সতর্ক হতে হবে আওয়ামীলীগ-বিএনপিকে !!!!

0
1609

আশিকুর রহমান হান্নান ঃ
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপি দু’দলকেই ভাবতে হবে। সতর্ক হতে হবে দু’দলকেই। কুমিল্লার নির্বাচনকে বিএনপি যদি কেবলই অর্জন হিসেবে দেখে, সেটা যেমন ঠিক হবে না। ঠিক তেমনি আওয়ামীলীগ যদি এ নির্বাচন থেকে কোনো অর্জন খুঁজে না পায় সেটাও তাদের জন্য সমীচীন হবে না। এই নির্বাচন থেকে বাংলাদেশের দুটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের অনেক কিছু শিক্ষনীয় আছে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিতে হবে আওয়ামী লীগকে! এখনও সময় আছে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে দলের ত্যাগি নেতাকর্মীদের বঞ্চিত করে বিএনপি-জামাত-শিবির থেকে আসা হাইব্রিডদের পদ দিয়ে কমিটি দেয়া বন্ধ করতে হবে; না হলে আওয়ামীলীগকে কুমিল্লার মত খেসারত দিতে হবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। কুমিল্লার নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনিত মেয়র প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমার পরাজয়ের নেপথ্যের কয়েকটি কারন রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য কারন হলো- ১/ বিগত নির্বাচন গুলিতে যারা নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করেছে সেই সকল বেঈমানদের বিচার না করে তাদেরকে দলের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দলের ত্যাগি নেতাদের বঞ্চিত করা হয়। ২/ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিকলীগ, মহিলালীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, যুবমহিলালীগে অধিকাংশ জেলা-উপজেলায় টাকার বিনিময়ে কমিটি দেয়া হয়েছে। এসব কমিটিতে দলের ত্যাগি নেতাকর্মীদের বঞ্চিত করে হাইব্রিডদের পদ দেয়া হয়। তাছাড়া এসব কমিটিতে কত শতাংশ বিএনপি-জামাত-শিবির ঢুকেছে, তার হিসেব আছে কি ? ৩/ টাকা দিয়ে কমিটি কেনা নেতাদের সাধারন মানুষের সাথে আচরন কেমন তার খবর কেউ রাখে ? ৪/ বিএনপি-জামায়াত-শিবির ছেড়ে আওয়ামীলীগে আসা হাইব্রিডরা টাকা দিয়ে কমিটি কিনে এনে প্রকৃত আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের নির্যাতন-নিপীড়ন চালাচ্ছে। এতে প্রকৃত আওয়ামীলীগ নেতারা যাতাকলে পড়ে ক্ষোভে নীরব ভুমিকা পালন করছে। ৫/ বিএনপি-জামায়াত-শিবির ছেড়ে আওয়ামী লীগে আসা হাইব্রিডরা মুখে নৌকা নৌকা বললেও ভিতরে ভিতরে ধানের শীষের জন্য কাজ করেছে। ৬/ তাছাড়া নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তো রয়েছেই। আওয়ামীলীগ সরকার এত ভালো কাজ করার পরও সরকার দলীয় প্রার্থী হারে কারন ঘরের শত্রু আসল প্রতিপক্ষ। পাশাপাশি এখনও আলোচিত তনু হত্যার বিচার না হওয়া এবং কুমিল্লাকে ময়নামতি বিভাগ নাম দেয়ার প্রস্তাবের ক্ষোভ রয়েছে জনগনের মাঝে। তার প্রভাবও পড়েছে ভোটে। এছাড়া সুষ্টু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে দলীয় নেতাকর্মীরা সকল ভেদাভেদ ও দ্বন্দ্ব ভুলে কাজ করেছে। সর্বোপরি আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর জয়ের পথকে সুগম করেছে। তাই কুমিল্লায় হেরেছে আওয়ামী লীগ আর নৌকা; জিতেছে ধানের শীষ !
