মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন
দুনিয়াব্যাপী ইসলামের বিরুদ্ধে গভীর থেকে গভীরতর ষড়যন্ত্র চলছে। যখন সমগ্র দুনিয়া থেকে রাজতন্ত্র, বুর্জোয়া গণতন্ত্র, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র গণমানুষের বিরাজমান সমস্যাবলী সমাধান করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে, তখন দুনিয়ার সর্বশ্রেণীর মানুষ ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকছে। মানুষ অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছে যে, মানুষের সৃষ্ট কোন তন্ত্র-মন্ত্র দিয়ে চলমান সমস্যাবলী সমাধান আদৌ সম্ভব নয়। শোষিত-বঞ্চিত এবং সর্বহারা শ্রেণী এও বুঝতে সক্ষম হয়েছেন যে, মহান আল্লাহ্তা’য়ালার নির্দেশিত পথেই সকল সমস্যার সমাধান সম্ভব। আর যখনই পুনরায় ইসলামের জাগরণ শুরু হতে যাচ্ছে, তখনই ইসলাম বিরোধী ইহুদী-খৃষ্টান ও নাসারাসহ নাস্তিকরা ইসলামী জাগরণ যাতে না হতে পারে তার জন্য ওঠে-পড়ে লেগেছে। ওদের বহুমুখী ষড়যন্ত্রের জাল অতি সুকৌশলে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছে………..।
বড়ই পরিতাপের বিষয়, ইহুদী ও খৃষ্টানদের ফর্মূলাকে বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বব্যাপী এনজিও নামধারী সংগঠনগুলো সমাজসেবার নামে বিভিন্নমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য মুসলিম নামধারী কিছু ব্যাক্তি নেতৃত্বের সম্মুখভাগে রয়েছে। তারা অর্থের কাছে মাথা নত করে ইসলাম বিরোধী বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে তা বাস্তবায়নের জন্য সদা তৎপর। এদের মধ্যে বেশ কিছু উচ্চ শিক্ষিত ব্যাক্তি যেমন রয়েছে, তেমনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও রয়েছে। এমনকি ইসলামী লেবাসধারীদের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়………!
এখন প্রশ্ন এসেছে, ওরা কি পারবে ইসলামী জাগরণ ঠেকাতে? এর জবাবে বলবো, শত সহ¯্রবার চেষ্টা করেও ওরা সফলকাম হবে না। এখানে, পবিত্র র্কুআনের সূরা আত্ তাগাবুনের আয়াত ১ ও ২ নং আয়াত উল্লেখ করা প্রয়োজন “আসমান ও জমিনের যা কিছু আছে, তার সবই আল্লাহ্র আনুগত্য ঘোষণা করছে। তিনিই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী এবং সব প্রশংসা তারই। তিনি সবকিছু করতে সক্ষম। তিনিই সে মহান সত্ত্বা, যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আমাদের মধ্য থেকে কেউ কাফের এবং কেউ মুমিন। আমরা যা করছি আল্লাহ্ তা’য়ালা তা দেখছেন।”
