প্রবীণনিবাসের আড়ালে চলছে নানা ধরনের প্রতারণা

0
666

রূপগঞ্জে প্রবীণনিবাসের আড়ালে প্রবীণদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রের পাশে চনপাড়া চত্বরে গড়ে তোলা হয়েছে একটি প্রবীণনিবাস। দেশবাংলা কল্যাণ পরিষদ (ডিবিকেপি) নামের একটি সংস্থার অর্থায়নে বৃদ্ধাশ্রমটি গড়ে তোলা হয়েছে। তবে এর  আড়ালে চলছে নানা ধরনের প্রতারণা। ১১ তলার ভবনটি প্রবীণনিবাসের জন্য কাগজে-কলমে দেখানো হলেও স্বল্পসংখ্যক ফ্ল্যাটে বৃদ্ধাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।

বিনা পয়সায় দেখভাল করার কথা থাকলেও উল্টো তাঁদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। বাকি ফ্ল্যাটগুলো মাসিক চুক্তিতে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। বৃদ্ধাশ্রমের নামে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা থেকে আসা অনুদানের টাকা যাচ্ছে সংস্থার চেয়ারম্যান আব্দুল খালেকসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালীর পকেটে। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি প্রতিনিধিদল এ প্রবীণনিবাস পরিদর্শন করেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুস্থদের পুনর্বাসন ও সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন বৃদ্ধ মা-বাবাদের আশ্রয়-প্রতিপালন করতে নিবাসটি গড়ে তোলা হয়েছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনে বিদেশি অনুদানে চনপাড়া মোড়ের বটতলার পাশে একটি ১১ তলা, দুটি ছয়তলা ও  একটি সাততলা ভবন নির্মাণ করা হয়। একটি ভবনে দেশবাংলা কল্যাণ পরিষদ (ডিবিকেপি) নামে হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়েছে। হাসপাতালটি হঠাৎ বন্ধ হয় আবার হঠাৎ চালু হয়। হাসপাতাল ছাড়া তিনটি ভবনে প্রবীণনিবাস গড়ে তোলার কথা রয়েছে। তিনটি ভবনে এক হাজার প্রবীণের বসবাসের সুযোগ রয়েছে। সংস্থার চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক প্রবীণনিবাসের নামে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা থেকে আসা অনুদানের টাকা আত্মসাৎ করছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া বৃদ্ধাশ্রমের নামে ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। বৃদ্ধাশ্রমে থাকা বেশ কয়েকজন দীর্ঘদিন ধরে নাম-পরিচয় গোপন করে আসছেন। নাম-পরিচয় গোপন রাখা লোকজনকে সন্দেহ করছে এলাকাবাসী। বৃদ্ধাশ্রমের নামে বিভিন্ন স্থান থেকে চাঁদা আদায় করারও অভিযোগ রয়েছে সংস্থাটির বিরুদ্ধে। অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, ১১ তলা ভবনে ৪০টি কক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি কক্ষে প্রবীণরা রয়েছেন। বাকিগুলো মাসিক তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা চুক্তি ভিক্তিতে ভাড়া দেওয়া আছে। সে হিসাবে মাসে প্রায় দেড় লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। তা ছাড়া প্রবীণদের জন্য সরকারি-বেসরকারি সংস্থা থেকে অনুদান এলেও তা তাঁদের কাছ পর্যন্ত পৌঁছে না। আব্দুল খালেকের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, যেসব প্রবীণ ব্যক্তি জায়গাজমি কিংবা অঢেল টাকা-পয়সার মালিক, শুধু তাঁদেরই প্রবীণনিবাসে আশ্রয় দেওয়া হয়। পরে তাঁদের সম্পদ প্রতারণা করে হাতিয়ে নেওয়া হয়। অনেক প্রবীণ এ সংস্থার কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। ডেন্টাল চিকিৎসক মেহেদী হাসান, বাবুল মিয়া, সুরুজ মিয়াসহ বেশ কয়েকজন ভাড়াটিয়ার সঙ্গে কথা হলে তারা জানায়, ১১ তলাবিশিষ্ট বহুতল ভবনটি বৃদ্ধাশ্রমের জন্য হলেও এখানে প্রবীণদের সংখ্যা কম। ভাড়াটিয়ার সংখ্যাই বেশি। পাঁচ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া দিয়ে বসবাস করে লোকজন। তবে ফ্ল্যাট বাসা হওয়ায় অন্য ফ্ল্যাটে কী হচ্ছে, তা তাদের জানার উপায় নেই। এ বিষয়ে কথা হয় ৩০১ নম্বর ফ্ল্যাটের ১ নম্বর কক্ষের প্রবীণ ভাড়াটিয়া কেরানীগঞ্জ এলাকার এ কে এম মাহাবুব আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গত দুই বছর আগে আমি এখানে আসি। আমার একটা সম্পদ ছিল। এটা জানত খালেক। তাই বিনা পয়সায় আমাকে থাকতে দেয়। পরে জমির বায়না পাওয়া ১৬ লাখ টাকা কৌশলে হাতিয়ে নেয় খালেক। এখন টাকা চাইতে গেলেই টালবাহনা করছে। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ আদালত ও রূপগঞ্জ থানায় অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা পাইনি।’ কথা হয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি একটি এনজিওতে চাকরি করতাম। আমার একমাত্র মেয়ে দেশের বাইরে থাকে। আমার কাছ থেকে প্রতারক আব্দুল খালেক নানা ছলচাতুরী করে ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এখন টাকা চাইতে গেলেই নানা ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছে। তাই ভয়ে ভয়ে দিন পার করছি।’ এ বিষয়ে দেশবাংলা কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক বলেন, ‘বৃদ্ধাশ্রম ও আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সঠিক নয়। প্রবীণ মাহাবুব ও তাঁর সহযোগীরা আমার বদনাম ছড়াতে এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।’ রূপগঞ্জ থানার ওসি মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সোলায়মান মিয়া বলেন, ‘দেশবাংলা কল্যাণ পরিষদের প্রবীণনিবাস আমাদের এখতিয়ারে নেই। মন্ত্রণালয়ের লোকজন তদারকি করেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা এলে আমরা সেখানে যাই।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল ফাতে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো প্রবীণ আমার কাছে অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

two + 10 =