বিশেষ প্রতিবেদন : তৌহিদ আহমেদ সিদ্দিকী আজাদ ওরফে বাঘা আজাদ। উত্তরার ফ্রেন্ডস ক্লাবের একজন সক্রিয় সদস্য ও নীতিনির্ধারকের একজন। গ্রামের বাড়ি সিলেট জেলায় হলেও একসময়ে ঢাকার ইব্রাহিমপুরে বসবাস করত। শীর্ষ সন্ত্রাসী তাজের বিয়াই হওয়ার সুবাদে ঢাকার ইব্রাহিমপুরে কিলার বাহিনী গড়ে তুলেন আর নামকরন করেন বাঘা বাহিনী। তার বিয়াই শীর্ষ সন্ত্রাসী তাজ গ্রেফতার হলে বাঘা আজাদ গ্রেফতার এড়াতে ইব্রাহিমপুর এলাকা থেকে সটকে পড়ে। বেশ কিছুদিন পর্দার আড়ালে আবডালে থেকে উত্তরার ৫ নং সেক্টরের ৪ নং রোডে বসবাস শুরু করে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে ক্লাবের সক্রিয় সদস্য হন। ভাল মানুষের খোলসের আড়ালে আবারও শুরু করে পুরনো সেই অস্ত্রের ব্যবসা। উত্তরার ফ্রেন্ডস ক্লাবের সিলেকশনে সিনিয়ার সহ সভাপতি জায়গাটি দখল করে নেন। সেই সুবাধে উত্তরার ফ্রেন্ডস ক্লাব সংলগ্ন রাজুঊকের মাঠের প্রতি নজর পড়ে তাদের। রাজুউকের নিয়ম অনুসারে প্রতিটা সেক্টরে একটি খেলার মাঠ থাকার কথা এবং আছেও বটে, কিন্তুু ৩ নং সেক্টরের বসবাসকারীদের তা আর ব্যবহার করার সাহস দেখায় না। উড়তি বয়সের ছেলে মেয়েরা সেখানে খেলাধূলা করার কোন সুযোগ পায় না। বাঘা আজাদ ও মহসিনরা সেই মাঠ বিভিন্ন সংগঠনের নিকট প্রতিদিন ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে টুর্নামেন্টর আয়োজনে সহযোগিতা করেন। সমূদয় অর্থ দিয়ে নিজেরা টাকার পাহাড় গড়ে আলিশান জীবন যাপন করছেন।
আরেকজন মোশারফ হোসেন মহসিন। গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলায়। জলিল বিড়ির কোম্পানির জলিল সাহেবের ছেলে। জলিল সাহেবের পরিবারে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও বাধ সেধেছে এই দুষ্কৃতি সন্তান মহসিন। এক সময়ে উত্তরায় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় শুরু করেন জমজমাট অস্ত্র ব্যবসা। কিন্তু পাপ বাপকেও ছাড়েনা, ধরা পড়েন এম ১৬ অটোমেটিক রাইফেল নিয়ে বেশ কিছুদিন জেল খাটার পর বেরিয়ে আসেন ডান্ডা বেরি থেকে। শুরু করেন অন্যরকম জীবন যাপন। বাঘা আজাদের মত মহসিনও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে উত্তরায় ফ্রেন্ডস ক্লাবের সিলেকশনে যুগ্ন সম্পাদক পদের অধিকারী হন। পর্দার আড়াল থেকে পুরোনো সেই অস্ত্র ব্যবসা আবার শুরু করে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। দখল করেন উত্তরা ৩নং সেক্টরের খেলার মাঠ। সেখানে এলাকায় কোন ছেলেমেয়েরা খেলাধূলা করাতো দূরের কথা ভিতরে প্রবেশও করতে পারে না। বাঘা আজাদ ও মহসিন মিলে মাঠকে ভাড়ায় খাটায় আর হাতিয়ে নেয় লক্ষ লক্ষ টাকা।
উত্তরার ৩নং সেক্টরের সোসাইটি পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পায়না। লোকমূখে শুনা যায় তারা নাকি খুব তাড়াতাড়ি এলাকায় রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হতে চলেছে। যদি তাই হয় তাহলে ধরে নিবো সন্ত্রাসীর কবলে ঢাকার উত্তরার রাজনীতি।