সূরা বাকারাহ্র ১৭৭ নং আয়াতে মহান আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন, “পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ ফিরানো আসল পুণ্যের কাজ নয়। প্রকৃত পুণ্যের কাজতো সে ব্যাক্তি করলো, যে নিষ্ঠার সাথে ঈমান আনলো; আল্লাহ্, পরকাল, ফেরেস্তা, আল- কিতাব ও নবীদের প্রতি আর আল্লাহ্পাকের ভালোবাসা পাবার জন্যে নিজের ধন-সম্পদ ব্যয় করলো আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতিম, মিস্কীন, পথিক, সাহায্যপ্রার্থী ও দাসত্ব থেকে মুক্তির জন্যে। তাছাড়া সালাত কায়েম করলো এবং যাকাত পরিশোধ করলো, আর এ পুণ্যবান লোকেরা হয়ে থাকে প্রতিশ্রুতি পূর্ণকারী এবং দারিদ্র্য দুঃসময়, দুঃখ-দুর্দশা, বিপদ-আপদ ও সত্য মিথ্যার সংগ্রামে ধৈর্য্য, দৃঢ়তা ও অটলতা অবলম্বনকারী। এরাই প্রকৃত সত্যপন্থী আর এরাই ন্যায়বান আদর্শ মানুষ।” অবিশ্বাসীদের জন্য আল্লাহ্ তা’য়ালা সূরা নামলের ৪ ও ৫ নং আয়াতে এরশাদ করেছেন, “যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না। তাদের দৃষ্টিতে তাদের কর্মকে আমি শোভন করেছি। ফলে তারা বিভ্রান্তিতে ঘুরে বেড়ায়; এদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং এরাই আখিরাতে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্থ।” মুসলমানদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে আল্লাহ্ তা’য়ালা সূরা আল্-ইমরানের ১১০ নং আয়াতে এরশাদ করেছেন, “তোমরাই হবে উত্তম মানব সমষ্ঠি। মানুষের কল্যানে তোমাদের নিয়োজিত করা হয়েছে। তোমরা ভাল কাজের আদেশ করবে, মন্দ কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহ্র প্রতি ঈমান সুদৃঢ় রাখবে।”
এ সম্পর্কে হাদিসের মর্মবাণী হলো-“আবু সাঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি,“তোমাদের কেউ যখন কোন খারাপ কাজ হতে দেখে, সে যেন তা হাত দিয়ে প্রতিরোধ করে। যদি সে এ ক্ষমতা না রাখে, তবে যেন অন্তরের দ্বারা এটা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। আর এটা হলো ঈমানের দুর্বলতম স্তর।” পবিত্র র্কুআন পাকের সূরা হুদের ১৫ ও ১৬ নং আয়াতে আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন, “যে কেউ পার্থিব জীবন ও ভোগ-বিলাস কামনা করে, দুনিয়াতে আমি তাদের কর্মের পূর্ণ ফল দান করি এবং সেথায় তাদেরকে কম দেওয়া হবে না। এরূপ যারা করে তাদের জন্য পরকালের আগুন ছাড়া কিছুই নেই…….।”
সূরা আল্-ইমরানের ১০৪ নং আয়াতে বিশ্ব জাহানের মালিক আল্লাহ্ রাব্বুল আল-আমিন এরশাদ করেন, “তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক অবশ্যই থাকতে হবে, যারা মানুষকে কল্যান ও মঙ্গলের দিকে ডাকবে; ন্যায় ও সৎ কাজের আদেশ-নির্দেশ দেবে এবং অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে বিরত রাখবে। যারা এ কাজ করবে তারাই কৃতকার্য হবে।” সূরা ইউসুফের ৪০ নং আয়াতে আল্লাহ্ তা’য়ালা তাঁর সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে এরশাদ করেছেন, “হুকুম দেয়ার চূড়ান্ত অধিকার ও সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহ্র জন্য। তিনি ফরমান দিয়েছেন যে, “তোমরা তাঁর জন্য আর কারোরই দাসত্ব, অধীনতা ও আনুগত্য স্বীকার করবে না। আল্লাহ্র সার্বভৌমত্ব ও দাসত্বভিত্তিক দ্বীন-ই দৃঢ় সরল কিন্তু লোকদের অনেকই তা জানে না।” মানুষ জাতিকে সৃষ্টি করার ব্যাপারে মহান আল্লাহ্ তা’য়ালা সূরা যারিয়াতের ৫৬ নং আয়াতে এরশাদ করেছেন, “জ্বীন ও মানবজাতিকে আমি কেবল এ উদ্দেশ্যেই সৃষ্টি কিেছ যে, তারা শুধু আমারই এবাদত করবে।”
বিশ্ব যখন ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত, তখন বিশ্ব জাহানের মালিক আরব জাহানের মক্কা নগরীতে এক জীর্ন কুটিরে প্রেরণ করলেন বিশ্ব জাহানের পথপ্রদর্শক হিসেবে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে। তিনি যখন সত্য কথা বলতে শুরু করলেন, তখন তাঁর প্রতি কায়েমী স্বার্থবাদীরা তাঁর কথা মেনে নিতে পারেনি বরং তাঁর প্রতি কট্টরপন্থীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল……কিন্তু শত বাধা-বিপত্তি, প্রলোভন, জীবননাশের হুমকি এবং রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে তিনি তাঁর সত্য প্রচার থেকে সামান্যটুকুও পিছপা হননি। তিনি তাঁর চারপাশে বসবাসকারী মানুষজনের কাছে প্রচার করলেন, “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্……।”
এ কথা শুনে মিথ্যা ও মহান আল্লাহ্র সাথে বিশ্বাসঘাতকরা তাঁকে বিভিন্নভাবে অপমান, অপদস্ত করা থেকে শুরু করে এমন কোন অপকর্ম নেই, যা তারা করেনি কিন্তু তিনি সত্য প্রচার থেকে সামান্যতমও পিছপা হননি বরং তিনি আরো বেশি উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে সম্মুখপানে অগ্রসর হয়েছেন। আল্লাহ্র প্রিয় বার্তাবাহক হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যখন এ ধরণের সত্য প্রচার করতে শুরু করেন, তখন তাঁর পাশে মাত্র হাতেগোনা কয়েকজন ব্যাক্তি ছিলেন। সত্য প্রচার করতে গিয়ে মহান আল্লাহ্র নির্দেশে তাঁর প্রিয় মাতৃভূমি মক্কা হতে ইয়াসরিবে হিযরত করতে হয়। অল্প সংখ্যক সাহাবী নিয়ে মুহাম্মদ (সাঃ) দুষমনদের বিরুদ্ধে অংশ নেন। প্রায় সব যুদ্ধেই তিনি জয় লাভ করেন। একটি মাত্র যুদ্ধে তাঁর বাহিনীকে পরাজয়ের সম্মুখীন হতে হয় এবং তা ছিল শিক্ষা নেওয়ার জন্য। এ যুদ্ধে আল্লাহ্র নবী (সাঃ) তাঁর বাহিনীকে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তা থেকে তাঁরা সামান্যটুকু বিচ্যুত হয়েছিলেন বলেই পরাজয়ের গ্লানি ভোগ করতে হয়েছিল। যুদ্ধের শেষে প্রিয় নবী (সাঃ) এর বাহিনী জয়লাভ করে এবং মোটামুটি ক্ষতিগ্রস্থ হতে হয়।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সবক’টি যুদ্ধেই মহান রাব্বুল আল-আমিন তাঁর ফেরেস্তা দ্বারা প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহযোগিতা করেছিলেন। অনেকগুলো যুদ্ধ বিগ্রহের পরে আল্লাহ্র নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর প্রিয় মাতৃভূমি মক্কা নগরীতে বিজয়ের বেশে প্রবেশ করেন এবং তাঁর সাথে যারা শত অত্যাচার-নির্যাতনে অংশ নিয়েছিল, তাদেরকে তিনি নির্দ্বিধায় ক্ষমা করে দেন। তাঁর এ ধরণের ক্ষমা ও আদর্শের কাছে সকল অন্যায়-অবিচার ও অধর্ম পরাজিত হয়ে সাম্যের সমাজব্যবস্থা কায়েম হয়। তিনি ইসলামী সমাজব্যবস্থা কায়েম করে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দেন। তাঁর আদর্শের কাছে দলে-দলে বিধর্মীরা আত্মসমর্পন করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে শান্তির সুধা পান করে সত্যিকারের মানুষে পরিণত হয়।
