বিশেষ প্রতিবেদক :
কুমিল্লা সিটিকর্পোরেশনের ৫ম তলার পুরোটাই প্রায় ১ বছর যাবত দখল করে নিয়েছে একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী। ওই প্রভাবশালী গোষ্ঠী নিউমার্কেটের ৫ম তলায় আইটি পার্ক স্থাপনের নামে ১’শ ৪৯ টি দোকান বরাদ্দের নামে ২৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আরো অভিযোগ রয়েছে পছন্দের ব্যবসায়ীদের দোকানদের বরাদ্দের মাধ্যমে অতিরিক্ত ২ লাখ টাকা করে নিয়েছে। আর এসব টাকা প্রভাবশালী গোষ্ঠীর ৩ সদস্যর নামে থাকা এক্সিম ব্যাংক শাখায় জমা রাখা হয়েছে। সচেতন মানুষের প্রশ্ন সিটি কর্পোরেশনের জায়গায় তৈরী নিউমার্কেটের ফ্লোর বরাদ্দের টাকা সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব একাউন্টে জমা না হয়ে কিভাবে প্রভাবশালী গোষ্ঠীর সদস্যদের একাউন্টে জমা রাখা হলো সেটা এখন নগরীতে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এদিকে ৫ম ফ্লোরে আইটি পার্ক স্থাপনে নগর পিতা মনিরুল হক সাক্কু আনুষ্ঠিক ঘোষনা দিলেও সেই নগর পিতাই আবারো ঘোষনা দিলেন, আইটি পার্ক স্থাপনে নিউমার্কেটের ৫ম তলা কাউকে বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। নগর পিতার এই দ্বিমুখী ঘোষনায় যে সকল ব্যবসায়ী অগ্রিম টাকা দিয়েছিল তাদের মাঝে নেমে এসেছে হতাশা।
স্থানীয় বিভিন্ন সুত্রে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, নগরীর প্রানকেন্দ্র কান্দিরপাড় এলাকায় গড়ে উঠা কুমিল্লা নিউমার্কেট বিশাল একটি বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। সিটি কর্পোরেশনের মালিকানাধীন এই বানিজ্যিক ভবনটি নির্মান কাজ শেষের পর দরপত্রের মাধ্যমে ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরের দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়। ৫ম তলাটি প্রায় এক বছর পূর্বে একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী আইটি পার্ক স্থাপনের কথা বলে দখলে নিয়ে নেয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুত্র জানায়, তখন অজ্ঞাত কারণে সিটিকর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ এব্যাপারে নিরব ভূমিকা পালন করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুত্র মতে ৫ম তলার ১৪৯ টি দোকান বরাদ্দের নামে চক্রটি প্রায় ২৫ কেটি টাকা হাতিয়ে নেয়। পাশাপাশি মার্কেটের ওই ফ্লোরের কমন স্পেসও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে ভাড়া দিয়ে আরো কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল সুত্র আরো জানায়, ৫ম তলা দখলদার চক্রটি স্থানীয় সদর আসনের এমপিকে ৮ টি, সিটি মেয়রকে ৬টি, বাজার শাখার কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীকে একাধিক দোকান নামে-বেনামে উপঢৌকন দেওয়ার প্রচারনা চালায়। সুত্র জানায়, প্রথম দিকে কম্পিউটার সমিতির নামে ফ্লোর বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীতে আইটি পার্ক নাম দিয়ে চক্রটি অবৈধ দখল বানিজ্য শুরু করে। এতে প্রকৃত কম্পিউটার ব্যবসায়ীদের দোকান বরাদ্দের কথা থাকলেও সেটাও মানা হয়নি। সুত্র জানায়, ওই চক্রটি নিজেদের পছন্দের লোকজনের নামে একেকজন ৮/১০ টি করে দোকানের দখল নেয়। পরবর্তীতে এসকল দোকান অন্যদের কাছে অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রি করে দেয়। ফলে কম্পিউটার সমিতি বা আইটি পার্কের ধূয়া তুলে ৫ম ফ্লোরটির দখল নিলেও কার্যত কোন প্রকৃত আইটি ব্যবসায়ীদের ঠাই হয়নি এই ফ্লোরে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুত্রমতে দখলে থাকা চক্রটির কাছ থেকে যারা দোকান বরাদ্দ নিয়েছেন তাদের বেশীর ভাগেরই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই বা কাগজপত্র ভূয়া। প্রতিটি দোকানের অনুকূলে এসময় চক্রটি অঘোষিত, অননূমোদিত ও অবৈধ শিডিউল এবং ব্যাংকের পে-অর্ডার জমা দিয়ে দোকান বরাদ্দের প্রক্রিয়া সম্পন্নের অভিযোগ উঠেছে। এদিকে বরাদ্দ না দিলেও আইটি পার্ক, নিউমার্কেট (৫মতলা), কান্দিরপাড়, কুমিল্লা নামে সিটি কর্পোরেশন ট্রেড লাইসেন্স ইস্যূ করেছে। সেই ট্রেড লাইসেন্স ব্যবহার করে ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার অবৈধ লৈনদেনও করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, অবৈধ প্রক্রিয়ায় সিটি কর্পোরেশনের মালিকানাধীন মার্কেটের বিশাল ফ্লোর দখলে রেখে গত ১০ জুলাই সেন্ট্রাল এসি লাগানোর সকল সরঞ্জাম জড়ো করেন। ১২ জুলাই ৫ম তলার দখলদারদের সাথে সিটি মেয়র প্রকাশ্যে সভা করে মার্কেটের কাজ এগিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করেন। তবে অজ্ঞাত কারণে ১৩ জুলাই একটি স্থানীয় অখ্যাত দৈনিক পত্রিকায় সিটি কর্পোরেশন সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি ছাপে। যাতে নিউ মার্কেটের ৫ম তলার অবৈধ দখলদারদের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের একদিনের মধ্যে তাদের মালামাল সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়। কিন্তু বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রায় ৬ মাসেও অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ বা মেয়র।