যৌতুকের জন্য গৃহবধূকে নির্যাতন

0
613

নির্যাতনের পর স্ত্রীর মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে দিলো স্বামী। ঘটনাটি ঘটেছে বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভাণ্ডারবাড়ী ইউনিয়নের মাধবডাঙ্গা গ্রামে। নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূর নাম আছমা খাতুন (২৬)। সোমবার বিকালে স্থানীয়রা স্বামীর বাড়ি থেকে ওই নির্যাতিত গৃহবধূকে উদ্ধার করে। পরে তাকে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরে নির্যাতিত ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে স্বামী বকুল হোসেনকে (৩৫) ও তার ভাসুর (স্বামীর বড় ভাই) শাহ আলমের (৪৫) বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ ইতিমধ্যেই শাহ্‌ আলমকে গ্রেপ্তার করেছে। মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভাণ্ডারবাড়ী ইউনিয়নের মাধবডাঙ্গা গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে বকুল হোসেনের সঙ্গে ধুনট সদরপাড়া এলাকার ইসমাইল হোসেনের মেয়ে আছমা খাতুনের প্রায় ৮ বছর আগে বিয়ে হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে লিখন আকন্দ ও লিমন আকন্দ নামের দুই ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু গত এক বছর ধরে যৌতুক দাবি করে মাঝে-মধ্যেই আছমা খাতুনকে নির্যাতন করে আসছে স্বামী বকুল হোসেন। এ বিষয় নিয়ে একাধিকবার সালিশ বৈঠক হলেও স্বামী বকুল হোসেন আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। গত ৯ই এপ্রিল বকুল হোসেন আবারও যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূ আছমা খাতুনকে বেদম মারপিটে আহত করে। একপর্যায়ে স্বামী বকুল হোসেন তার স্ত্রীর মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে দেয়। এরপর গত সাতদিন যাবত ওই গৃহবধূকে ঘরে আটকে রেখে পাশবিক নির্যাতন চালায় পাষণ্ড বকুল হোসেন। এদিকে মেয়ের নির্যাতনের খবর শুনে তার পিতা ইসমাইল হোসেন দেখা করতে গেলে তাকেও দেখা করতে দেয়নি বকুল। সোমবার বিকালে স্থানীয় এলাকাবাসী স্বামীর বাড়ি থেকে নির্যাতিত গৃহবধূ আছমা খাতুনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। এদিকে সংবাদ পেয়ে রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে তার ভাসুর শাহ-আলমকে গ্রেপ্তার করলেও স্বামী বকুল হোসেন পালিয়ে যায়। স্বামীর নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে গৃহবধূ আছমা খাতুন জানান, কারণে-অকারণে দীর্ঘদিন ধরে স্বামী বকুল হোসেন তাকে নির্যাতন করে আসছে। গত এক সপ্তাহ আগে নির্যাতনের পর জোরপূর্বক তার মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে দিয়েছে। বাড়িতে কাউকে খবরও পাঠাতে দেয়নি। এমনকি তার পরিবারের সঙ্গেও দেখা করতে দেয়নি। মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার পর ঘরে আটকে রেখে সাতদিন ধরে মারধরসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতন করেছে। স্বামীর নির্যাতনের চিহ্ন পুরো শরীরেই রয়েছে জানিয়ে তিনি একপর্যায়ে কেঁদে ফেলেন। আছমার পিতা ইসমাইল হোসেন বলেন, স্থানীয় এলাকাবাসী আমার মেয়েকে উদ্ধার করেছে। তার মেয়ে এখন ধুনট হাসপাতালে ভর্তি আছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে ওই গৃহধূর স্বামী নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলে, স্ত্রী আছমা খাতুনের মাথায় খুসকি হওয়ায় তার চুল কেটে ন্যাড়া করে দেয়া হয়েছে। তাকে ঘরে আটকে রেখে কোনো নির্যাতন করা হয়নি। ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খান মোহাম্মদ এরফান বলেন, সংবাদ পেয়ে রাতেই অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে এবং মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

five + 2 =