বড়ই দুর্ভাগ্য আল্লাহ্র প্রিয় রাসূল শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মক্কা বিজয়ের পর বেশী দিন বেঁচে ছিলেন না। তাঁর তিরোধানের পর তাঁর প্রিয় সাহাবী হযরত আবু বকর (রাঃ), হযরত ওমর (রাঃ), হযরত ওসমান (রাঃ) এবং হযরত আলী (রাঃ) খেলাফায়ে রাশেদিনের কর্তৃত্ব গ্রহণ করে প্রায় সমগ্র বিশ্ববাসীকে ইসলামের জয়যাত্রা সম্প্রসারিত করতে সক্ষম হন। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) জীবদ্দশায় তাঁর নির্দেশে বিভিন্ন সাহাবীগণ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইসলাম প্রচারের জন্য গমন করেন। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন, যুগে-যুগে মানুষকে হেদায়েত করার জন্য আল্লাহ্ তা’য়ালা নবী ও রাসূল প্রেরণ করেন এবং তারা তাঁদের কওমের মাঝে তাঁদের কথা বা আল্লাহ্র বাণী প্রচার করেন কিন্তু শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বিশ্ববাসীর নবী ও রাসূল হিসেবে প্রেরিত হন। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ্পাক পবিত্র র্কুআনুল করীমে এরশাদ করেন, “প্রথমদিকে সমস্ত মানুষই এক ও অভিন্ন পন্থায় বা একই দ্বীনের অনুসারী ছিল। তখন আল্লাহ্ নবীগণকে পাঠাতে শুরু করেন। তারা সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারী ছিল এবং তাদের সঙ্গে পরম সত্যসহকারে কিতাবও নাজিল করেন। যেন সত্য সম্পর্কে লোকদের মধ্যে সৃষ্ট মতপার্থক্যের ব্যাপারে চূড়ান্ত ফয়সালা দিতে পারে।” (সূরা বাকারাহ্, আয়াত-২১৩)। প্রত্যেক জাতির জন্য মহান সৃষ্টিকর্তা নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন। এ সম্পর্কে সূরা রা’আদ এর ৭ নং আয়াতে মহান রাব্বুল আল্-আমিন এরশাদ করেন,“যারা অস্বীকার করে তারা বলে, তার মালিকের পক্ষ থেকে কোন নিদর্শন কেন নাজিল হয়না? তুমিতো হচ্ছো একজন সতর্ককারী! আর প্রত্যেক জাতির জন্যই একজন পথপ্রদর্শক রয়েছে।” এ সম্পর্কে সূরা ইউনুসের ৭ নং আয়াতে আল্লাহ্ রাব্বুল আল-আমিন এরশাদ করেন,“প্রত্যেক উম্মাতের জন্য একজন রাসূল রয়েছে।” সূরা ফাত্বির এর ২৪ নং আয়াতে আল্লাহ্ তা’য়ালা বলেন, “কোন উম্মাতই এমন অতিবাহিত হয়নি, যাদের নিকট কোন না কোন সতর্ককারী আসেনি।” এ সব নবী-রাসূলগণের প্রেরণের সাথে সাথে হেদায়েতের জন্য আসমানী কিতাবও প্রেরণ করা হয়েছে। এ সম্পর্কে মহান রাব্বুল আল-আমিন সূরা রা’আদ এর ৩৮ নং আয়াতে এরশাদ করেন, “প্রত্যেক যুগের জন্য একখানা কিতাব রয়েছে।” সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্ তা’য়ালা কোন জনপদ বা জাতিকে ধ্বংস করেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের মাঝে নবী-রাসূল না এসেছেন। এ সম্পর্কে বনী ইস্রাইলের ১৫ নং আয়াতে মহান রাব্বুুল আল-আমিন এরশাদ করেন, “আযাব দেই না, যতক্ষণ পর্যন্ত একজন বার্তাবাহক-রাসূল না পাঠাই।”
