পর্ব -২ (সাইকো সাইবারনেটিকস)

0
886

মোঃ মাছুম চৌধুরী, চিফ লার্নিং অফিসার : আইএলডি,  masum.pha@gmail.com  সফলতা অর্জনের জন্য কীভাবে পজেটিভ সেলফ ইমেজ সৃষ্টি করবেন ?  আমাদের সমাজে দুইধরনের সেলফ ইমেজ-সম্পন্ন মানুষ আছে। (১)  পজেটিভ সেলফ ইমেজ  (২)  নেগেটিভ সেলফ ইমে আসুন, নিজেকে ৩টি প্রশ্ন করি। (১) আমি দেখতে কেমন? এ প্রশ্নের মাধ্যমে আপনি আপনার বাহ্যিক রুপ বা চেহারা, আপনার নিজের

বাহ্যিক উপস্থাপনা, আবির্ভাব ইত্যাদির উত্তর খুঁজতে পারেন। যারা পজেটিভসেলফ ইমেজ-সমৃদ্ধ মানুষ তারা দেখতে যে রকমই হোক, সব সময় একটি বিষয় মনে রাখা উচিত প্রত্যেক মানুষ দেখতে অন্যের মতো সুন্দর নয়, কিন্তু প্রত্যেক মানুষ নিজের মতো সুন্দর। (২)   আপনি কেমন কাজ করছেন? এ প্রশ্নের মাধ্যমে আপনি আপনার কর্ম-ক্ষমতা, কর্ম-দক্ষতা এবং যোগ্যতা যাচাই করতে পারেন। (৩)   আপনার গুরুত্ব কতটুকু? এ প্রশ্নের মাধ্যমে আপনি আপনার প্রয়োজন কিংবা কীভাবে সমাজে, কর্ম-ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন সবকিছুর উত্তর যাচাই করতে পারেন। সঠিকভাবে সবগুলো প্রশ্নের উত্তর যদি পজেটিভ হয় তবে আপনি পজেটিভ সেলফ ইমেজ সমৃদ্ধ মানুষ; কিন্তু প্রশ্নের উত্তরগুলো যদি নেগেটিভ হয় তবে আপনি নেগেটিভ সেলফ ইমেজ সমৃদ্ধ মানুষ।আসুন, এখন আমরা প্রথম প্রশ্নের উত্তর নিয়ে একটু আলোচনা করি। প্রশ্নটি ছিল – আমি দেখতে কেমন? স্বাভাবিক ভাবেই এ প্রশ্নটির উত্তর দেওয়ার জন্য আপনার বাহ্যিক রুপ বা চেহারা, আপনার নিজের বাহ্যিক উপস্থাপনা, আবির্ভাব, পছন্দের পোশাক পরিচ্ছদ ইত্যাদি বিষয় চলে আসবে। অন্য মানুষের চোখে আপনি দেখতে কেমন? মানুষ প্রতিদিন আমাদের যেভাবে দেখে (বাহ্যিক রুপ, চেহারা, পোশাক পরিচ্ছদ ইত্যাদি) সেভাবেই মানুষের মনে আমাদের সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত সৃষ্টি হয়। সেজন্য মানুষ সচেতনভাবে মানুষের সামনে নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনের জন্য কিংবা আবির্ভাবের জন্য টাকা পয়সা খরচ করে ভালো পোশাক, কসমেটিকস, সুন্দর থাকার উপকরণ ইত্যাদি ক্রয় করে থাকেন। এছাড়াও শরীরের ফিটনেস সুন্দর রাখার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা, খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনা, বডিবিল্ডিং করা, কসমেটিক সার্জারির মতো সিদ্ধান্ত নেয়। আমাদের জীবনের অধিকাংশ সময় আমরা ব্যয় করি শুধুমাত্র আমরা দেখতে কেমন কিংবা নিজেকে কেমন দেখাতে চাই সে কাজের জন্য। মানুষের সামনে নিজেকে ভালোভাবে উপস্থাপনের জন্য, আবির্ভাবের জন্য আমরা অনেক বেশি পণ্য-নির্ভর হয়ে যাচ্ছি। সবকিছুর প্রয়োজন আছে, কিন্তু জীবনের কোর ভ্যালুজ বাদ দিয়ে সফলতার চাবি পাওয়া সম্ভব নয়। নিজের প্রতি আমাদের দ্বিতীয় প্রশ্নটি ছিল – আপনি কেমন কাজ করেন বা করছেন ? এ প্রশ্নের মাধ্যমে আপনি আপনার কর্ম-ক্ষমতা, কমর্-দক্ষতা এবং যোগ্যতা যাচাই করতে পারেন। প্রতিদিন মানুষের মনে আমরা আমাদের সম্পর্কে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধারনা তৈরি করি আমাদের কাজের মাধ্যমে, সফলতা অর্জনের মাধ্যমে কিংবা ব্যর্থতার মাধ্যমে। নিজের সাথে অন্য মানুষের তুলনা দিয়ে আমরা অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের সম্পর্কে