হাওরাঞ্চলের বোরো ফসলী বাঁধ দুর্নীতি

0
1415

সুনামগঞ্জ জেলা যুবলীগের আহবায়ক চপল ও পাউবোর বরখাস্তকৃত নির্বাহী প্রকৌশলী আফছার সহ ৬১ জনকে আসামী করে দুদকের মামলা দায়ের: গ্রেফতার ২
বিশেষ প্রতিনিধি, সিলেট
সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে বোরো ফসলী হাওরের বাঁধ দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ৬১ জনকে আসামী করে সুনামগঞ্জ সদর থানায় মামলা (মামলা নম্বর -২) দায়ের করেছে দুদক।’দুদকের সহকারী পরিচালক ফারুক আহমদ বাদী হয়ে রোববার  এ মামলা দায়ের করেন।
মামলায় বাদী দাবী করেন- আসামীগণ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারাসহ দন্ডবিধি ৪০৯/১৬৬/৫১১/১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। মামলা দায়েরের পর পরই দুদক’এর সহকারী পরিচালক মনিকা আক্তারের নেতৃত্বে একটি দল রাজধানীর সেগুনবাগিচা থেকে পাউবোর সুনামগঞ্জের বরখাস্তকৃত প্রকৌশলী আফছার উদ্দিন ও রাজধানী’র ৯৯ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার করিম চেম্বারের ৬ষ্ঠ তলার মেসার্স ইব্রাহিম ট্রেডার্স এন্ড মোহাম্মদ শামীম আহসানের কর্ণধার মো. বাচ্চু মিয়াকে গ্রেফতার করেন।
এই মামলার আসামীরা হলেন:  সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরখাস্তকৃত নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আফছার উদ্দিন, সিলেট সার্কেলের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম সরকার, সিলেট উত্তর পূর্বাঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল হাই, সুনামগঞ্জের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস, খলিলুর রহমান, সেকশন কর্মকর্তা মো. শহিদুল্লাহ, ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ খান, খন্দকার আলী রেজা, মো রফিকুল ইসলাম, মো. শাহ আলম, মো. বরকত উল্লাহ ভুঁইয়া, মো. মাহমুদুল করিম, মো. মোসাদ্দেক, সজীব পাল ও মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।
এ মামলার আসামী ঠিকাদাররা হলেন:  সুনামগঞ্জ জেলা যুবলীগের আহবায়ক ও চেম্বারস অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাটির সভাপতি সুনামগঞ্জ স্টেশন রোডের মেসার্স নুর ট্রেডিং’র প্রোপাইটার খাইরুল হুদা চপল, সুনামগঞ্জ চেম্বারস অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাটির সহ সভাপতি সিলেট বাগবাড়ী এলাকার ঠিকাদার সজীব রঞ্জন দাশ, টাঙ্গাইলের গুডম্যান এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটার মো. আফজালুর রহমান, ফরিদপুরের মেসার্স খন্দকার শাহীন আহমেদের প্রোপাইটার খন্দকার শাহীন আহমেদ, সিলেট মদিনা মার্কেটের মাহিন কনস্ট্রাকশনের প্রোপাইটার মো. জিল্লুর রহমান, সুনামগঞ্জ স্টেশন রোডের দিগন্ত ৩ এর মেসার্স এল.এন কনস্টাকশনের  প্রোপাইটার পার্থ সারথী পুরকায়স্থ, সিলেট জালালাবাদ এলাকার মেসার্স হান্নান আহমেদ এর প্রোপাইটার হান্নান আহমেদ, পটুয়াখালী সবুজবাগ এলাকার ঠিকাদার কামাল হোসেন, সুনামগঞ্জ ষোলঘর সুরমা ২৭ আবাসিক এলাকার কাজী নাসিম উদ্দিন, সাতক্ষীরার আমতলা কটিয়ার খন্দকার
