সিএনজিচালিত অটোরিকশার এই নৈরাজ্যের চিত্র উঠে এসেছে

0
439
চাহিদামতো ভাড়া বৃদ্ধির পরও রাজধানীতে সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকদের ৯৬ শতাংশ চুক্তিতে চলেন। বকশিশ চান ৯১ শতাংশ চালক। এ ছাড়া ৮৭ শতাংশ চালক যাত্রীদের পছন্দের গন্তব্যে যেতে চান না। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক সমীক্ষায় রাজধানীতে চলা সিএনজিচালিত অটোরিকশার এই নৈরাজ্যের চিত্র উঠে এসেছে। সংগঠনটি এই বছরের ১ মার্চ থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত রাজধানীর ১৯টি স্থানে ২৩০টি অটোরিকশায় যাত্রী সেবার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে। এ সময়ে ৪২২ জন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে সমীক্ষা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।

আজ রোববার ‘ইকোনমিক লাইফ শেষে কেমন চলছে অটোরিকশা?’ শীর্ষক সমীক্ষাটি গণমাধ্যমে প্রকাশের জন্য পাঠানো হয়। সংগঠনটি ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেও এ ধরনের একটি সমীক্ষা প্রতিবেদন দেয়। সেখানে বলা হয়েছিল, ৬২ শতাংশ চালক চুক্তিতে চলে এবং বকশিশ চান ৮১ শতাংশ চালক। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘নামমাত্র খরচে পরিচালিত সিএনজিচালিত অটোরিকশায় মালিক, চালক, সরকার মিলে যাত্রী স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে চার দফা অটোরিকশার মেয়াদ ও ভাড়া বৃদ্ধি করে। এরপরও এই খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সমিতির অভিযোগ, সর্বশেষ ভাড়া নির্ধারণে এক লাফে যাত্রী ভাড়া ৬০ ভাগ বাড়ালেও শৃঙ্খলা ফেরানো যায়নি।’ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঢাকা মহানগরে চলা অটোরিকশার ৯৬ শতাংশ চুক্তিতে চলাচল করছে। যাঁরা মিটারে চালাচ্ছেন, তাঁদের ৯১ শতাংশ ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া বা বকশিশ দাবি করেন। যাত্রীদের চাহিদার গন্তব্যে যেতে রাজি হন না ৮৭ শতাংশ অটোরিকশাচালক। এ ছাড়া পর্যবেক্ষণে ব্যক্তিগত অটোরিকশা ভাড়ায় যাত্রী বহন এবং ঢাকা জেলার অটোরিকশা বেআইনিভাবে ঢাকা মহানগর এলাকায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে। যার পরিমাণ ৪৮ শতাংশ। যাত্রাবাড়ী, সদরঘাট, গুলিস্তান, প্রেসক্লাব, পল্টন, কাকরাইল, বাড্ডা, মতিঝিল, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, খিলগাঁও চৌরাস্তা, ফকিরাপুল, ফার্মগেট, মালিবাগ, মিরপুর-১০, ধানমন্ডি, এলিফ্যান্ট রোড, শাহবাগ, বিমানবন্দর, মহাখালী এলাকা ঘুরে এ সমীক্ষা চালানো হয়। সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এ পর্যবেক্ষণ চলে। এ সময় অনিয়ম প্রতিরোধে এলাকাগুলোতে বিআরটিএ, ট্রাফিক পুলিশ বা অন্য কোনো সংস্থার তৎপরতা চোখে পড়েনি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, যাত্রীরা অভিযোগ করেন, রাত নয়টার পর ও সকাল আটটার আগে কোনো অটোরিকশা মিটারে চলে না। সমীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়, অটোরিকশা–সংকটের কারণে অনেক সময় বেশি ভাড়া দিয়েও চুক্তিতে চলতে বাধ্য হচ্ছে যাত্রীরা। সিটি করপোরেশনের টোলের নামে নেওয়া চাঁদা, ফ্লাইওভারের টোল ও যানজটের জন্য অপেক্ষা বিলের নামে পুরোটাই যাত্রীর কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে বলে যাত্রীদের অভিযোগ। সংগঠনটি প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশও করে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘নৈরাজ্য বন্ধে মিটার বাদ দিয়ে অ্যাপসে চলে আসা উচিত। কোনো একটি প্রাইভেট কোম্পানির অধীনে দিয়ে অটোরিকশাগুলো চালালে মনিটর করা সহজ হবে। নানান অজুহাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ও বন্ধ হবে।’ এ ছাড়া অটোরিকশা আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার চান। তিনি বলেন, শুল্কের কারণেই মালিকেরা চালকদের মাধ্যমে যাত্রীদের কাছে বেশি ভাড়া নেন। সম্প্রতি অ্যাপসভিত্তিক পরিবহন আসায় অটোরিকশাচালকদের অভিযোগ তাঁদের চাহিদা কমে গেছে। এ বিষয়ে মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, কিছুটা চাপে রয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে ভাড়া কিছু কম রাখলেও মিটারে চলে না। তিনি জানান, যাত্রীদের প্রতি দুর্ব্যবহার কিছু কমেছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

nineteen − 4 =