ভালো কিংবা খারাপ ধারনা তৈরি করতে পারি। কিন্তু সার্বিকভাবে আমরা আমাদের কর্ম-ক্ষমতা ও কর্ম-দক্ষতার মাধ্যমে এবং সফলতা অর্জনের মাধ্যমে সবার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারি। নিজের প্রতি আমাদের তৃতীয় প্রশ্নটি ছিল – আমাদের গুরুত্ব কতটুকু? এ প্রশ্নের মাধ্যমে আমরা আমাদের গুরুত্ব কিংবা কীভাবে সমাজে, কর্মক্ষেত্রে অবদান রাখছি সবকিছুর উত্তর যাচাই করতে পারি। ভাবতে হবে আমরা সবার জন্য কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ? আমি আমার নিজের জন্য কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ?  আমি আল্লাহর প্রতি কতটুকু অনুগত, দায়িত্বশীল এবং গুরুত্বপূর্ণ ? এসব কিছু মিলেই আমাদের সামাজিক সেলফ ইমেজের সৃষ্টি হয়। আমরা আমাদের সামাজিক অবস্থা বা সেলফ ইমেজকে কাজে লাগিয়ে অনেক সময় ক্ষমতাবান হতে চাই। পজেটিভ সেলফ ইমেজ সৃষ্টির মাধ্যমে সমাজে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি হয়। পজেটিভ সেলফ ইমেজ সৃষ্টির মাধ্যমে সমাজে আমরা অবদান রাখতে পারি এবং আমাদের গ্রহণযোগ্য অবদানের কারণে মানুষ উপকৃত হয়। আমাদের কর্মের মাধ্যমেই আমরা পজেটিভ সেলফ ইমেজ বা নিজের সম্পর্কে ভালো ভাবমূর্তি সৃষ্টি করতে পারি। প্রত্যেক মানুষের চিন্তা ভাবনা, কার্যকলাপ, আচার ব্যবহার, শিষ্ঠাচার, ন্যায়নীতি,  যোগ্যতা, দক্ষতা ইত্যাদি সবকিছুর বর্হিঃপ্রকাশ সেলফ ইমেজের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সেজন্য বলা হয় মানুষের ব্যক্তিত্ব এবং আচার ব্যবহারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সেলফ ইমেজ। মানুষের ব্যক্তিত্ব এবং আচার ব্যবহারের মধ্যে ভালো পরিবর্তন আনতে হলে সেলফ ইমেজের পরিবর্তন অবশ্যই করতে হবে। সেলফ ইমেজ হচ্ছে একজন মানুষের ভালো কিংবা মন্দ কাজ সম্পাদনের সক্ষমতা। একজন মানুষ যত বেশি ভাল কাজ সম্পাদন করতে পারবে তার সেলফ ইমেজ ততো বেশি বিকশিত হবে। সুতরাং পজেটিভ সেলফ ইমেজ বিকশিত করতে হলে ভাল ভাল কাজগুলো সম্পাদন করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। ভাবতে হবে সবকিছুই করা সম্ভব এবং আমি করতে পারি এবং পারব। সেলফ পজেটিভ ইমেজ বৃদ্ধির জন্য সব সময় নতুন কিছু শেখার জন্য আগ্রহী হতে হবে যাতে আমরা সব সমস্যার সমাধান করে ব্যর্থতাকে দূরে ঠেলে সফলতা অর্জন করতে পারি। যাদের সেলফ ইমেজ পজেটিভ তাদের সফলতা অর্জন করার সম্ভাবনা অনেক বেশি, কিন্তু যাদের সেলফ ইমেজ নেগেটিভ তাদের ব্যর্থ হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি।পজেটিভ সেলফ ইমেজ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তৈরী হয় আমাদের নিজের সম্পর্কে গভীর বিশ্বাস থেকে। অবচেতন মনে আমাদের নিজের সম্পর্কে অনেক বিশ্বাস তৈরি হয় যা সাধারণত অতীত অভিজ্ঞতা আসে। অতীতে আপনি কোনো কাজে ব্যর্থ হয়েছেন বলে আপনি ধরেই নিয়েছেন ভবিষ্যতে সেই কাজটি করতে গেলে আপনি হয়তো আবারও ব্যর্থ হবেন এমন অনেক ধরনের অতীত অভিজ্ঞতা থেকে মানুষের মনে সেলফ বিলিফ বা বিশ্বাস তৈরি হয় যা অনেক সময় জীবনের জন্য অনেক বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেক মানুষ পূর্বে কোনো কাজে বিফল হওয়ার কারণে সবাই তাকে ব্যর্থ বলেই জানে সেজন্য সে বিশ্বাস করে তাকে দিয়ে কোনো কাজ হবে না। এ ধরনের লোকদের দূর্বল আতœবিশ্বাসের কারণে নেগেটিভ সেলফ ইমেজ তৈরি হয়। পজেটিভ কিংবা নেগেটিভ সেলফ ইমেজ সম্পূন্নভাবে একজন মানুষ নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। পজেটিভ সেলফ ইমেজের সাথে সুখানুভবের একটি সুন্দর সম্পর্ক আছে। আব্রাহাম লিঙ্কনের একটি উক্তি হচ্ছে – বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারাই বেশি সুখী যারা নিজের মনকে সবচেয়ে বেশি সুখী রাখতে পারে। পজেটিভ সেলফ ইমেজ-সমৃদ্ধ লোকজন সবার চেয়ে একটু বেশিই সুখী হয়। পজেটিভ সেলফ ইমেজের সাথে সফলতার আরেকটি গভীর সম্পর্ক আছে। এ সম্পর্কে জিগ জিগলারের একটি উক্তি হচ্ছে – সফলতা হচ্ছে আমাদের যা কিছু আছে, যা আমরা ভালোভাবে করতে পারি তা দিয়ে সবচেয়ে সেরা কাজটি করা। সফলতা হচ্ছে নিজের সর্বোচ্চ ক্ষমতা, যোগ্যতা কাজে লাগিয়ে কোনো কিছু অর্জন করার সর্বোচ্চ মানদন্ড যা আমরা করতে চাই কিংবা হতে চাই। সফল হওয়ার শর্তই হচ্ছে কোনো সেরা কিছু অর্জন করা জন্য নিজে বিশেষ কিছু করা । কোনো কাজ না করে কোনো বিশেষ কিছু অর্জন করা, কারও কাছ থেকে চেয়ে বিশেষ কিছু পাওয়া অথবা সাধারণ কোনো জয় অর্জন করার মধ্যে সফলতা নেই। আমাদের জীবনে সফলতা অর্জনের জন্য ১০০% দ্বায়-দায়িত্ব আমাদেরকেই নিতে হবে এবং আমাদেরকেই লক্ষ্যে পৌছাঁনোর জন্য কাজ করতে হবে। পজেটিভ সেলফ ইমেজ এবং সফলতা অর্জনের জন্য আমাদেরকে সব সময় সফল এবং সুখী পজেটিভ সেলফ ইমেজ আছে এমন মানুষদের সংস্পর্শে থাকতে হবে। সেজন্যই নেগেটিভ ইমেজের লোকদের কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে। আপনি যদি আরও পাঁচজন পজেটিভ সেলফ ইমেজ-সমৃদ্ধ লোকদের সাথে চলাফেরা করেন, তবে আপনার সেলফ ইমেজও পজেটিভ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। সেজন্য বলা হয় আরও পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতোই আপনার সেলফ ইমেজ কারণ আপনি পাঁচজন সাধারণ মানুষের সাথে চলাফেরা করেন। পজেটিভ সেলফ ইমেজ ডেভেলপমেন্টের জন্য মটিভেশন প্রয়োজন আছে যদিও অনেকের ধারনা মটিভেশন দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী হয় না বরং ব্রেইন থেকে হারিয়ে যায় । সেজন্য জিগ জিগলার বলেছেন, প্রয়োজনে আপনাকে প্রতিদিনই মটিভেটেড থাকতে হবে। যে ফ্যাক্টরগুলো আপনার সেলফ ইমেজকে প্রভাবিত করে – ১. বন্ধু বান্ধব ২. শিক্ষক ৩. বাবা-মা ৪.  সহপাঠী ৫. সংবাদ মাধ্যম ৬. টেলিভিশন ৭. চলচ্চিত্র ৮. মিডিয়া ৯. ম্যাগাজিন ১০.   সফলতা প্রত্যেক মানুষের যথাযথ আতœমর্যাদা এবং শারীরিক সুন্দর ইমেজের কারণে সেলফ ইমেজ বৃদ্ধি পায়। সেলফ ইমেজ বৃদ্ধি মানে নিজের মান সম্মান বৃদ্ধির মাধ্যমে নিজেকে সুযোগ্য অবস্থানে নিয়ে যাওয়া। প্রত্যেক মানুষের স্বভাব চরিত্র, যোগ্যতা-দক্ষতার মাধ্যমে নিজেকে সবার সামনে উপস্থাপনের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষের ক্রমাগত সেলফ ইমেজ বৃদ্ধি পায়। সেলফ ইমেজের সাথে সেলফ এসটিমের একটি সম্পর্ক আছে। সেলফ এসটিম মানে হচ্ছে আতœসম্মানবোধ। প্রত্যেক মানুষের আতœ-সম্মানবোধ আছে। আমরা আমাদের মান-সম্মান সম্পর্কে  যা ভাবি কিংবা মনে করি সেটাই হচ্ছে আমাদের সেলফ এসটিম বা আতœসম্মানবোধ। (চলব)ে

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

3 × one =