প্রেরিত সকল নবীদের প্রতি মহান রাব্বুুল আল-আমিন পবিত্র ধর্মগ্রন্থ প্রেরণ করেন, যেমন : হযরত দাউদ (আঃ) এর ওপর যাবুর, হযরত মুসা (আঃ) এর ওপর তাওরাত, হযরত ঈসা (আঃ) এর ওপর ইঞ্জিল এবং সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (আঃ) এর ওপর আল্-র্কুআন এবং পবিত্র র্কুআন হচ্ছে সমগ্র মানবজাতির হেদায়েত ও নেয়ামত স্বরূপ। পবিত্র র্কুআন ও শেষ নবী (সাঃ) কোন জাতি বা সম্প্রদায়ের জন্য নয়, সমগ্র কুল-মাখলুকাত এর জন্য। তাছাড়া পূর্বের সব ধর্মীয় গ্রন্থে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর আগমণ বার্তার নির্দেশনা রয়েছে। বিশ্ববাসীর উচিৎ আল্লাহ্র নির্দেশনা এবং রাসূল (সাঃ) উপদেশাবলী অনুযায়ী জীবন-যাপন করা। আগেই বলেছি, পবিত্র আল্-র্কুআন এবং রাসূল (সাঃ) কেবলমাত্র কোন কওমের জন্য নয়, সমগ্র কুল-মাখলুকাতের জন্য।
আজ বিশ্বব্যাপী নারীর স্বাধীনতার নামে অন্য ধর্মাবলম্বী নারীদের মতো মুসলিম নারীদেরকে ঘরের বাহিরে নিয়ে আসছে। এ সব করছে এনজিও নামধারী বেশ কিছু সংগঠন। এ সব এনজিওদের অর্থ সরবরাহ করছে ইহুদী, খৃষ্টান ও নাসারারা। তারা বলছে, নারীদের অধিকার দিতে হবে এবং এ কথা বলে তারা নারীদের পর্দাহীনতার মতো জঘন্য কাজ করতে সক্ষম হয়েছে। অথচ পবিত্র র্কুআনে নারীদের পর্দায় থাকতে বলা হয়েছে। পর্দা সম্পর্কে সূরা আহ্যাব এর ৫৯ নং আয়াতে আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন, “হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও বিশ্বাসী স্ত্রী নারীগণকে বলো, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের ওপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে; ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ্ চরম ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।” পর্দা সম্পর্কে সূরা আহ্যাব এর ৫৩ নং আয়াতে আল্লাহ্ বলেন, “তোমরা তাদের নিকট হতে কিছু চাইলে, পর্দার অন্তরাল হতে চাও। এ বিধান তোমাদের এবং তাদের হৃদয়ের জন্য অধিকতর পবিত্র।” পর্দা সম্পর্কে সূরা নূর এর ৩১ নং আয়াতে বলা হয়েছে, “সাধারণতঃ যা প্রকাশ হয়েছে থাকে, তাছাড়া তারা যেন তাদের অন্যান্য সৌন্দর্য্য প্রকাশ না করে।” সূরা আ’রাফ এর ২৬ নং আয়াতে আল্লাহ্ তা’য়ালা এরশাদ করেন, “হে আদম সন্তান! তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকার ও বেশভূশার জন্য আমি তোমাদের জন্য পরিচ্ছদ অবতীর্ণ করেছি। আর সংযমশীলতার পরিচ্ছদই সর্বোৎকৃষ্ট।”
পর্দা সম্পর্কে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন, “তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ মেয়ে তারা, যারা বেপর্দা ও অহংকারী। তারা কপট নারী, তাদের মধ্য হতে লাল রঙের ঠোট ও পা বিশিষ্ট কাকের মতো (বিরল) সংখ্যক মেয়ে বেহেস্তে যাবে।” মহানবী (সাঃ) বলেন, “মেয়ে মানুষ সর্বটাই লজ্জাস্থান। আর সে যখন বের হয়, তখন শয়তান তাকে পুরুষের দৃষ্টিতে সুশোভন করে তোলে।” (তিরমিযী ও মিশ্কাত শরীফ)। নারীদেরকে সুগন্ধী ব্যবহার করে পুরুষদের সামনে যেতে কঠোরভাবে নিষেধ রয়েছে।
