শিন শিন জাপান হাসপাতালে রোগী আটকে রেখে নির্যাতন

0
2602
 মোঃ আহসানউল্লাহ হাসানঃ নগরীর উত্তরায় রোগীদের আটক করে টাকা আদায় করছে শিন শিন জাপান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
উত্তরার শিন শিন জাপান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দূর্নীতিতে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে চিকিৎসা সেবা নিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বিভিন্ন শ্রেনী পেশার রোগীরা।অভিযোগ উঠেছে কমিশন ভিত্তিক/বেতনভুক্ত তাদের নিজস্ব নিয়োগকৃত দালালদের দিয়ে গাজীপুর ও নরসিংদীর বিভিন্ন সরকারী হাসপাতাল থেকে রোগীদের কম খরচে উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা প্রদানের প্রলোভন দেখিয়ে উক্ত হসপিটালে নিয়ে রোগীদের রোগ নির্ণয় বা প্রকৃত রোগের চিকিৎসা সেবা প্রদান না করে ইচ্ছে মতো বিল করে রোগীদের কাছ থেকে অন্যায় ভাবে আদায় করা হচ্ছে মোটা অংকের টাকা।উত্তরার ১১নম্বর সেক্টরের ১৭, গরীব-এ-নেওয়াজ এভিনিউয়ে চলছে শিন শিন জাপান হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার কাজ।
টাকা দিতে না পারলে রোগীদের দিনের পর দিন আটকে রাখা হয় হাসপাতালে। এমনকি রোগীর স্বজনদের হাসপাতালে প্রবেশ পর্যন্ত করতে দেয় না।যতক্ষণ পর্যন্ত টাকা না দেয় ততক্ষণ পর্যন্ত রোগীর স্বজনকে হাসপাতালে প্রবেশ করতে পারে না। রোগীর স্বজনরা ঢাকা মেডিকেলে নিতে বললে এ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভাররা সল্প খরচে ভাল চিকিৎসা হবে বলে এখানে নিয়ে আসে।জেলার সদর হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে।আর এই সুযোগে শিন শিন জাপান হাসপাতালের কতৃপক্ষের সাথে যোগসাযগ করে এ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভারা এখানে নিয়ে আসে।আনার পর তারা কন্টাক্ট করে রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে কৌশলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।বেশির ভাগ রোগী গাজীপুর ও নরসিংদী থেকে আনা হয়।শুধু তাই নয় ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট প্রদান করে আসছে হাসপাতালের জিএম মোঃশরীফুল ইসলাম ও মোঃ রিপন। হাসপাতালে  ভর্তি না থেকেও গোপনে টাকার মাধ্যমে দিচ্ছে মেডিকেল  সার্টিফিকেট।
কথা হয় এক ভুক্তভোগী রোগীর ছেলে মোঃ ইব্রাহিমের সাথে তিনি বলেন, আমার বাড়ী ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার নূরজাহানপুর গ্রামে।গত ২০ শে ফেব্রুয়ারী দিনে দুপুরে আমার বাবা মোঃ ইকবাল হোসেনকে(৫৬) মাদক ব্যবসায়ীরা এলোপাথাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক যখম করে। এর আমার বাবাকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে হয়।নরসিংদী সদর থেকে আমার বাবাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) রেফার্ড করা হয়।এ সময় আমার বাবাকে নিয়ে আমার ছোট বোন এ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।আমি ফোনে ড্রাইভারকে ঢাকা মেডিকেলে নিতে বলি কিন্তু সে আমার কোন কথা শোনে নি।সে সরাসরি শিন শিন জাপান হাসপাতালে নিয়ে আসে।আমি ড্রাইভারকে বার বার বললাম ঢাকা মেডিকেলে নিতে কিন্তু সে নিল না।আনার পর আমার বাবা আমার চোখের সামনে রক্ত রক্ত ঝরতে ঝরতে মারা যাবে।
