থামছে না রাজউকের দুর্নীতি ও হয়রানি পূর্বাচল সেল এক আতংকের নাম

0
1221

মোঃ আবদুল আলীমঃ
বিশাল দুর্নীতি, হয়রানি ও সেবা গ্রহনকারীদের কাছে এক আতংকের নাম রাজউক। সংস্থাটির প্রতিটি টেবিল এমন এক দুষ্ট চক্রের অক্টোপাশে আটকা পড়েছে যা থেকে পরিত্রাণের যেন কোন উপায় নেই। একটি ফাইল এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে নিতে প্রতি পদে দিতে হয় টাকা। টাকা দেয়ার পরও চলে কর্মকর্তা, কর্মচারী, সহকারী পরিচালক ও পরিচালক কর্তৃক আপত্তিকর আচরন ও হুমকি ধমকি। চাহিদা মত ঘুষ দিতে না পারলে মুখের ওপর ফাইল ছুড়ে মারা যেন নিত্য দিনের ব্যাপার। রাজউকের পূর্বাচল সেল হচ্ছে সবচেয়ে বড় আতংকের জায়গা। এখানে এ পর্যন্ত কয়েক শ সেবা গ্রহনকারী কর্মকর্তা, কর্মচারী ও পরিচালক কর্তৃক লাঞ্চনার শিকার হয়েছেন ও হচ্ছেন। অবস্থা এমন ভয়াবহ রুপ ধারন করেছে যে ভুক্ত ভোগীদের জন্য নালিশ করার জায়গা নেই। সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি কোথাও অভিযোগ করলে তার ওপর নেমে আসে তীব্রতর হয়রানি ও অধিকতর ঘুষের দাবি। অর্থাৎ অভিযোগ করা মানে মরার ওপর খাঁড়ার ঘাঁ। গত বছরের শুরুতে ও শেষের দিকে দুদকে রাজউকের বিরুদ্ধে দুই দফা গণশুনানীতে এমনই চিত্র দেখা গেছে। পূর্বাচল সেলের সহকারী পরিচালক (এস্টে ও ভূমি-৩) মেহেদউজ্জামানের আচরন ও হয়রানি যেন সকল লেভেল অতিক্রম করেছে। গণমাধ্যম কর্মীরাও তার আপত্তিকর আচরন ও মারমুখী ভাব থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। গণমাধ্যম কর্মী দেখলেই তিনি জোরপূর্বক ধরে নিয়ে পরিচালক (এস্টট ও ভূমি-২) শেখ শাহীনুল ইসলামের কামরায় নিয়ে যান ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন এমনকি আটকিয়ে চেয়ারম্যান এম বজলুল করিম চৌধুরীর কামরায় নিয়ে সায়েস্তা করবেন বলে ভয়ভীতি দেখান। এ প্রতিবেদকের সাথেও তিনি এমন ভয়ংকর আচরন করেন যার দরুন থানা পুলিশের আশ্রয় নিতে হয়েছে। পরিচালক শেখ শাহীনুল ইসলামের কামরা হচ্ছে গণমাধ্যম কর্মীদের হয়রানি ও সায়েস্তা করার নিরাপদ স্থান। এখানকার পিএ ও অফিস সহকারীরা গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর জুলুম ও হয়রানির ক্ষেত্রে সহকারী পরিচালক মেহেদউজ্জামানকে সর্বপ্রকার সহযোগিতা করে থাকে মর্মে মতিঝিল থানায় অভিযোগ রয়েছে। এর একমাত্র কারন হচ্ছে ওদের অপরাধ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ মাধ্যমে যেন কোন সংবাদ প্রকাশ করার সুযোগ গণমাধ্যম কর্মীরা না পায়। অভিযোগ রয়েছে অনেক ভুক্তভোগী পূবাচল সেলে এক যুগের অধিক কাল ধরে হয়রানি ও ঘুষের দাবি মেটানোর শিকার। যারা লটারিতে প্লট পেয়েছেন তাদেরকে প্লট না দিয়ে বিভিন্ন বাহানা দেখিয়ে বছরের পর বছর কালক্ষেপন করা হচ্ছে। আবার টাকা খেয়ে একজনের প্লট অন্যের নামে বরাদ্দ দেয়ার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। সূত্রে জানা গেছে এখানকার পরিচালক, সহকারী পরিচালক, তপ্তাবধাায়ক এমনকি অফিস