লাইন নির্মাণে ব্যাপক বাণিজ্য শুরু করেছে দালালচক্র

0
601

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে পল্লী বিদ্যুতের নতুন লাইন নির্মাণে একটি সিন্ডিকেট এবং টেকনিশিয়ানরা বিভিন্ন কথা বলে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বিদ্যুৎ সংযোগের প্রাথমিক জরিপ, পরিমাপ, খুঁটি, মিটারসহ বিভিন্ন ধাপে প্রতি গ্রাহককে দিতে হচ্ছে পাঁচ হাজার থেকে সাত হাজার টাকা। প্রচার চালিয়েও এই অবৈধ অর্থের লেনদেন বন্ধ করতে পারছে না বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। জানা যায়, বর্তমানে নাগেশ্বরী উপজেলায় শতভাগ নতুন লাইন নির্মাণাধীন রয়েছে। এই সুযোগে খুঁটিপ্রতি এবং লাইন নির্মাণে ব্যাপক বাণিজ্য শুরু করেছে দালালচক্র। তারা বিভিন্ন কায়দায় লাইন নির্মাণে জরিপ এবং পরিমাপের সময় গ্রামে গ্রামে গিয়ে বিদ্যুৎ পেতে হলে টাকা লাগবে বলে স্থানভেদে পাঁচ হাজার থেকে সাত হাজার টাকা মিটারপ্রতি গ্রাহকদের সঙ্গে চুক্তি করে।

পরে পরিমাপের সময় থেকে সংযোগ পর্যন্ত এই টাকা তুলে নেয়। এসব টাকা উত্তোলনের সঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের কিছু টেকনিশিয়ান, অসৎ কর্মকর্তা ও প্রকৌশলী জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাথমিক জরিপ ও লাইন পরিমাপে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীকে দিনপ্রতি (যেদিন জরিপ ও পরিমাপ থাকে) দিতে হয় ২০ হাজার টাকা। এ টাকা দালাল মারফত যায় তাদের পকেটে। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার কেদার ইউনিয়নের বাহের কেদার টেকনিক্যাল মোড় ও মাস্টারপাড়া নামক দুটি লটে ছয় হাজার টাকা চুক্তিতে দালালি করছেন টেকনিশিয়ান মহেন্দ্র। এরই মধ্যে গ্রাহকপ্রতি এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা নিয়েছেন তিনি। এখানে গ্রাহকসংখ্যা প্রায় ৫০০। গ্রামে খুঁটি পরিবহনের জন্য আরো দুই হাজার করে টাকার তাগাদা দিচ্ছেন তিনি। গ্রাহক আব্দুর রশিদ, আব্দুল আলীম ও জামাল উদ্দিন বলেন, দুই বছর আগে মহেন্দ্র তাঁদের বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কথা বলে দুটি লট থেকে সাত লক্ষাধিক টাকা নিয়ে গেছেন; এখন খুঁটি আনার কথা বলে টাকা চাচ্ছেন। তাঁরা জানান, মহেন্দ্র এই দুটি লটে নিজস্ব লোক মারফত টাকা তুলে নিচ্ছেন। বাহের কেদার গ্রামের কসাইপাড়ার শহিদা পারভিন ও মোজাহার বলেন, এরই মধ্যে তাঁরা আমিনুল নামের প্রতিবেশীর মাধ্যমে এক হাজার ৬০০ টাকা করে দিয়েছেন। পশ্চিমপাড়ার মোহাম্মদ আলী ও জাকিউল ইসলাম বলেন, এরই মধ্যে তাঁরা দুই হাজার টাকা করে দিয়েছেন মহেন্দ্রকে। মাস্টার মোড়ের শফিকুল ইসলাম ও হাফিজুর রহমান দাবি করেন, তাঁদের কাছ থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকা করে নিয়েছেন মহেন্দ্র। এরশাদ আলীর দাবি, তাঁর গ্রামের ৩০ জন ৬০ হাজার টাকা মহেন্দ্রর হাতে তুলে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে টেকনিশিয়ান মহেন্দ্র বলেন, ‘বিদ্যুৎ পেতে হলে টাকা লাগে ভাই। তবে আপনারা লাখ টাকার কথা বলছেন; সেরকম নয়, খরচা বাবদ গ্রামপ্রতি দশ-বিশ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে।’ কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুতের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, ‘দালালদের দৌরাত্ম্য এবং টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। টাকা না দিতে গ্রাহকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

4 + one =