মনিরুল হক সাক্কুর ব্যক্তি ইমেজ ও জনপ্রিয়তা অন্য যে কোনো দলের প্রার্থী থেকে তুঙ্গে ছিল। অনেকে তাকে বিএনপি প্রার্থী হিসাবে ভোট দেন না, একজন সজ্জন ভালো মানুষ হিসাবে ভোট দেন। এ রকম ক্লিন ইমেজের মানুষ বিএনপিতে ক’জন আছে? তার ওপর ভরসা করে কুমিল্লায় বিএনপি ‘বাজি’ ধরতে পেরেছে এবং সে বাজিতে তারা জিতেছে। আওয়ামীলীগ হেরেছে নিজেদের অনেক গুলো ভুলের কারণে। ভোটের মাঠে অনভিজ্ঞ-অপরিচিত নারীকে প্রার্থী করা ছিল একটি ভুল সিদ্ধান্ত। এ ক্ষেত্রে অদূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে দলটি। আবার সাংগঠনিকভাবে অগোছালো ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির খেসারত দিতে হয়েছে আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে। স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে যেমন সমন্বয় ছিল না তেমনি তাদের সক্রিয় করতে ব্যর্থ হয়েছে প্রার্থী। প্রচারণা ও গণসংযোগে ছিল ভুল কৌশল। এই নির্বাচনের মধ্যে আওয়ামীলীগ অনেক গুলো ইতিবাচক দিক আছে। তার মধ্যে প্রধান দিকটি হলো, এই পরাজয়ের মধ্যে দলটি ভুল খুঁজে বের করার সুযোগ পেয়েছে এবং এ ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে তারা যদি সামনে এগোয় সেটি দলটির জন্য অবশ্যই ভালো হবে।
কুমিল্লার নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার ও আওয়ামী লীগের ওপর সুষ্ঠু নির্বাচনের ধারা বজায় রাখার চাপ বেড়ে গেছে। মানুষের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি হয়েছে যে, সরকার চাইলেই সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারে। পাশাপাশি দলীয় রাজনীতিতে কী ধরনের নেতাদের এগিয়ে নিতে হবে আর কাদের দূরে রাখতে হবে সেই শিক্ষাও দিয়েছে এই নির্বাচন। এটিও এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করবে আওয়ামী লীগকে। কুমিল্লার নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে। তাদের উচিত হবে নিরপেক্ষভাবে পরাজয়ের কারণ গুলো চিহ্নিত করা। সব কারণ নির্ণয়ের পর দলকে, সরকারকে সংশোধন করে সামনে এগিয়ে নেওয়া। যার ইতিবাচক প্রভাব আগামী নির্বাচনে অবশ্যই আসবে। কিন্তু যদি তা না করা হয় তাহলে আরো কঠিন কিছু অপেক্ষা করবে আওয়ামী লীগের জন্য। কারণ রাজনীতি এক কঠিন বিষয়। সরকার পরিচালনা আরো জটিল। সুবিধাভোগী মানুষ শুধু ক্ষমতার ভাগ নেয়। বিরোধী দলে এদের দেখা যায় না। কুমিল্লায় শুধু আঞ্জুম সুলতানা সীমা হারেননি, আওয়ামী লীগের জন্য রেখে গেছেন শিক্ষা নেওয়ার অনেক দৃষ্টান্ত।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনের ফলাফলে বড় ‘ধাক্কা’ খেয়েছে আওয়ামী লীগ। নিজেদের আত্মবিশ্বাসে চির ধরেছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটে দলীয় প্রার্থী জয়ী হওয়ার পর চরম আশাবাদী হয়ে উঠেছিল দলটি। কিন্তু কুমিল্লায় পরাজয়ে হতাশায় আচ্ছন্ন নেতা-কর্মীরা। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে এখন নতুন ভাবনায় দলটির নীতি-নির্ধারকরা। তবে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে দলীয়ভাবে তদন্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দলের কেউ কোনো ‘আঁতাতে’ জড়িত কি না তাও তদন্ত করতে বলা হয়েছে। সূত্রমতে, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনের এমন ফলাফলে প্রস্তুত ছিলেন না খোদ দলের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও। তবে তিনি যতটা না ফলাফলে অখুশি হয়েছেন, তার চেয়ে ওই এলাকার আওয়ামীলীগ নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তাদের ভূমিকা কী ছিল, তা