নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আলোচিত স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী সুমন মিয়া হত্যা মামলার বাদী কাজল রেখাকে টানা ২৬ দিন স্থানীয় এমপির বাড়িতে বন্দি করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সুমন হত্যা মামলার প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্যই তাকে আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন নিহতের স্ত্রীসহ তার পরিবারের লোকেরা। এদিকে বন্দিদশা থেকে বের হওয়ার পর জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বাদী কাজল রেখার ছেলে বুধবার রাজধানীর ভাটারা ও রূপগঞ্জ থানায় পৃথক সাধারণ ডায়েরি করেন।
নিহত স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী সুমন মিয়া হত্যা মামলার বাদী ও নিহত সুমনের শাশুড়ি কাজল রেখা জানান, গত ৮ই ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপির নাশকতা ঠেকাতে উপজেলা কাঞ্চন সেতুর পশ্চিমপাড় হাবিব নগর এলাকার ৩শ’ ফিট সড়কে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষ অবস্থান নেয়। এক সময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পাঁচ শতাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট, টিয়ার শেল ও গুলি ছুড়ে। এতে তারাব পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী সুমনসহ ১৫ জন গুলিবিদ্ধ ও অর্ধশতাধিক আহত হয়। হাসপাতালে নেয়ার পর সুমন মিয়াকে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় ওই রাতে রূপগঞ্জের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী তার বাড়িতে লোক মারফত সুমনের পিতা মনু মিয়া ও তাকে এমপির রুপসীর বাসভবনে ডেকে নেন। পরে আওয়ামী লীগ নেতা কায়েতপাড়া ইউনিয়ন ও রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিকসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করার জন্য মনু মিয়াকে নির্দেশ দেয়। অবস্থা বুঝতে পেরে সুমনের পিতা মনু মিয়া কৌশলে পালিয়ে যায়। এরপর নিহত সুমনের শাশুড়ি কাজল রেখাকে এমপি থানায় পাঠায় মর্গ থেকে সুমনের লাশ ফেরত আনার জন্য কাগজে স্বাক্ষর দিতে হবে এমন কথা বলে। পড়াশোনা না জানা কাজল রেখাকে একটি লিখিত কাগজে স্বাক্ষর করায় রূপগঞ্জের তৎকালীন ওসি ইসমাইল হোসেন। এরপর থেকে চলতি মাসের ৪ তারিখ অবধি এমপির বাড়িতে বন্দি করে রাখে কাজল রেখাকে। ৪ঠা মার্চ নিহত সুমনের স্ত্রী ফারজানা আক্তার জর্ডান থেকে দেশে ফিরলে তার সঙ্গে দেখা করার কথা বলে কৌশলে কাজল রেখাকে এমপির বাড়ি থেকে নিয়ে আসেন তার ছেলে রুহুল আমিন। বের হয়ে এসে কাজল রেখা জানতে পারেন তাকে বাদী করে রফিকুল ইসলাম রফিকসহ আওয়ামী লীগের ১৭ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তিনি এ মামলায় নিজের অজ্ঞাতে স্বাক্ষর করেছেন এমন কথা স্থানীয়দের জানালে বিভিন্ন মহল থেকে তাকে খুন গুমসহ পুরো পরিবারকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়া হচ্ছে। এরপর থেকে নিজেদের জীবন বাঁচাতে পুরো পরিবার বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এই ঘটনায় বাদীর ছেলে রুহুল আমিন বুধবার রাজধানীর ভাটারা ও রূপগঞ্জ থানায় পৃথক দুটি ডায়েরি করেন। এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মনিরুজ্জামান বলেন, মামলার বাদীর ছেলে রুহুল আমিনের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত পূর্বক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।