আলী হায়দার এর প্রোপাইটার খন্দকার আলী হায়দার, মৌলভীবাজারের পশ্চিম বড়হাটের মেসার্স আকবর আলীর প্রোপাইটার আকবর আলী, খুলনার ২য় লেন’র ১৮ গগনবাবু রোডের আমিন এন্ড কোং’এর প্রোপাইটার মো. রবিউল আলম, ঢাকা খিলগাঁও তিলপাপাড়া ২৩০/বি এর মেসার্স বোনাস ইন্টারন্যাশনালের প্রোপাইটার আবুল হোসেন, সুনামগঞ্জ স্টেশন রোডের মেসার্স বসু নির্মাণ সংস্থার প্রোপাইটার শুভব্রত বসু, সুনামগঞ্জ শহরের জামাইপাড়া’র মেসার্স হাসান এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটার মমিনুল হক মুন, ঢাকা ৯৯ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার করিম চেম্বারের ৬ষ্ঠ তলার মেসার্স ইব্রাহিম ট্রেডার্স এন্ড মোহাম্মদ শামীম আহসানের প্রোপাইটার মো. বাচ্চু মিয়া, ময়মনসিংহের ১৯ অতুল চক্রবর্তী রোডের মেসার্স এম রহমানের প্রোপাইটার শেখ মো. মিজানুর রহমান, সুনামগঞ্জ স্টেশন রোডের মেসার্স মাহবুব এন্ড এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটার আবুল মহসিন মাহবুব, সুনামগঞ্জ নতুন পাড়ার নিলয় ১৩ এর মেসার্স মালতী এন্টারপ্রাইজের  প্রোপাইটার বিপ্রেশ তালুকদার বাপ্পি, সিলেট শিবগঞ্জ ২৮ ব্রাহ্মণপাড়ার মেসার্স মো. জামিল ইকবাল এর প্রোপাইটার মো. জামিল ইকবাল, সিলেট দাঁড়িয়াপাড়ার সি/২১ মেঘনা আবাসিক এলাকার মেসার্স নিম্মি এন্ড মুমু এর প্রোপাইটার চিন্ময় কান্তি দাশ, ঢাকা ১৫৪ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ৩০১/৩৩ বাণিজ্যিক এলাকার মেসার্স নিয়াজ ট্রেডার্সের প্রোপাইটার নিয়াজ আহমেদ খান, সুনামগঞ্জ শহরের নতুনপাড়ার নিলয় ৬১ এর মেসার্স প্রীতি এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটার মিলন কান্তি দে, কুষ্টিয়ার রবীন্দ্র সরনি মিরপুরের মেসার্স আর.আর ট্রেডিংয়ের প্রোপাইটার খান মো. ওয়াহিদ রনি, সুনামগঞ্জ শহরের আরপিন নগরের সৈকত ৩ এর মেসার্স সোয়েব এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটার মো. সোয়েব আহমেদ, চট্টগ্রাম পাঁচলাইশ হিলভিউ আবাসিক এলাকার ১ নং রোডের ৫৫৩ নং প্লাটের এস.এ টাওয়ারের নবম তলার মো. ইউনূছ এন্ড প্রাইভেট লি. এর মেসার্স ইউনূছ এন্ড ব্রাদার্স এর প্রোপাইটার মো. ইউনূছ, হবিগঞ্জ সদরের শায়েস্তাগঞ্জের ঠিকাদার মো. আব্দুল কাইয়ুম, সুনামগঞ্জ শহরের নতুনপাড়ার ঠিকাদার আতিকুর রহমান, রাজশাহী রাজপাড়া উপজেলার ঠিকাদার গোলাম সরোয়ার, মৌলভীবাজার কোর্টবাড়ি আজাদ আবাদ এর কামরুজ্জামান কনস্ট্রাকশন কোং লি. এর প্রোপাইটার মো. খাইরুজ্জামান, কুষ্টিয়া মিরপুর আমলা সদরপুরের মচাইনগরের ঠিকাদার মো. মফিজুল হক, ঢাকা হাতিরপুল সোনারগাঁ রোড ইস্টার্ন প্লাজার ৮ম তলার ২১-২৪ নং রুমের মোখলেছুর রহমান প্রাইভেট লি. এর প্রোপাইটার মো. মোখলিছুর রহমান, সুনামগঞ্জ শহরের উকিল পাড়ার ৮৮ উপত্যকার বাসিন্দা ঠিকাদার নুরুল হক, সুনামগঞ্জ শহরের বড়পাড়ার ঠিকাদার মো. রেনু, চুয়াডাঙ্গা ঝিনাইদহ বাসস্ট্যান্ডের ঠিকাদার মো. শাহরিন হক মালিক, সিলেট শাহজালাল উপ শহরের মেইন রোডের মাল্টিপ্ল্যান শাহজালাল সিটির হিজল ৭/বি এর বাসিন্দা ঠিকাদার মো. সামছুর রহমান, কুমিল্লার হাউজিং এস্টেটের ২য় নং সেকশনের ৩নং প্লটের মেসার্স মীম কনস্ট্রাকশনের প্রোপাইটার আব্দুল মান্নান, সিলেট ১৩১ মজুমদারির মোখসুদ আহমেদ এর প্রোপাইটার মোখসুদ আহমেদ, ঢাকা মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ১৫৪ মতিঝিল মসজিদ মার্কেটের ৩য় তলার ৩০১-৩০৩ এর নূনা ট্রেডার্সের প্রোপাইটার মো. সাইদুল হক, সিলেট রায়নগর দর্জিবন্দের ১২৩/৬ বসুন্ধরার মেসার্স রাজের কনস্ট্রাশনের প্রোপাইটার মো. মাহতাব চৌধুরী, ঢাকা ১৫৪ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ওয়াব্দা মসজিদ মার্কেটের ১০৮ নং রুমের এস.