ন্যাশনাল ক্রাইম জার্নালিষ্ট এন্ড রাইটস ফাউন্ডেশনের আলোচনা সভা

0
586

জিএমমিজানুর রহমান মিজান, যশোর ব্যুরো॥ গত ১৮ মে ২০১৮ ইং রোজ শনিবার বিকাল ৫ ঘটিকার সময় ন্যাশনাল ক্রাইম জার্নালিষ্ট এন্ড ফাউন্ডেশন এর বিভাগীয় কার্যালয়ে এক প্রতিনিধি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক জনাব জিএম মিজানুর রহমান মিজান।
উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি সাংবাদিকতা প্রসঙ্গে বলেন যারা ক্রাইম সাংবাদিক তাদের সাংবাদিকতা একটি বড়ো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোবাবেলা করতে হয়। অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের কারন একটি ফিল শুরু সাংবাদিকতা প্রাথমিক পর্যায়েই। এ ধরনের প্রতিবেদনের শুরু সম্পর্কে।

 

অনুসন্ধান মূলক রিপোটিং তেমন বৃহৎ কিছু অর্জন করতে না পারলেও বিশ শতকের মাঝামাঝির দিকে এসে তা অর্জন করে বিরাট সাফল্য। সাংবাদিকতার ইতিহাস অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তাঁর লেখনির মাধ্যমে অনেক রাজা, রাণী, প্রধানমন্ত্রী, রাজনৈতিক নেতা ও আমলাদের জীবন অতিষ্ট করে তুলেছেন, এমন উদাহরণ অনেক। তাছাড়া এমন অনেক ঘটনা রয়েছে যে, অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার ফলে অনেক কালো আইন বাতিল হয়ে গেছে, নতুন আইন সৃষ্টি হয়েছে। অন্যায়, অত্যাচার, ঘুষ কেলেঙ্কারী, অসুদপায় অবলম্বনের ঘটনাকে তুলে ধরে অনুসন্ধানী প্রতিবেদকরা বিশ্বের অনেক রথি-মতাহরথির পতন ত্বরান্বিত করেছেন। এদের মধ্যে মার্কিন রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্্রন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী তানাকা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী উল্লেখযোগ্য।
অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের শুরু সাংবাদিকতার প্রাথমিক পর্যায়েই। এ ধরনের প্রতিবেদনের শুরু সম্পর্কে ডরষষরধস এধরহবং তার ওহাবংঃরমধঃরাব জবঢ়ড়ৎঃরহম ভড়ৎ ঢ়ৎরহঃ ধহফ নৎড়ধফপধংঃ’গ্রন্থে বলেন, কেউ মনে করেন বাইবেলের নিউ স্টেটমেন্টই হচ্ছে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। কারণ এটি ছিল একটি ‘ঃবধস ৎবঢ়ড়ৎঃরহম বভভড়ৎঃ’ এর মতোই। তাছাড়া সাহিত্যিক চার্লস ডিকেন্সের অনেক রচনাতেও অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ছাপ লক্ষ করা যায়। কারণ তার এ কাহিনীগুলোতে বিভিন্ন চরিত্রের আতœপ্রকাশ অস্পষ্ট। তারা কখনো তাদের প্রকৃত নাম প্রকাশ করেনি। আজকের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মতো এ কাহিনী গুলোই সংবাদপত্রে প্রথম সিরিজ আকারে প্রকাতি হয়। তবে আধুনিককালে এর যাত্রা শুরু হয় ১৮৩৬ সালে, যখন ঞযব ঘবি ণড়ৎশ ঐবৎধষফ প্রত্রিকা অনুসন্ধানের মাধ্যমে পর্যাপ্ত তথ্য পরিবেশন করে খুনের দায়ে অভিযুক্ত একজন আসামির প্রাণ বাঁচায়। এজন্যই সানফ্রান্সিসকো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক লিওনার্ড সেলার বলেন, “গোপন তথ্যের পেছনে ছোটাই অনুসন্ধানমূলক রিপোর্টারের কাজ।”
শুরুতে অনুসন্ধানমূলক রিপোটিং তেমন বৃহৎ কিছু অর্জন করতে না পারলেও বিশ শতকের মাঝামাঝির দিকে এসে তা অর্জন করে বিরাট সাফল্য। যেমন : ১৯৫৮-এর ডিসেম্বর মাসে ওয়ালস্ট্রীট জার্নালের পুলিৎজার পুরষ্কার বিজয়ী রিপোর্টার এড কনি কিউবার রাজধানী হাভানা থেকে যে রিপোর্টটি পাঠালেন তাতে কিউবার তৎকালীন অর্থনীতির আয়নায় ধরা পড়লো সে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। এতেই বিশ্বমানবের চোখের সামনে ফুটে উঠলো কিউবার ভবিষ্যৎ। তৎকালীন সময়ে কিউবার বাতিস্তা সরকারের বিরুদ্ধে ফিদেল ক্যাস্ট্রোর নেতৃত্বাধীন বিপ্লবী বাহিনী মরণপণ যুদ্ধ করেছিল। আর বাইরের দেশের লোকদের কাছে কিউবার কোন সঠিক খবরই যাচ্ছিল না। কনির অনুসন্ধানী রিপোর্টটি প্রকাশিত হবার দু’স্পাহ পরেই কিউবার স্বৈরাচারী বাতিস্তা সরকারের পতন ঘটে। ফিদেল ক্যাস্ট্রোর বাহিনী ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়।