রাজধানীর প্রায় শতভাগ অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসায়ী ও ক্রেতা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এসব অস্ত্র কারবারিরা রাজনীতিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। এরাই রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এবং দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশে দেশে সন্ত্রাস ছড়িয়ে দিচ্ছে। পেশাদার অপরাধীরা তাদের কাছ থেকে অস্ত্র-গোলাবারুদ সংগ্রহ করে। আর সেসব অস্ত্র গোলাবারুদ ব্যবহৃত হচ্ছে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, অপহরণ, হত্যা, খুনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সন্ত্রাস সৃষ্টিতে। এ ধরনের সন্ত্রাসীরা কোন রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী নয়। তারা মূলত সন্ত্রাসী। এসব সন্ত্রাসী অবৈধ অস্ত্র গোলাবারুদকে পুঁজি করে অল্প সময়ে অবৈধভাবে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার মালিক বনে যায়। অস্ত্র-গোলাবারুদের বেচাকেনা করতে রাজনৈতিক চ্যানেলকে ব্যবহার করা হয়। অধিকাংশ অস্ত্র গোলাবারুদের কেনাবেচাও হয় রাজনৈতিক চ্যানেলে বা রাজনৈতিক পরিচয়ের মাধ্যমে। সুনির্দিষ্ট চ্যানেল ছাড়া হঠাৎ করেই কারও পক্ষে এসব অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র কেনা অসম্ভব।
যে প্রেমে স্বার্থ নিবিড়ভাবে জড়িত সেই সকল প্রেয়সী প্রেমিক এমন করে কথা বলে যার যার স্বার্থ উদ্ধারের জন্য। কিছু কিছু রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বও সন্ত্রাসীদের ছত্রছায়া দিয়ে একসময়ে রাজনৈতিক কর্মিদের সাথে মিশিয়ে তোলেন। জনগণকে সেই ফাঁদেই ফেলে যা অসহায়ের মত দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। এই সকল অপরাধের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার রাজনৈতিক নেতারা দায়ী। ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা সন্ত্রাসীদের সাহায্য নিয়েই আইনকে নিজের বৌ বানিয়ে রাখে। সত্যগুলোকে আঁধারে নিমজ্জিত করে। এর প্রধান কারন স্বার্থ, ক্ষমতাধর ব্যক্তির স্বার্থ, রাজনৈতিক দলের স্বার্থ সন্ত্ররসী বাহিনীর স্বার্থ। যদিও রাজনীতির প্রয়োজনে তারা সন্ত্রাসকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তবে প্রশ্ন হলো কেন তারা এই জঘন্য পথ ছেড়ে সুস্থ্য রাজনীতিতে ফিরে আসতে পারছে না ? আসলে তাদের সুস্থ্য রাজনীতি করতে বাঁধাটা কোথায় এটা অনেকেরই বোধগম্য নয়। রাজনীতিই আমাদের সব দিয়েছে। কিন্তু এ রাজনীতিই এখন বিরক্তি ও বিড়ম্বনার কারণ। রাজনীতিতে জনগণের বিরক্তির চরম বহি:প্রকাশ ঘটছে। অথচ রাজনীতির অতীত ইতিহাস অত্যন্ত গর্বের, সুমহান ও মর্যাদার। অদূরদর্শী রাজনৈতিক নের্তৃত্ব দেশকে নরকে পরিণত করছে। অপরাজনীতির নোংড়া খেলায় জনগণের নাভী:শ্বাস চরমে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, সংঘর্ষ, সংঘাত, সহিংসতা বেড়ে যাচ্ছে ভয়ানকভাবে। মানুষের মনে ভয়, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, আতংক বিরাজ করছে। মানুষ শান্তি চায়, স্বস্তি চায়, স্বাভাবিক জীবনের গ্যারান্টি চায়। শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে মুক্তি চায়।