অশালীনতার ছোবল দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিলে

0
513

সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে একটু প্রশান্তি ও বিনোদনের খোঁজে রাজধানীর হাতিরঝিলে ছুটে আসে নানা ধরনের মানুষ। সকালে শরীর চর্চা, বিকেলে সাইক্লিং আর সন্ধ্যা হলে আড্ডাসহ সারাবেলাই মুখর থাকে হাতিরঝিল এলাকা। সন্ধার পর পরই দেখা যায় তরুণ তরণীর মিলন মেলা। ব্রিজের রোলিংয়ে হেলান দিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা দিতে দেখা যায় জোড়ায় জোড়া কপোত কপোতিদের। আবার ঝিলের নিচের অংশে ঘাসের উপরও বসে থাকতে দেখা যায় তাদেরকে।

আর তাই নগরবাসীর অনেকে এখন হাতিরঝিলকে আখ্যা দিয়েছেন ‘ডেটিং স্পট’ হিসেবে। দিনের শুরু থেকে সন্ধ্যা এমনকি রাত ১১টা পর্যন্ত যারা চলাচল করেন তাদের চোখেই পড়ে কপোত-কপোতীদের অশালীন এ মিলনমেলা। গভীর রাতেও কোনো কোনো প্রেমিকযুগল হাতিরঝিলকে বেছে নেন প্রেমকুঞ্জ হিসাবে। তরুণ তরুণীদের এধরনের অবস্থানকে অসামাজিক এবং অশালীন হিসেবে দেখছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। সন্ধার পরে ঘুরতে আসা কামালউদ্দীন নামে এক স্থানীয় এলাকাবাসী ইনকিলাবকে বলেন, রাতের বেলা এভাবে তরুণ তরণীদের অবাধ মেলামেশা খুবই আপত্তিকর ও অসামাজিক। এভাবে আমাদের হাতিঝিলের দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এধরনের নোংরামি আমাদের সমাজে কাম্য নয়। এধরনের পরিবেশ যুব সমাজকে নষ্ট করছে বলে অভিযোগ করছেন অনেকে। কলিমুল্লাহ নামে আরেকজন বলেন, এভাবেই আমাদের যুব সমাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন অনেক তরুণ-তরুণী মটর সাইকেলে করে ব্রিজের উপরে আপত্তিকর অবস্থায় বসে থাকে এটা নিঃশন্দেহে অসামাজিক কাজ। এভাবে তরুণ তরুণীদের অবস্থান করাটা মোটেই সামাজিক না। এ ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সময় তখন রাত ৯টা। হাতিরঝিলের পশ্চিম পারের অভার ব্রিজের উপরে অসংখ্য তরুণ তরুণী একজন আরেকজনের কাঁধে হাত দিয়ে জোড়ায় জোড়া বসে আছে। অনেকের পাশেই মটরসাইকেল দাড় করানো। হালকা আলো থাকায় মটরসাইকেল আড়াল করে বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ কাজ করতে দেখা যায় তাদের। এবিষয়ে দুই এক জনের সাথে কথা বলতে চাইলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে দ্রæত স্থান ত্যাগ করতে থাকে। এদিকে একই সময় দেখা যায় ঝিলের পারে অন্ধাকারের মধ্যে ঘাসের উপর বসে আছে জোড়া তরুণ তরুণীদেরকে। সেখানেও একই অবস্থায় একে অপরের কাঁধে হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় তাদেরকে। সকাল বেলা হাঁটতে আসা আয়শা সিদ্দিকা নামে এক মহিলা বলেন, এভাবে আমাদের ছেলেমেয়েরা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে যদি কোনো পদক্ষেপ না নেয়া হয় তবে সমাজের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। তাবে একসময় হাতিরঝিলে মাদক সেবনের অভিযোগ শোনা গেলেও এখন সেটা অনেকাংশই কমে এসেছে বলে জানালেন এলাকাবাসী। তাদের দাবি, তরুণ তরুণীদের আপত্তিকর অবস্থান রোধ করা গেলে হাতিঝিলের দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ আরও সুন্দর হয়ে উঠবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রশিদ ইনকিলাবকে বলেন, এধরনের আপত্তিকর অবস্থান ও মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের মোবাইল টিম সবসময় তৎপর। তাদেরকে খুব কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া আছে। তারা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে থাকেন। এক হাজার ৯৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ প্রকল্পটি ২০১৩ সালের ২ রা জানুয়ারী সর্বসাধারনের জন্যে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। হাতিরঝিল প্রকল্প উদ্বোধনের পর নগরবাসীর মধ্যে অনেক স্বস্তি ও প্রত্যাশা তৈরি হয়। অত্যন্ত পরিকল্পিত সড়ক ব্যবস্থা এবং দৃষ্টিনন্দন ব্রিজগুলো এ এলাকাটিকে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করে তোলে। আর সন্ধ্যার পর রঙিন বাতির ঝলকানিতে মানুষমাত্রই অভিভূত হন। স্বভাবতই রাজধানীর ভ্রমণপিপাসুদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হয় হাতিরঝিল। উন্নত বিশ্বের আদলে গড়ে তোলা এ ঝিল দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসেন সৌন্দর্যপ্রেমীরা। এখানে প্রতিদিন হাজারও মানুষ প্রাতঃভ্রমণ করেন। ইট-পাথরের নগরজীবনের ক্লান্তি দূর করতে কিংবা নির্মল বায়ুতে শ্বাস নিতে বিকালে নামে জনতার ঢল। এই প্রকল্পটি বস্তবায়ন ও তদারকি করার জন্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ‘স্পেশাল ওয়ার্কস অরগানাইজেশন’ (এসডব্লিউও) কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

5 − 2 =