আরেকটি বিখ্যাত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হচ্ছে উৎ. উধহরধষ ঊষষংনবৎম- এর চধহঃধমড়হ চধঢ়বৎং-এর দুর্বলতা সংক্রান্ত প্রতিবেদন। চধহঃধমড়হ চধঢ়বৎং বিতর্ক শুরু হয় যখন ঘবি ণড়ৎশ ঞরসবং ভিয়েতনাম যুদ্ধের উৎপত্তি সংক্রান্ত পেন্টাগন সেই গোপন দলিল থেকে দেখা যায়, জনসন প্রশাসক ঞড়হশরহ ঘটনার ৫ মাস আগেই উত্তর ভিয়েতনাম আক্রমণের সিন্ধান্ত নেন।
সেই রিপোর্টটি প্রকাশিত হওয়ায় ঊষষংনবৎম ও তার বন্ধু জঁংংড় এর বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি, চুরি ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। আদালত এ মামলা বাতিল করে দেয় এবং সত্য প্রকাশে সংবাদপত্রের অধিকার উর্দ্ধে তুলে ধরে। পরবর্তীতে ভিয়েতনাম যুদ্ধ সংক্রান্ত অনেক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা হয়। সাংবাদিক সেম্যুর হার্শ দক্ষিণ ভিয়েতনামে মাইলাই হত্যাকান্ড সংক্রান্ত প্রতিবেদন রচনা করে কম্পোডিয়ার পলটন সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতি জনমত গড়ে তুলেছিলেন।
পরবর্তীতে ভিয়েতনাম যুদ্ধ সংক্রান্ত অনেক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা হয়। সাংবাদিক সেম্যুর হার্শ দক্ষিণ ভিয়েতনামে মাইলাই হত্যাকান্ড সংক্রান্ত প্রতিবেদন রচনা করে কম্বোডিয়ার পলপট সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তুলেছিলেন।
অনুসন্ধানমূলক রিপোটিংয়ের পরবর্তী সাফল্য আরো চমকপ্রদ। বিগত শতাব্দীর সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হচ্ছে ‘রয়াটার স্ক্যান্ডাল’। এই প্রতিবেদনটি করেছিলেন ডধংযরহমঃড়হ চড়ংঃ-এর তরুণ রিপোর্টার ইড়ন ডড়ড়ফধৎফ ঈধৎষ ও ইবৎহংঃবরহ.
ওয়াটার গেট কেলেঙ্কারির ত্যথ ফাঁস শুরু হয়েছিল সিঁধেল চুরির ক্লু ধরে। ১৯৭৪ সালে আমেরিকান ডেমোক্রেটিক পার্টির কনভেনশন চলাকালে রিপাবলিকান পার্টির কয়েকজন সদস্য কনভেনশন হলে ইলেক্ট্রিক আড়ি পাতার যন্ত্র স্থাপন করতে গিয়ে ধরা পড়েছিল। প্রাথমিক প্রতিবেদনে একটি সাধারণ সিঁধেল চুরি বলে মনে হলেও উডওয়ার্ড ও বার্নস্টেইন “ভিন্ন” কিছুর ‘সন্দেহ’ করেই শুরু করেছিলেন অনুসন্ধান। এর ফলেই উন্মোচিত হয় বিশ্বকাঁপানো ওয়াটার গেট কেলেঙ্কারি। তারা এমন সাংববিধানিক সংকট সৃষ্টি করে। এতে নিক্্রন প্রশাসনের অনেকে জেনে যান। পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট নিক্্রন পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এটি আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনাগুলোর অন্যতম। ইড়ন ডড়ড়ফধৎফ ও ঈধৎষ ইবৎহংঃবরহ তাদের অষষ ঃযব চৎবংবহ’ং গবহ গ্রন্থে পরবর্তীতে এ সংক্রান্ত ঘটনা বিবৃত করেছেন। এমনি করেই পরবর্তীকালে অনুসন্ধানী রিপোটিং এ ফলে ধীরে ধীরে উদঘাটিত হতে থাকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শাসকশ্রেনীর শাসকশ্রেণীর অপকীর্তি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘লকহিড স্ক্যান্ডল’, যেখানে প্রকাশিত হয়, লকহিড বিমান কোম্পানীর কাছ থেকে জাপানি প্রধানমন্ত্রী কাকুই তানাকার ঘুষ গ্রহণের কাহিনী। ফলশ্রুতিতে তানাকা পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এরপর রয়েছে ‘বোফার্স অন্ত্র কেলেঙ্কারি। এতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী রাজিব গান্ধীর বিরুদ্ধে সুইডিশ অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানী বোফর্সের কাছ থেকে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ কর হয়েছে, যা পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেসের পতন ঘটায়।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

19 + 15 =