নিয়ে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করারও নির্দেশ দিয়েছেন। কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলেছেন। বিএনপি নেতারা বলছেন, দেশ-বিদেশের চোখ ছিল কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে। দৃশ্যমান ‘নজিরবিহীন শান্তিপূর্ণ’ ভোটও সবাই দেখেছে। এর একটা প্রভাব পড়বে জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও। বিশেষ করে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে যে পক্ষপাতমূলকের ‘তকমা’ ছিল, তা নিয়ে বিএনপির কথা বলার সুযোগ কমে গেছে। তাই এ নির্বাচনের ভুলত্রুটি থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথাও ভাবছেন তারা। জাতীয় নির্বাচনেও সরকার কোনো ধরনের অপকৌশলের আশ্রয় নেয় কি না সে ব্যাপারে এখন থেকেই সতর্ক থাকতে হবে।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সংসদের বাইরে থাকা প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি প্রার্থীর কাছে প্রায় ১১ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন। এদিকে, কুসিকে মেয়র পদে হেরে যাওয়ার পরও সুষ্ঠু নির্বাচনের ইস্যুত খুশি ক্ষমতাসীন দলের অধিকাংশ নেতা। এমনকি অনেকে হেরেও জয়ের আনন্দ নিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন এই বলে যে, শেখ হাসিনার দলীয় সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে এবং বিএনপি এ নির্বাচন থেকে রাজনৈতিক কোনো ফায়দা লুটতে পারছে না। এ কথা অস্বীকার করার কোনো অবকাশ নেই যে বিএনপি একটি বড় দল। শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক নির্বাচনে বিএনপি প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ভোটারের সমর্থন পেয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এ জনসমর্থনকে কাজে লাগিয়ে দলকে এখন পুনর্গঠন করতে হলে অতীতের অভিজ্ঞতা গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিতে হবে এবং বিতর্কিত নয়, এমন ব্যক্তিদের ভবিষ্যতের দায়িত্ব দিতে হবে। দন্ডপ্রাপ্ত, মাদক ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ, ভুমিদস্যু, টেন্ডারবাজ, সন্ত্রাসী অর্থাৎ সাধারন জনগনের কাছে অগ্রহনযোগ্য ব্যক্তিদের বাদ দিতে হবে। দুর্নামগ্রস্ত এবং অভিযুক্তদের দলের নেতৃত্ব থেকে দূরে রাখতে হবে। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে ক্ষমতাসীনদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় রয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, কুমিল্লার নির্বাচনে জয়-পরাজয়ে আরও যেসব বিষয় কাজ করেছে তা হচ্ছে দলীয় কোন্দলসহ স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ইস্যু। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিনের কোন্দল নিরসনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে নির্বাচনী ফলাফলে। অপরদিকে কোন্দল মিটিয়ে অনেকটাই ঐক্যবদ্ধ ছিল বিএনপি। প্রকাশ্যে দলটির তৎপরতা তেমনটা না থাকলেও ঐক্যবদ্ধ থাকার কারণে নীরব ভোটবিপ্লব হয়েছে। কুমিল্লার মেয়র পদে নির্বাচনী ফলাফল থেকে আরেকটি শিক্ষা হলো, নির্বাচনে প্রার্থীর যোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যোগ্যতা, সততা ও সাহসিকতার কারণেই প্রবল প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও সাক্কু বারবার নির্বাচনে জিতে আসছেন। সময় এসেছে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর এদিকে মনোযোগ দেওয়ার। খোদ আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা ফ্লাইওভার পরিদর্শনকালে বলেছেন, দলীয় অভ্যন্তরীন কোন্দলের