শব্দদূষণ : আইন আছে, প্রয়োগ নেই

0
692

শব্দদূষণ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক বড় সমস্যা। অতিরিক্ত শব্দদূষণের ফলে বাড়ছে মানসিক চাপ, কমে যাচ্ছে আমাদের স্বাভাবিক শ্রবণশক্তি এবং সেই সঙ্গে বাড়ছে কানের নানা জটিলতা যার চিকিৎসা ব্যয় সাধারণের নাগালের বাইরে। শব্দদূষণ একটি অপরাধমূলক কাজ। এর ফলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া, কর্মক্ষেত্র, হাসপাতালের রোগীদের অতিরিক্ত মানসিক চাপ বাড়ছে। শব্দদূষণ বন্ধ করতে সরকার বহুবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।

 

কারণ সরকার এখনও পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। কোনো আইনানুগ ব্যবস্থাও নেয়া হয় না শব্দদূষণকারীদের বিরুদ্ধে। তাই তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে প্রতিদিন। শব্দদূষণ রোধ করার জন্য সরকার হাইড্রোলিক হর্ন আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু এরপরও শব্দদূষণ কমছে না, বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সংস্থা (বেলা) ২০০২ সালে শব্দদূষণ বন্ধে আদালতে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে। ওই বছর ২৭ মার্চ উচ্চ আদালত হাইড্রোলিক হর্ন এবং বিকট শব্দ সৃষ্টিকারী যে কোনো ধরনের হর্ন গাড়িতে সংযোজনের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন এবং গাড়িতে বাল্ব হর্ন সংযোজনের নির্দেশ প্রদান করেন। এই আইন ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে শাস্তির বিধানও প্রচলিত আছে। এছাড়া ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ ১৯৭৬-এর ২৫, ২৭, ২৮ ধারামতে শব্দদূষণ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে অর্থদন্ড ও কারাদন্ড উভয়েরই বিধান রয়েছে। মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩-এর ১৩৯ ও ১৪০ নং ধারায় নিষিদ্ধ হর্ন ব্যবহার ও আদেশ অমান্য করার শাস্তি হিসেবে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদন্ত ও অর্থদন্ডের বিধান রয়েছে। ১৯৯৭ সালের পরিবেশ ও বন সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী নীরব এলাকায় ভোর ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ৪৫ ডেসিবল এবং রাতে ৩৫ ডেসিবল, আবাসিক এলাকায় দিনে ৫০ ডেসিবল এবং রাতে ৪০ ডেসিবল, মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০ ডেসিবল ও রাতে ৫০ ডেসিবল, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০ ডেসিবল ও রাতে ৬০ ডেসিবল এবং শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫ ডেসিবল ও রাতে ৭০ ডেসিবলের মধ্যে শব্দের মাত্রা থাকা বাঞ্ছনীয়। এ আইন অনুযায়ী হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকার নির্ধারিত কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত এলাকাকে নীরব এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। শব্দদূষণের বিরূপ প্রভাব শুধু মানবজাতি নয়, পশুপাখির ওপরও পড়ছে। শব্দদূষণের ফলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে বিলুপ্ত হচ্ছে নানা জাতের পশুপাখি। এভাবে চলতে থাকলে একসময় পশুপাখিও আমাদের শহর থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে। ঢাকা নগরীসহ দেশে প্রতিদিন বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যা। ফলে বাড়ছে শব্দদূষণও। এর মাত্রা হ্রাস করতে হলে এখনই আমাদের সতর্ক হতে হবে। শব্দদূষণের ক্ষতিকর দিকগুলো স¤পর্কে সবাইকে অবগত করতে হবে। নিজেকে সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি সতর্ক করতে হবে চালকদেরও।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

twenty − 18 =