নাঙ্গলকোটের যুবককে ডেকে নিয়ে গলা কেটে হত্যার অভিযোগ

0
642

নাঙ্গলকোটের গ্রামের বাড়ি থেকে মোবাইল ফোনে শ্বশুরবাড়ি চৌদ্দগ্রামে ডেকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজন কর্তৃক মেয়ের জামাতা শাহীনকে (২৪) গলা কেটে এবং দু‘পায়ে চুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

 

শাহীনকে হত্যার পর লাশ ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের সুজাতপুর নামক স্থানে ফেলে রেখে শাহীন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাবার অপচেষ্টা চালায় শ্বশুরাড়ির লোকজন। চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশও শাহীনের হত্যাকান্ডটিকে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর চেষ্টা চালায় বলে শাহীনের পরিবার অভিযোগ করেন। পরে থানা পুলিশ শাহীনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন। শাহীনের গলায়, মাথায়, বুকে এবং দু‘পায়ে বড় ধরণের জখমের চিহৃ রয়েছে। তার মুখটিও ঝলসে দেয়া হয়েছে। শাহীন নাঙ্গলকোট উপজেলার বাঙ্গড্ডা ইউনিয়নের আঙ্গলখোঁড় গ্রামের মৃত মফিজুর রহমানের ছেলে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ২১ফেব্রুয়ারী বুধবার রাত ১১টায় ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামের সুজাতপুর এলাকায়।

এদিকে শাহীনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ২২ফেব্রুয়ারী বৃহষ্পতিবার কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হলেও ময়নাতদন্তের চিকিৎসকরা শাহীনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহেৃর সাথে লাশের সুরতহাল রিপোর্টের মিল না থাকায় চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশের এস আই (উপ-পরিদর্শক) সাইফুল ইসলামকে পুনরায় সুরতহাল রিপোর্ট পাঠানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। পরে এস আই (উপ-পরিদর্শক) সাইফুল ইসলাম সুরতহাল রিপোর্ট প্রেরণ করেন। ময়নাতদন্তের চিকিৎসক ও থানা পুলিশের রশি টানাটানিতে ২২ এবং ২৩ ফেব্রুয়ারী শাহীনের লাশ কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পড়ে থাকে। পরে গত ২৪ ফ্রেব্রুয়ারী শনিবার হাসপাতালের চিকিৎসকরা বোর্ড বসে ওইদিন দুপুর ১২ টায় লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে শাহীনের পরিবারের নিকট লাশ হস্তান্তর করেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত পাঁচ মাস পূর্বে নাঙ্গলকোট উপজেলার বাঙ্গড্ডা ইউনিয়নের আঙ্গলখোঁড় গ্রামের মৃত মফিজুর রহমানের ছেলে রাজমিস্ত্রি শাহীন পাশ্ববর্তী চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চিওড়া ইউনিয়নের সুজাতপুর গ্রামের নুরুল আমিনের মেয়ে শাহেনা আক্তারকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর শাহীন স্ত্রী শাহেনা আক্তারকে স্বর্ণের কানের দুল ক্রয় করে দেন। পরে শাহীনের শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার স্ত্রীর কানের দুল বিক্রি করে দেন। এনিয়ে শাহীনের সাথে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মনোমালিন্য চলে আসছিল। গত ২১ফেব্রুয়ারী বুধবার সন্ধ্যায় শাহীনের শালা বাবলু শাহীনের মোবাইল ফোনে ফোন দিয়ে তার বোনকে নিয়ে যেতে চৌদ্দগ্রামে আসতে বলেন। পরে শাহীন স্ত্রীকে আনার জন্য চৌদ্দগ্রাম শ্বশুর বাড়ি যায়। ওই দিন রাত ১১টায় শাহীনের চাচী শ্বাশুড়ি শাহীনের মামাতো ভাই মাসুদ আলমকে মোবাইল ফোনে ফোন করে জানায়, শাহীন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। তার লাশ নিয়ে যান। শাহীনের পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে শাহীনের লাশ সনাক্ত করেন। এসময় লাশের শরীরের মাথায়, গলায়, হাতে, বুকে এবং দু‘পায়ে আঘাতের চিহৃ দেখতে পান।
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল ফয়সল বলেন-আমরা বিষয়টি সঠিকভাবে তদন্ত করছি। কেউ যদি এর সাথে জড়িত থাকে কোন ছাড় দেওয়া হবে না। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেলে এটি হত্যা নাকি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে সঠিক কারণ জানা যাবে। শাহীনের পরিবারকে থানায় আসতে বললেও তারা আসে নাই। নিহতের স্ত্রী শাহেনা আক্তার বাদি হয়ে তার স্বামীর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু নিয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই (উপ-পরিদর্শক) সাইফুল ইসলাম বলেন, লাশের সুরতহাল রিপোর্টে মাথায়, গলায়, হাতে এবং দু‘পায়ে আঘাতের চিহেৃর উল্লেখ করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেলে প্রকৃত তথ্য জানা যাবে। শাহীনের মা মনকির বেগম বলেন-আমার একমাত্র ছেলেকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন হত্যা করেছে। আমি হত্যার সঠিক বিচার চাই। এব্যাপারে শাহীনের মা মনকির বেগম আদালতে হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

9 − 9 =