কারনে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পরাজিত হয়েছে। সামনে জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগের জন্য এটি একটি সতর্ক বার্তা। বিএনপি আর এ কোন্দলের সুযোগ পাবেনা। তবে, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দল হেরেছে কিন্তু সরকার জিতেছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আরো বলেছেন, আওয়ামী লীগে অনৈক্য থাকায় কুমিল্লার সিটি নির্বাচনে দল হেরেছে, তবে নির্বাচন কমিশন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিয়েছে। আর এ কারণে সরকার জিতেছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে কুমিল্লার নির্বাচনে আওয়ামী মনোনীত প্রার্থীর পরাজয় হয়েছে। যারা দলের মধ্যে থেকে দলের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে কাজ করেছে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। এখানে নেতৃত্বের প্রয়োজনে প্রতিযোগিতা থাকতেই পারে। কিন্তু নির্বাচনে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশ সবাইকে মানতেই হবে। এটাই দলীয় শৃঙ্খলা। কেউ কেউ আওয়ামী লীগের মধ্যে থেকেও বিএনপির হয়ে কাজ করেছে। এদের বিরুদ্ধে অবশ্যই সাংগঠিনক ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। দলীয় সভানেত্রীও এমনটাই চেয়েছেন, দলের মধ্যে থেকে ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করতে হবে, তারপর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দেশের সবাই যেন এখন আওয়ামী লীগার। সাবেক ও বর্তমান আমলা থেকে শুরু করে শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার বেশিরভাগ মানুষ নিজেদের আওয়ামীপন্থী বলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। কেউ কেউ এ পরিচয়কে বিশ্বাসযোগ্য করতে নানা কৌশল-অপকৌশলের পথ বেছে নেন। কারণ যাই হোক, নিজেকে সরকারি দলের লোক হিসেবে জাহির করতে অনেকে এখন ব্যতিব্যস্ত। আর এমন প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্যও। সূত্র বলছে, যারা এক সময় আওয়ামী লীগের কঠোর সমালোচনা ছাড়াও আওয়ামী বিরোধী রাজনীতিও করেছেন- তারাই এখন ব্যক্তিস্বার্থে আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছেন। নিন্দুকেরা এদের নাম দিয়েছেন ‘হাইব্রিড’। ঘরে-বাইরে এখন এ হাইব্রিডদের ছড়াছড়ি। এমনকি রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির অনেক নেতাও নিজেকে ও সম্পদ রক্ষায় পর্দার আড়ালে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সমঝোতা করে চলেছেন। কেউ কেউ উপায়ন্তর না পেয়ে ভোল পাল্টে যোগ দিচ্ছেন আওয়ামী লীগে। বসে নেই জামায়াতও। মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী এ দলটির অন্তত ৫ হাজার নেতাকর্মী গত কয়েক বছরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। বাদ যায়নি অধিকাংশ বাম ঘরানার রাজনৈতিক দলও। তাদের অনেকে দীর্ঘদিনের আদর্শ বিসর্জন দিয়ে আওয়ামী লীগে একাকার হয়েছেন। এর ফলে প্রকৃত ও ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা অনেকে এখন বিপাকে পড়েছেন। গণমাধ্যমের প্রকাশিত প্রতিবেদন ও সংবাদের উপর নির্ভর করে বলা যায়, এই স্লটে যে সকল অনুপ্রবেশকারী আওয়ামী লীগে যোগদান করেছে কিংবা আদর্শের সমর্থক বলে মুখে ফেনা তুলছেন তাদের অধিকাংশের উদ্দেশ্য টাকা পয়সা উপার্জন ও মামলা হামলা থেকে বাঁচা নয়। