৫০ হাজার আসনের ভর্তির যুদ্ধে ২ লাখ শিশু

0
1536

অপরাধ বিচিত্রা প্রতিবেদকঃ প্রতিবারের মতো এবারও ডিসেম্বর মাস আসতে না আসতেই শুরু হয়েছে রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তিযুদ্ধ। এ বছর ২ লাখ শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে। কিন্তু আসন আছে ৫০ হাজার। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন অভিভাবকরা। সন্তানদের ভালো কোনো বিদ্যালয়ে ভর্তি করা নিয়ে সব সময়ই বাবা-মায়েরা থাকেন দুঃশ্চিন্তায়। বছর শেষ হতে না হতেই এ দুঃশ্চিন্তা যেন বাঁধ ভেঙে পড়ে। সন্তানের মেধা, নিজেদের আর্থিক সঙ্গতি, যাতায়াত ও বাসস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অক্টোবর-নভেম্বরের মধ্যে শিক্ষার্থীদের নিয়ে দৌড়-ঝাঁপ শুরু হয়।

সরকারি শিক্ষাসেবা অপ্রতুল হওয়ায় অধিকাংশ অভিভাবককে ফিরতে হয় বেসরকারি বিদ্যালয়ের দিকেই।মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) তথ্যমতে, ঢাকা মহানগরী তিনটি ফিডার শাখাসহ ৩৮টি সরকারি বিদ্যালয় আছে। এসব স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে আসন প্রায় ১০ হাজার। এছাড়া ৪৫৬টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে। সরকারি বিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা কম হওয়ায় প্রতিবছরই বেসরকারি বিদ্যালয়ের দিকে ছুটতে হয় শিক্ষার্থীদের।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য শিশু রয়েছে প্রায় ২ লাখ। এ হিসেবে প্রথম শ্রেণিতে দেড় লক্ষাধিক শিশু অভিভাবকদের পছন্দের স্কুলে ভর্তি হতে পারবে না।

প্রতিবছরের মতো এবারও রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল মডেল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আ. রউফ পাবলিক কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়, বিএফ শাহীন স্কুল, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, হলিক্রস উচ্চ বালিকা স্কুল ও কলেজ, মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, অগ্রণী স্কুল ও কলেজ, সেন্ট জোসেফ উচ্চ বিদ্যালয়, মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, জুনিয়র ল্যাবরেটরি স্কুল ও কলেজ, গ্রিনফিল্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মাইল স্টোন কলেজ, ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলসহ ৪০টি বেসরকারি স্কুলে ভর্তি নিয়ে অভিভাবকরা রীতিমতো যুদ্ধে নেমে পড়েছেন। কোনো কোনো স্কুলে সময় শেষ হবার অনেক আগেই শেষ হয়েছে ভর্তি ফরম বিক্রি।

রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মতিঝিল দিবা শাখার ১ম, ২য়, ৩য় এবং প্রভাতী ও দিবা শিফটের ৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ ৭ম শ্রেণিতে এ বছর ভর্তি করা হচ্ছে না। এছাড়া বনশ্রী শাখার দিবা শিফটে ১ম, ২য়, ৩য় ও ৫ম এবং প্রভাতী শিফটে ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষার্থী নেওয়া হবে না। মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে তৃতীয় শ্রেণি থেকে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত সীমিত আসনে ভর্তি করা হবে। মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কোনো শ্রেণিতেই শিক্ষার্থী ভর্তি করবে না। সেন্ট জোসেফ উচ্চ বিদ্যালয়ে শুধু তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করবে। রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৯ম শ্রেণিতে স্বল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।

ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে তৃতীয় শ্রেণিতে দিবা শাখায় ১০০ জন ও প্রভাতী শাখায় বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে ৫০ জন করে ভর্তি করা হবে। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে উভয় শিফটে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে ৫০ জন শিক্ষারথী ভর্তি করবে। ফলে এ বছর ভালো স্কুলে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভর্তিতে প্রতিযোগীর হার বেশি। বিশেষ করে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য এবারও যুদ্ধে নামতে হবে অভিভাবকদের।

এদিকে মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নতুন কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে না বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ (বালক) মুর্শেদা শাহীন। তিনি বলেন, আমরা শিক্ষার্থী কমিয়ে কোয়ালিটি বাড়াতে চাই। তাই এ বছর কোনো শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করাব না। যেসব শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে তারা অন্যত্র চলে গেলেও শূন্য আসনে ভর্তি করা হবে না।

অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পছন্দের স্কুলে সন্তানকে ভর্তি করতে প্রতিদিন ছুটছেন বিভিন্ন স্কুলে। একাধিক প্রাইভেট টিউটরসহ সাহায্য নিচ্ছেন বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের। কোমলমতি শিশুদের হাতে তুলে দিয়েছেন নিষিদ্ধ ভর্তি গাইড। এর বাইরেও অপকৌশলে ভর্তির উপায়ও খুঁজছেন কেউ কেউ।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

3 − three =