এ-এস.আই প্রাইভেট লি.’এর প্রোপাইটার কাজী হাসিনা আফরুজ, সাতক্ষীরা পৌর শহরের ইটাগাছা গ্রামের ঠিকাদার শেখ আশরাফ, চ্ট্টগ্রাম চাঁদগাঁও আবাসিক এলাকার ১১ নং রোডের ২৪৩/এইচ এর সোহেল কনস্ট্রাকশনের প্রোপাইটার লুৎফুর করিম, কুমিল্লা দেবীদ্বারের ৫০/এ গোমতী আবাসিক এলাকার সৈকত কনস্ট্রাকশনের প্রোপাইটার হাজী মো. কেফায়েতুল্লা, ঢাকা মতিঝিল ৮৬ আরামবাগের খন্দকার ভবনের ৩য় তলার টেকবি ইন্টারন্যাশনালের প্রোপাইটার হুমায়ুন কবির ও ঠিকাদারর সহযোগী ঢাকা সেগুন বাগিচার সারিকা টাওয়ারের ৮ নং বাড়ির মাহমুদুল্লাহর ছেলে মো. ইকবাল মাহমুদ।
মামলায় উল্লেখ করা হয় দুর্নীতি অনুসন্ধানকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন, অভিযুক্ত ও সাক্ষীদের বক্তব্য এবং রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার কৃষকরা বছরে একটি মাত্র ফসল হিসাবে ধান চাষ করেন। আবাদকৃত ধান বন্যার হাত থেকে নিরাপদ রাখার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড হাওরের চতুর্দিকে ডুবন্ত বাঁধ নির্মাণ বা সংরক্ষণ করে থাকেন। সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার বাঁধ উন্নয়ন ও সংরক্ষণে ৬. ৫ মিটার (পিডব্লিউডি) উচ্চতায় ডুবন্ত বাঁধ ডিজাইন করে ২০১১’এর জুলাইয়ে আগাম বন্যা প্রতিরোধ ও নিস্কাশন উন্নয়ন প্রকল্প শুরু হয়। এই প্রকল্পের কাজ ২০১৫ ইংরেজি তারিখে শেষ হবার কথা ছিল।’ পানি উন্নয়ন বোডেৃর তথ্যানুযায়ী সুনামগঞ্জ জেলার ৮৭ টি হাওরের মধ্যে ৩৬ টি হাওরের প্রায় ১৫০০ কিলোমিটার বাঁধ বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ করে। বাঁধ রিসেকশনিং’এর কাজ টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার কর্তৃক সম্পন্ন হয়। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে পাউবো কর্মকর্তাদের যোগসাজসে প্রতি বছরে বন্যা আসার সময় ও আশংকা অবহিত থাকা সত্বেও মৌলিক চুক্তি ভঙ্গ করে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের ৮৪ টি প্যাকেজের অসমাপ্ত কাজ নতুনভাবে টেন্ডার আহ্বান না করেই পূর্বের ঠিকাদারগণকে ক্যারিওভারের মাধ্যমে কাজ সমাপ্ত করার অনুমতি দিয়েছেন। এই ঠিকাদারগণ ১৬০টি প্যাকেজের ৯টি প্যাকেজের কাজ শুরু না করা এবং ১৫১ টি প্রকল্পের কাজ আংশিক সম্পন্ন করার মাধ্যমে অসৎ উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে ভবিষ্যতে প্রকল্পের (সরকারী অর্থ) টাকা আত্মসাত করার সুযোগ সৃষ্টি করেছেন এবং কৃষক ও জনসাধারণের আর্থিক ক্ষতিসাধন করে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২)ধারাসহদন্ডবিধি ৪০৯/১৬৬/৫১১/১০৯ ধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ দেখভালে আসা তদন্তকারী দলের প্রধান দুদক’র সহকারী পরিচালক বেলাল হোসেন মুঠোফোনে বলেছেন, ‘দুদক’র তদন্তে আসামীদের সকলের বিরুদ্ধেই প্রাথমিকভাবে দুর্নীতি’র সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।’
সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ্ খান বলেন,‘দুদক’র মামলাটি গ্রহণ করা হয়েছে। মামলায় ৬১ জনকে আসামী করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন ইতিমধ্যে মামলার দু’আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে অন্যান্য আসামীদেরও গ্রেফতারে শ্রীঘ্রই অভিযানে নামবে পুলিশের বিশেষায়িত কয়েকটি টিম।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

three × two =