হযরত আব্দুল্লাহ্ ইব্নে ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) একবার খুতবায় বলেন, “হে মহাজিরীন! পাঁচটি অভ্যাস এমন রয়েছে যার সম্পর্কে আমি আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করছি, যেন তা তোমাদের মাঝে সৃষ্টি না হয়ে যায়। ১. যখন কোন জাতির মাঝে নিলর্জ্জতা ও অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন তাদের ওপর প্লেগ, বিপদ-আপদ ও নতুন সব রোগের প্রাদুর্ভাব হয়, যা তাদের বাপ-দাদারাও জীবনে শুনেনি। ২. যখন কোন সম্প্রদায়ের মাঝে মাপে কম দেওয়ার প্রবনতা সৃষ্টি হয়ে যায়, তখন তাদের ওপর দুর্ভিক্ষ, কষ্ট-ক্লেশ এবং শাসকদের অত্যাচার-নির্যাতন চাপিয়ে দেওয়া হয়। ৩. যখন কোন সম্প্রদায় যাকাত প্রদান না করে, তখন অনাবৃষ্টি দেখা দেয়। ৪. যখন কোন সম্প্রদায় আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) এর সাথে কৃত অঙ্গিকার ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ্ তা’য়ালা তাদের বিরুদ্ধে অজানা শত্রু চাপিয়ে দেন, যারা তাদের মসনদ কোন বিশেষ অধিকার ছাড়াই ছিনিয়ে নেন। ৫. যখন কোন সম্প্রদায়ের ক্ষমতাধররা কিতাবুল্লাহ্ অনুযায়ী ফয়সালা না করে এবং আল্লাহ্ তা’য়ালার নাজিলকৃত আহ্কাম তাদের হৃদয়ে স্পর্শ না করে, তখন আল্লাহ্ তা’য়ালা তাদের পরস্পরের মাঝে ঘৃনা-বিদ্বেষ, ঝগড়া-বিবাদ সৃষ্টি করে দেন। -(ইব্নে মাঝাহ্ ও বায়হাকী)।
মহিলাদের বেপর্দা সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেছেন,“ দু’শ্রেণীর জাহান্নামবাসী যাদের মতো আমি আর দেখেনি। এক শ্রেণীর লোক যারা গাভীর লেজের মতো চাবুক হাতে নিয়ে লোকদের পিটায়, আর এক শ্রেণীর মহিলা যারা বস্ত্র পরিহিতা, অথচ উলঙ্গিনী, নিজেরা অপরের দিকে আকৃষ্টা, অপরকে ও নিজেদের দিকে আকর্ষণ করে এবং তাদের মাথাগুলো এমনভাবে উঁচু করে ও হেলাদুলা করে, যেমন : উঠের চমক। এ শ্রেণীর মহিলারা কোন দিন জান্নাতে প্রবেশ করবে না, এমনকি জান্নাতের সুবাতাসও পাবে না। আর জান্নাতের সুবাস পাওয়া বহুদূর থেকে।” (-মুসলিম শরীফ)। নবী (সাঃ) আরো বলেছেন, “আমার পরবর্তীতে পুরুষের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর ফিতনা রেখে গেলাম নারীদেরকে।” (-বুখারী ও মুসলিম শরীফ)।
উপসংহারে বলবো, যারা নারী অধিকার নিয়ে বেশ জোরেসোরে প্রচার চালাচ্ছেন, তারা দয়া করে পবিত্র র্কুআন ও হাদিস সম্পর্কে একটু পড়াশোনা করে নেবেন এবং তাতেই পেয়ে যাবেন আসল সমাধান। অনুরোধ করছি ইহুদী, খৃষ্টান ও নাসারাদের খপ্পরে পড়ে ঈমান নষ্ট করবেন না…….। (আল্লাহু আমিন)।
লেখক : মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন, সাংবাদিক ও কলাম লেখক
ফোন # ০১৭১০-৮৮৩৪১৩, ই-মেইল :jahangirhossain8431@gmail.com