এসব কথা বলছিলেন আর ইব্রাহিম কাঁদতে ছিলেন।তারপর একটি বন্ড সই রাখে আমার কাছ থেকে।এতে চিকিৎসা বাবদ আড়াই লক্ষ টাকা লেখা ছিল ঔষধ বাদে।আমরা গরীব মানুষ আমার বাবা একজন কৃষক।পাচঁ বোনের এক ভাই আমি।মাত্র দশ হাজার টাকা বেতনে টেক্সটাইলে কাজ করি।চোখের সামনে বাবাকে এমন অবস্থায় দেখলে কে সহ্য করতে পারে বলেন।আমি অনেক কষ্ট করে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে চেয়ে এনে ১লক্ষ টাকা চিকিসা বাবদ ও ১লক্ষ টাকা ঔষধ বাবদ জমা দেই।এরপর আমি আর টাকা দিতে পারছি না বলে জানাই সহকারী ম্যানেজার রিপনকে।তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে বের হ টাকা না নিয়ে হাসপাতালে আর আসবি না।আগে টাকা দিবি তারপর তোর বাবাকে নিবি।এই রকম করতে করতে ৬দিন অতিবাহিত হয়ে যায়।আমি টাকাও জোগাড় করতে পারি না হাসপাতালেও বাবাকে দেখতে ঢুকতে পারি না।
পরে প্রতিবেদকের কাছে বলেন।বলার পর তিনি পুলিশের সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দেন।আমি উত্তরা পশ্চিম থানায় শিন শিন জাপান হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার মোঃ শরীফুল ইসলাম,ম্যানেজার মোঃজাহিদ ও সহকারী ম্যানেজারে নাম উল্লেখ করে একটি অভিযোগ দায়ের করি।এরপর উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী হোসেন, উপ-পরিদর্শক শরীফুজ্জামানকে বিষয়টি দেখতে বলেন।তিনি ঘটনাস্থলে যেয়ে দেখেন রোগীকে ঢাকা মেডিকেলে রেফার্ড করা হয়েছে।তখন তিনি সহকারী ম্যানেজার মোঃ রিপনের কাছে জানতে চান, এটা ত পুলিশ কেইস আর রোগীকে ঢাকা মেডিকেলে না পাঠিয়ে কেন এখানে ভর্তি করেছেন কেন।এর কোন সঠিক উত্তর রিপন দিতে পারে নি।পরে রিপন বলেন, আমি রোগীকে এখনি ছেড়ে দিচ্ছি।তারপর পুলিশের উপস্থিতিতে গত ৪ মার্চ আমি আমার বাবাকে নিয়ে চলে আসি।তিনি বলেন, আমার মত যেন কেউ এ হাসপাতালে না আসে। তাহলে তার সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে।গরীবের জন্য এই হাসপাতাল না গরীবের জন্য ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল।
কথা হয় আরেক ভুক্তভোগী সিকিউরিটি গার্ড মোঃ রিংকুর সাথে তিনি জানান, আমি গাজীপুরের নাউজোর থেকে এসেছি।এ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে।আমার স্ত্রী সুমিকে সাপে কেটেছে। আমি মাত্র দুই ঘন্টা হলো এসেছি।আমি এখন এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে চাইনা।তারপর আমাকে ১২ হাজার টাকার বিল হাতে ধরিয়ে দেয়।আমি কাঁদতে শুরু করি।তারা আমার কোন কথা শোনে না। টাকা না দিয়ে তোমার স্ত্রীকে নিতে পারবা না।পরে কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে ২হাজার টাকা নিয়ে রোগীকে ছেড়ে দেয়।
মেট্রোরেলে কাজ করতে গিয়ে জনি নামের এক শ্রমিকের দুই আঙ্গুল থেথলে যায়।পরে এখানে এসে শেলাই করা হয়।তারপর তাকে এইচডিইউ রুমে রাখা হয়।জনি জানান,রডের আঘাতে আমার দুটি আঙ্গুল থেথলে যায়।সেলাই করছে তাই আমার বিল করেছে ১৩ হাজার ১শত ৫০ টাকা।৪ ঘন্টার বিল কিভাবে এত টাকা হয়।পরে ৯ হাজার টাকা দিয়ে ছাড়া পাই।মাত্র ৪ ঘন্টায় কিভাবে এত ছোট সমস্যার এত বড় বিল হয় তা আমার জানা নেই।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে, জেনারেল ম্যানেজার মোঃশরীফুল ইসলাম,  ম্যানেজার জাহিদ ও সহকারী ম্যানেজার রিপন কোন কথা বলতে রাজি হননি।
Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

19 + eight =