দুই সন্তানসহ গৃহবধূ নিখোঁজ সরাইলে

0
677

সরাইলে দুই সন্তানসহ সামিরা আক্তার ঝর্ণা (৩০) নামের এক গৃহবধূ ৬ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছে। স্বামীসহ পরিবারের লোকজনের দাবি এটা পরিকল্পিত অপহরণ। গত সোমবার ৫ই ডিসেম্বর কালিকচ্ছের নন্দিপাড়া পিত্রালয় থেকে স্বামীর বাড়ি সরাইল সদরের বড় দেওয়ান পাড়া আসার পথে নিখোঁজ হয়েছেন তারা। নিখোঁজ গৃহবধূর ছেলে তামিম (১১) ও মেয়ে

নওরীন (০৫)। গত শুক্রবার গৃহবধূর পিতা আব্দুর রফিক লস্কর সরাইল থানায় এ বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি করেছেন। পুলিশ বেনু দাস (৪৮) নামের এক অটোরিকশা চালককে আটক করেছে। পুলিশ, জিডি ও গৃহবধূর পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালে বড় দেওয়ান পাড়ার শফি উদ্দিন ঠাকুরের ছেলে মোছলেহ উদ্দিন পল্টুর সাথে বিয়ে হয় কালিকচ্ছ ইউনিয়নের নন্দিপাড়া গ্রামের আব্দুর রফিক লস্করের মেয়ে ঝর্ণার। স্বামী পল্টু ঢাকায় একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকুরি করেন। বিয়ের পর থেকে সুখেই কাটছিল তাদের দাম্পত্য জীবন। তাদের রয়েছে তামিম ও নওরীন নামের ২টি সন্তান। পিত্রালয় নিকটে হওয়ায় ঝর্ণা প্রায়ই বেড়াতে যান। গত ১০-১২ দিন পূর্বে ঝর্ণা ২ সন্তানকে নিয়ে তার পিত্রালয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন। গত ৫ই ডিসেম্বর সোমবার ছেলে মেয়েকে নিয়ে ঝর্ণা স্বামীর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কালিকচ্ছ বাজার থেকে বড় দেওয়ান পাড়ায় আসতে তিনি সিএনজি চালিত অটোরিকশায় ওঠেন। এরপর থেকেই সন্তানসহ ঝর্ণা নিখোঁজ রয়েছেন। বাবার বাড়ির লোকজন ভাবছেন ঝর্ণা স্বামীর বাড়িতে চলে গেছে। আর স্বামীর বাড়ির লোকজন ভাবছেন ঝর্ণা তো বাবার বাড়িতে বেড়াইতেছে। ৩দিন পর ৮ ডিসেম্বর স্বামী পল্টু ঢাকা থেকে বাড়িতে আসলে স্ত্রীর মুঠোফোনে কল দিয়ে দেখেন নাম্বার বন্ধ (০১৭১৫৪-১১৯১৫২, ০১৯৩০-২৬৫২৮৫)। শ্বশুর বাড়ির লোকজনের সাথে যোগাযোগ করেন। তারা জানান ৩ দিন আগেই তো ঝর্ণা বড় দেওয়ান পাড়ায় চলে গেছে। স্ত্রী সন্তানের চিন্তায় হতবিহবল হয়ে পড়েন স্বামী পল্টু। তাদের সকল আত্মীয় স্বজনের বাড়ি ঘরে সন্ধান করে কোথাও পাননি। আর ঘটনার দিন থেকেই বন্ধ রয়েছে ঝর্ণার মুঠোফোনটি। ৬ দিনেও তাদের কোন সন্ধান না পাওয়ায় মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন ঝর্ণার স্বামী পল্টু ও বাবা রফিক লস্কর। গত শুক্রবার ঝর্ণার বাবা আব্দুর রফিক লস্কর এ বিষয়ে সরাইল থানায় একটি জিডি করেন ( জিডি নং-৩৩৪, তারিখ-০৮.১২.১৭)।  ওই রাতেই পুলিশ ঝর্ণাকে বহনকারী অটোরিকশা চালক বেনু দাসকে আটক করেছে পুলিশ। বেনু দাস জানায়, কালিকচ্ছ থেকে ২ সন্তানসহ ঝর্ণাকে নিয়ে সরাইলের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। সড়কের খাদ্য গুদামের কাছে আসার পর অটোরিকশাটিতে যান্ত্রিক ক্রুটি দেখা দেয়। পরে তাদেরকে আরেকটি অটোরিকশায় উঠিয়ে দেয়। ওই অটোরিকশাটিতে চালকের সাথে একজন যাত্রী সামনের সীটে বসা ছিল। চালককে বেনু দাস চিনেন না। অটোরিকশাটি কোথাকার সেটিও জানেন না। ঝর্ণার স্বামী পল্টু সহ পরিবারের সদস্যদের দাবী এটা পরিকল্পিত অপহরণ। তাদেরকে জোর পূর্বক অথবা অন্যকোন কৌশলে অজ্ঞান করে নিয়ে গেছে কোন চক্র। ঝর্ণার সাথে স্বামী পল্টুর সর্বশেষ কথা হয়েছে সোমবার সকালে। ঝর্ণার পিতা রফিক লস্কর বলেন, আমার পাশেই বসবাসকারী রিকশা চালক বিশু দেবকে আমার মেয়ে মালামালসহ পরিচিত একটি সিএনজিতে ওঠিয়ে দিতে বলে। পরে বিশু দেব ওই বেনু দেবের অটোরিকশায় ওঠিয়ে দিয়েছে। আমার মেয়ের নিখোঁজের ঘটনার সাথে বেনু দেব অবশ্যই জড়িত। সরাইল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, আমাদের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার (সরাইল সার্কেল) মোঃ মনিরুজ্জামান ফকিরের সার্বিক সহায়তায় নিখোঁজ পরিবারের সদস্যদের উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

5 + one =