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হল, আওয়ামী লীগ নামক সংগঠনটির আদর্শিক প্রোটিনগুলিতে দীর্ঘমেয়াদী একটি মিউটেশন ঘটানো। সময় ও সুযোগ বুঝে আওয়ামী লীগের ভিতরে থেকেই দলটি বিতর্কিত করা। এক কথায় বললে বলা যায়, দলটির ভিতরে থেকেই ধ্বংস করার প্রেক্ষাপট বিনির্মাণ করা। বর্তমানে অনুপ্রবেশকারীরা দুটি উৎস থেকে আওয়ামী লীগে বেশি প্রবেশ করছে। উৎস দুটি হল: জামায়াত-শিবির ও বিএনপির ভিতরে জামায়াত শিবিরের অংশটি। আওয়ামী লীগের ভিতর হাইব্রিড সম্প্রদায় বেশ প্রতিধ্বনিশীল। দলটির দুর্দিনে যে সকল নেতাকর্মী দলের পাশে নিবেদিতপ্রাণ হিসেবে ছিল, তাদের মুখে প্রায়ই শোনা যায় সেই সকল হাইব্রিড নেতাদের নেতিবাচক কর্মকান্ডের কাহিনি। হাইব্রিডদের অনেকেই দলের কারণে প্রভাবশালী হয়ে দলের নেতাকর্মীদের কেবল এড়িয়ে চলার মধ্যেই সীমারেখা টানেন না, মামলা-হামলা পর্যন্ত চালিয়ে যান। দেশের কোনো কোনো স্থানে এমন ঘটনাও ঘটছে, নব্য আওয়ামী লীগাররা এক সময়ের ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর হামলা করছেন। মামলা দিয়ে বাড়ি ছাড়া করার নজিরও আছে। আসলে এখন চলছে ব্যক্তিস্বার্থ ও সম্পদ রক্ষায় ফায়দাতন্ত্রের রাজনীতি। এটি প্রকৃত অবস্থা নয়, দল ক্ষমতায় না থাকলে এরা ফের সটকে পড়বে। এছাড়া এ হাইব্রিড আওয়ামী লীগাররা দলটির জন্য এক সময় বোঝা বা ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে দল কখনও দুঃসময়ে পড়লে এদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এখন বড় সুবিধায় আছে। তাই তৃণমূল থেকে প্রশাসনের সর্বত্র আওয়ামী লীগ বনে যাওয়ার জন্য অতি উৎসাহীদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। কিন্তু এটি আসলে বাস্তব চিত্র নয়। এজন্য দলের নীতিনির্ধারকদের এখন থেকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অনেকে।
দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন ও কাউন্সির হচ্ছে। এসব সম্মেলন ও কাউন্সিলকে সামনে রেখে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভিন্ন আলোচনা, সমালোচনা হচ্ছে। দলে হাইব্রিডদের উত্তান ঘটছে। ত্যাগী, নিবেদিতপ্রাণ ও বিশ্বস্তরা উপেক্ষিত হচ্ছেন। সুবিধাবাদীরা উড়ে এসে জুড়ে বসছেন। যাদের সাথে দলের নীতি ও আদর্শের কোন সম্পর্ক নেই। কোন কোন নেতার হাতে ফুল দিয়ে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের আওয়ামীলীগে যোগদান করতেও দেখা যাচ্ছে। জামায়াত-শিবিরকে আশ্রয়, প্রশ্রয় দেওযার অভিযোগও উত্থাপিত হচ্ছে। এখনই সময় এদের লাগাম টেনে ধরার। তাই সুস্থ ও প্রগতিশীল রাজনীতির স্বার্থে, আওয়ামীলীগের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে, সরকারেরর স্বার্থে, উন্নয়নের স্বার্থে, ডিজিটাল বাংলাদেশ শত ভাগ বিনির্মানের স্বার্থে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বার্থে বিশ্বস্তদেরকে বেছে নিতে হবে। মূল্যায়ন করতে হবে। এটা সময়ের দাবী। পাশাপাশি বিএনপিতেও একই অবস্থা। দলের ত্যাগি নেতাকর্মীরা পদপদবী পাচ্ছেন না। টাকার বিনিময়ে পদপদবী বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। এটাও বন্ধ করতে হবে। দলের ত্যাগি ও যোগ্যদের মুল্যায়ন করে দলকে এগিয়ে নিতে হবে। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বাংলাদেশের গন্তব্য কোথায় হবে এবং কোন ধরনের বাংলাদেশ হবে সেটির পূর্ণাঙ্গ চিত্রটি ২০১৯ সালেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি-আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অনুপ্রবেশকারী, হাইব্রিড ও সেলফিবাজদের ভূমিকা কী হবে না হবে সেটিও স্পষ্ট হয়ে উঠবে। সর্বোপরি অতীত-বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে এখনই সতর্ক হতে হবে আওয়ামীলীগ-বিএনপিকে

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

1 × four =