সহকারী পর্যন্ত একেকজন বিশাল বিত্তবৈভবের মালিক। দুর্নীতির অভিযোগে কিছুদিন পর পরই দুর্নীতি দমন কমিশন রাজউকের কোন না কোন পরিচালক, সহকারী পরিচালক, অথারাইজড অফিসার ও অফিস সহকারীদেরকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অপরাধে সহকারী পরিচালক (আইন) ইকবাল পারভেজকে ধরে নিয়ে গেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগরির ওয়ারী থানায় মামলা হয়। আসামিকে আদালতে হাজির করা হলে আদালত তার জামিনের আবেদন নাকচ করে তাকে জেল হাজতে প্রেরন করে। দুদকের অনুসন্ধানে তার নামে ৬০০ শতাংশ জমি কেনার প্রমাণ পাওয়া গছে। অধিকন্ত দুই  কোটি ৬২ লাখ টাকার অন্যান্য সম্পদের প্রমাণ রয়েছে। মাত্র পাঁচ বছর সহকারী পরিচালক থাকা অবস্থায় ইকবাল পারভেজ এত বিশাল সম্পত্তির মালিক বনে গেছেন বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে। খোঁজ নিলে রাজউকের পূর্বাচল সেলের অনেক কর্মকর্তার এর চেয়ে বিশাল সম্পত্তির মালিক এমন তথ্য পাওয়া যেতে পারে বলে রাজউকের অনেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে জানান। এদিকে রাজউকের গাফিলতি ও তদারকির অভাবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পাঁচ হাজারের ওপর ভবন অনিয়মিতভাবে নির্মিত হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে এসব ভবনগুলোর বিরুদ্ধে নিকটস্ত ক্ষতিগ্রস্তরা রাজউকের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়ে কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। রাজউক থেকে অনিয়মিত ভবন নির্মানকরীকে একটি পত্র জারি করা হয় মাত্র। তারপর সব টাকার বিনিময়ে রফা হয়ে যায়। ঢাকা শহরে অসংখ্য ভবন রয়েছে যেগুলোর বাণিজ্যিক ব্যবহারের কোন অনুমোতি রাজউক থেকে দেয়া  হয়নি।  অথচ ভবনগুলো রাস্তার জায়গা দখল করে  নির্মান করে সারি সারি দোকান বানিয়ে ভাড়া দিয়ে জনসাধারনের অসীম ক্ষতি করে চলেছে। নিয়ম ভঙ্গ করে নির্মিত বাড়ির মালিকরা প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছে রাজউকের ইমারত পরিদর্শক, অথারাইজড অফিসার ও পরিচালকদেরকে ম্যানেজ করে তারা আবাসিক বাড়ি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করছে বলে ওদের কেশের আগাও কেউ ধরতে পারবে না। ঢাকার উত্তর যাত্রাবাড়ি এলাকায় অসংখ্য ভবন নির্মিত হচ্ছে যেগুলোর রাজউক থেকে যে শর্তে নির্মান করার কথা ছিল তা প্রকাশ্যে ভঙ্গ করে নির্মিত হচ্ছে। কোন কোন ভবনের রাজউক থেকে কোন নকশা, প্ল্যান পাশ না নিয়ে পাঁচ তলা পর্যন্ত নির্মান করা হলেও রাজউক রহস্যজনকভাবে নিরব। এসব ভবনের বিরুদ্ধে এলাকাবাসির লিখিত অভিযোগ থাকা সত্বেও রাজউক কোন ব্যবস্থা নেয়নি যা দিব্যালোকের মত সত্য। আগামি সংখ্যায় রাজউকের পূর্বাচল সেলের অনিয়ম দুর্নীতি, ঢাকার  উত্তর যাত্রাবাড়ি ও খিলগাঁও এলাকায় অবৈধভাবে নির্মিত ভবনগুলোর ওপর বিশেষ প্রতিবেদন থাকছে। (চলবে)

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

three × 5 =