শীতের তীব্রতা বেড়েছে উত্তরাঞ্চলে

0
890

উত্তারাঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। সন্ধ্যা থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে গোটা জনপদ। খেটে খাওয়া মানুষের কষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃদ্ধ ও শিশুদের ডায়রিয়াসহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগ দেখা দিচ্ছে। কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, উত্তারাঞ্চলের সীমান্ত ঘেঁষা জেলা কুড়িগ্রামে

শীতের তীব্রতা বেড়েছে। গরম কাপড়ের অভাবে শীত কষ্টে ভুগতে শুরু করেছে শিশু, বৃদ্ধসহ নিম্ন আয়ের কর্মজীবী মানুষজন। কনকনে ঠান্ডার সাথে হিমেল হাওয়া ঠান্ডার মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। কুড়িগ্রাম আবাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষন মোঃ জাকির হোসেন জানান, গতকাল বুধবার কুড়িগ্রাম জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এ অবস্থায় শীত কাতর মানুষেরা খর-কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করছে। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তাসহ ১৬ টি নদ-নদীর অববাহিকায় ৪শতাধিক চরের মানুষ শীতের তীব্রতায় দুর্ভোগে পড়েছে। চর-দ্বীপচরসহ নদী তীরবর্তী এলাকায় শীত বেশী অনুভুত হওয়ায় শীতকষ্টে দিনাতিপাত করছে এখানকার মানুষেরা। গত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার ও নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া পরিবারগুলো গরম কাপড়ের অভাবে পড়েছে বিপাকে। এমতাবস্থায় কাজে বেড়াতে পারছে না শ্রমজীবি মানুষেরা। দুর্ভোগ বাড়তে শুরু করেছে হত দরিদ্র পরিবারগুলোর শিশু ও বৃদ্ধদের। খর-কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করছেন অনেকেই। স্বল্প আয়ের মানুষেরা ভীড় করছেন পুরাতন কাপড়ের দোকানে। শীতের তীব্রতা বাড়তে থাকায় শিশুদের নানা রোগব্যাধী নিয়েও চিন্তিত হয়ে পড়েছেন হত দরিদ্র পরিবারের লোকজন। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার চর ভেলাকোপার সবুর উদ্দিন জানান, আমরা গরীব মানুষ কাজ করি খাই। কিন্তু খুব ঠান্ডা পড়ছে সাথে বাতাস কাজে যেতে পারছি না। গরম কাপড় নাই। চিলমারী উপজেলার অষ্টমীর চরের ময়না বেগম জানান, কাপড় কেনার কোন টাকা পয়সা নাই। নিজের কাপড় না থাকলেও ছেলে-মেয়েদের কাপড়তো কিনে দেয়া দরকার। কিন্তু হাতে কোন টাকা নাই। কাজকামও চলে না। সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের বৃদ্ধ মজিদ জানান, দিনে দিনে শীতের মাত্রা বাড়তেছে। আমরা বৃদ্ধ মানুষ এখনই বাইরে বের হতে পারছি না। আরোতো দিন আছে। কি হবে জানি না। এব্যাপারে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানান, তালিকা করে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ও অসহায় মানুষদেরকে শীত বস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। আর শীত মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব রকমের ব্যবস্থা নয়ো হয়েছে। সীমান্তবর্তী ও নদ-নদী বেষ্টিত এজেলার হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের শীত নিবারনে এগিয়ে আসবে সরকারসহ বিত্তবানরা এমনটাই প্রত্যাশা শীত কাতর মানুষদের। বোদা (পঞ্চগড়) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, পঞ্চগড়ের বোদায় গত দু’দিনে হিমেল হাওয়ার সাথে ঘন কুয়াশার কারণে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষের কষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল বুধবার সূর্যের আলো দেখা গেলেও মৃদু হিমেল হাওয়ায় মানুষজন নাকাল হয়ে পড়ছে। ঘন কুয়াশার কারণে রাস্তাঘাটে যানবাহন চলাচল করছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। সাধারণ মানুষ জবুথবু হয়ে পড়েছে শীতের তীব্রতায়। শীতের তীবব্রতায় আলুতে লেটব্রাইট নামক এক প্রকার সত্রাকের আক্রমণ হওয়ার আশংকা করেছে কৃষকরা। হাসপাতালে শীত জনিত কারণে শিশু ও বৃদ্ধ রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ মাহমুদ হাসান জানান, এখনও পর্যন্ত সরকারি ভাবে ৩ হাজার ৫শতটি কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। সেগুলো উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যন ও ইউ’পি চেয়ারম্যানদের মাধ্যবে বিতরণ করা হয়েছে। আরো বরাদ্দ চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গত দুই দিন থেকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বত্রই শৈত্য প্রবাহ শুরু হয়েছে। প্রচন্ড শীতে কাঁপছে সুন্দরগঞ্জবাসী। গরম কাপড়ের দোকানে উপছে পড়া ভির লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে শৈত্য প্রবাহ শুরু হলেও তা দুই/তিন দিন স্থায়ী হয়। এরপর স্বাভাবিক শীত লক্ষ্য করা গেলেও গত দুই দিন ধরে আবারও শৈত্য প্রবাহ শুরু হয়েছে। এতে সর্বত্র কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে। তাপমাত্রা নেমে আসার পাশাপাশি প্রচন্ড হিমেল হাওয়ায় অচল হয়ে পড়েছে এলাকার সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জীবনযাত্রা। ঘন কুয়াশার সাথে হিমেল হাওয়া যুক্ত হয়ে জনজীবন নাকাল করে তুলেছে। সকাল ১০/১১টার আগে সূর্যের দেখা মিলছে না। প্রচন্ড ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশার কারনে খেটে খাওয়া মানুষ বিশেষ করে ভ্যান-রিক্সা শ্রমিক ও কৃষক-কৃষানীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কনকনে ঠান্ডায় বৃদ্ধ ও শিশুদের মাঝে ডায়রিয়াসহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দেয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। শীতকালিন ফসল সরিষা, গম, আলু, বেগুন, পিয়াজ, মরিচ ও বোরো ধানের বীজতলায় শীত রোগ আক্রমণের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে এ উপজেলার নদী বিধৌত ৭ ইউনিয়নের চরাঞ্চলের জনগণ শীতের দাপটে কাবু হয়ে পড়েছে। অনেকেই রান্নার চুলায় অথবা খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নুরুন্নবী সরকার জানান এ পর্যন্ত ৯ হাজার কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম গোলাম কিবরিয়া জানান, বরাদ্দ প্রাপ্ত কম্বল গরীব দুঃস্থ্য ও অসহায়দের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। এ বরাদ্দ উপজেলার দুঃস্থ্য অসহায় মানুষদের তুলনায় অপ্রতুল।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

19 + thirteen =