‘বৃক্ষমানব’ হিসেবে পরিচিত খুলনার আবুল বাজানদারের হাত ও পায়ের বাকলসদৃশ টিউমার ২৪টি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়েছিল দুই বছর ধরে। অস্ত্রোপচারের পরও এক বছর ধরে তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় এ সময়ে আবুলকে নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি গণমাধ্যমে। তবে চিকিৎসকদের দেওয়া একটি দুঃসংবাদে ফের শিরোনাম হলেন এই যুবক। চিকিৎসকদের ভাষ্য, বাকলের মতো অংশগুলো আবার গজাতে শুরু করেছে আবুলের শরীরে।
২০১৬ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ২৪টি অস্ত্রোপচার করা হয় আবুলের দুই হাত ও পায়ে। এসব অস্ত্রোপচারে তার শরীর থেকে পাঁচ কেজি ওজনের বাকলসদৃশ টিউমার অপসারণ করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে চিকিৎসকরা আশা প্রকাশ করে বলেছিলেন, দ্রুতই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন আবুল বাজানদার। কিন্তু গত এক বছর ধরেই তিনি হাসপাতালে সপরিবারে বসবাস করছেন। মেডিকেল এক্সপ্রেস নামের একটি গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়, আবুল বাজানদারের চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেনের আশঙ্কা, তাদের ধারণার চেয়েও বেশি জটিল এই রোগ। এ ব্যাপারে প্রিয়.কমের পক্ষ থেকে ডা. সামন্ত লাল সেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘গত দুই সপ্তাহ আগে আবুল বাজানদারের আরো একটি অপারেশন হয়েছে। ওর একটি হাতে নতুন করে বাড়তে শুরু করেছিল, সেটা ওই অপারেশনে কেটে ফেলা হয়েছে। এখন আবুল বাজানদার মোটামুটি ভালো আছে। নতুন করে গাছের শেকড়ের মতো যেগুলো গজায়, সেগুলো গজানোর (গ্রো) করার মতো পরিস্থিতি দেখছি না।’ আবুল বাজানদারকে আরো কিছুদিন হাসপাতালে রাখা হবে বলেও জানান ডা. সামন্ত লাল সেন। খুলনার রিকশাচালক আবুল বাজানদারের ত্বকে এক ধরণের জটিলতা দেখা যায়। এ কারণে শেকড় ও বাকলের মতো অংশ তৈরি হয়। তার রোগটির নাম এপিডারমোডিসপ্লাসিয়া ভেরুসিফরমিস। এই জটিলতার কারণে রিকশা চালাতে পারছিলেন না তিনি। পরে ২০১৬ সালে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন তিনি। এই রোগের একটি বৈশিষ্ট্য হলো আক্রান্ত মানুষটির শরীরে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে। এতে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। লাইভ সায়েন্সের খবরে জানানো হয়, সাধারণত বংশগত এই সমস্যাটির কোনো উপসর্গ থাকে না। কিন্তু মাঝে মাঝে রোগীর শরীরে টিউমার দেখা যায়, যেমনটা দেখা গেছে আবুল বাজানদারের হাত-পায়ে। এখন পর্যন্ত এ রোগের সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই।