স্থাপিত মেটাল ডিটেক্টর এবং আঙ্গুলে ছাপ দিয়ে প্রবেশের মেশিনের নামে দ্বিতীয়বার বিল পরিশোধ করা হয়েছে। সব বিল পাস করেছেন মনির চৌধুরী এবং সহকারী পরিচালক। বিলে সই করার জন্য ডিডিওশীপ এর প্রয়োজন হয়। সে জন্য মনির চৌধুরী এবং সহকারী পরিচালক (চঃদাঃ) সে ক্ষমতা বাগিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া গত ২২ নভেম্বর বিভিন্ন আজব ফার্মের নামে চুড়ান্ত বিল পাস দেখিয়ে ৯ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। সংশ্লিষ্ট বিলের কপি এবং ফাইল যাচাইয়ের অপরিহার্যতা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানীর নাম যেমন অদ্ভুত তেমনি ঠিকানাও আশ্চর্যকর। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: ইয়াহু সাপ্লাই, টেক-কেয়ার, ইলেকট্রোভেলি, স্মৃতি ট্রেডিং, হেভেন এন্টারপ্রাইজ, আদমান ইত্যাদি। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা মহাখালী স্কুল রোড। অথচ মহাখালীতে স্কুল রোড নামে কোন সড়ক নেই। এ নিয়ে আইপিএইচে মুখরোচক আলোচনা অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্র মতে, মনিরুজ্জামান গংয়ের কাছে প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে জিম্মি। তার পদবী পারচেজ অফিসার হলেও তিনি প্রতিষ্ঠানের সর্বেসর্বা। তার নেতৃত্বেই বছরের পর বছর  চলছে দুর্নীতি আর অনিয়ম। পরীক্ষা এবং গবেষণার জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন কেমিকেল, যস্ত্রপাতি রিয়েজেন্ট কেনার ঠিকাদার স্বয়ং পারচেজ অফিসার মনিরুজ্জামান চৌধুরী। পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন কেমিকেল, রিয়েজেন্ট কেনার  নেপথ্য ঠিকাদার স্বয়ং  মনিরুজ্জামান। সকল প্রকার ক্রয়, বিল ভাউচার বানানো এবং পাস করা তার কাজ। তার নেতৃত্বেই বছরের পর বছর চলছে গোপন কেনাকাটা। এ নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও তিনি ড্যামকেয়ার। অন্যত্র বদলি করা হলেও তিনি স্বস্থানেই বহাল আছেন। উল্টো তার কথামতো কাজ না করায় অনেক উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে হেনস্থা হয়ে বিদায় নিতে হয়েছে। এমনকি সদ্য বিদায়ী পরিচালককে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে সরকারি প্রক্রিয়া প্রায় চুড়ান্ত হওয়া সত্বেও মুনির চৌধুরী ও তার দোসরদের বিশেষ তদিবরে তা বাতিল হয়ে গেেেছ। এ পদে বসানো হয়েছে জেষ্ঠ তালিকায় ৪ নম্বরে থাকা তারই পছন্দের উপপরিচালক কার্ত্তিক চন্দ্রকে।
যখন যে দল ক্ষমতায়  তখন সে  দলের কর্মী পরিচয়ে দাপিয়ে বেড়ান মনির চৌধুরী। তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণির পদোন্নতিপ্রাপ্ত চৌধুরীর বিশাল কাপড়ের দোকান আছে ঢাকার ইব্রাহিমপুর বাজারে। সেখানে তিনি ফø্যাট কিনেছেন। বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে তাকে অন্যত্র বদলি করলেও বিশেষ তদ্বিরের জোরে স্বস্থানেই বহাল থাকছেন। উল্টো তার পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে ঠিকাকাজকাজ না দেয়ায় এবং ভুয়া বিল-ভাউচার অনুমোদন না করায় অনেক উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে হেনস্থা হয়ে বিদায় নিতে হয়েছে এ প্রতিষ্ঠান থেকে।
অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বিষদ ব্যাখ্যা প্রদানের আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রয়োজনীয় দালিলিক প্রমাণাদিসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষীয় বক্তব্য উপস্থাপন করবেন বলে জানান। তবে মাসাধিককালেও কোনো বক্তব্য প্রদান করেননি। (চলবে)

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

15 − twelve =