একবার শুরু করার পর তারা আর বেরিয়ে আসতে পারছে না

0
447

দেশে এখন প্রায় ৭০ লক্ষ মাদকাসক্ত রয়েছে বলে গবেষকরা বলছেন। যাদের বেশিরভাগই ইয়াবা জাতীয় মাদকে আসক্ত। সম্প্রতি মাদক দমনে দেশব্যাপী বড় ধরনের অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দুই সপ্তাহেরও কিছু বেশি সময় ধরে চলা এই অভিযানে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে অন্তত ২৩ জন। ঢাকায় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র মুক্তি’র প্রধান কনসালটেন্ট ড. আলী আসকার কোরেশী বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি, দিন যতই যাচ্ছে, মাদকাসক্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

এতটাই বেড়েছে যে, সমাজের একেবারে ১০-১২ বছরের বাচ্চা থেকে শুরু করে ৭০  বছরের বৃদ্ধ পর্যন্ত এর সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে। সমাজের গরিব থেকে শুরু করে একদম উচ্চ শ্রেণিসহ সকল শ্রেণির ছেলেমেয়ে এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে।’ মাদক অত্যন্ত সহজলভ্য হয়ে পড়াটাই এর জন্য বেশি দায়ী বলে মনে করেন ড. আলী আসকার। একসময় যারা নেশা করতো, তারা এখন নেশার পাশাপাশি বিক্রির সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছে। কোরেশী বলেন, ‘আগে হয়তো এটা কেনার জন্য মাদকাসক্তদের বিভিন্ন জায়গায় যেতে হতো, দূরদূরান্ত থেকে সংগ্রহ করতে হতো। কিন্তু এখন আর সেই ব্যাপার নেই। মোবাইল ফোন রয়েছে, একদম বাসায় ডেলিভারি হয়ে যাচ্ছে।’ বাংলাদেশে এখন মাদকাসক্তের সংখ্যা ফিলিপিনের চেয়েও বেশি বলে বলছেন নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এমদাদুল হক, যিনি উপমহাদেশে মাদকাসক্তির ইতিহাস নিয়ে একাধিক বই লিখেছেন। ফিলিপিনে রডরিগো দুতার্তের সরকার গত বছর মাদকের বিরুদ্ধে যে সশস্ত্র অভিযান শুরু করে তাতে এ পর্যন্ত তিন হাজার ৮০০’রও বেশি মাদকসেবী, বিক্রেতা বা পাচারকারী নিহত হয়েছে – যাকে মানবাধিকার সংগঠনগুলো ‘বিচার-বহির্ভূত হত্যা’ বলে আখ্যায়িত করেছে। এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক এমদাদুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন যে পরিস্থিতি তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং ভয়াবহ।’ বাংলাদেশেও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে পুলিশ-র‍্যাবের যে অভিযান শুরু করেছে, তাতে প্রতিদিনই ‘বন্দুকযুদ্ধে’ হতাহতের ঘটনা ঘটছে। গত দুই সপ্তাহে ‘বন্দুকযুদ্ধে’  নিহত হয়েছে অন্তত ২৩ জন, যাদের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ পর্যন্ত আটক করা হয়েছে কয়েক শ ব্যক্তিকে। কোরেশী বলছেন, ‘আমাদের কাছে এখন ইয়াবা বা মেটামফিটামিন জাতীয় মাদকাসক্তরাই বেশি আসছে। একসময় হেরোইন আসক্তরা বেশি আসতো, কিন্তু সেই প্রকোপটা এখন অনেক কম। এখন কিন্তু বেশিরভাগই ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়ছে।’ প্রতিবেশী মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা প্রবেশ করে। পরে নানা মাধ্যমে সেগুলো দেশের ভেতর ছড়িয়ে দেওয়া হয় বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন। সহজে বহনযোগ্য হওয়ার কারণে অনেকেই এই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বাংলাদেশে ২০১৭ সালে চার কোটির বেশি ইয়াবা আটক করা হয়েছে। মাদকটি এখন দেশে অন্যসব মাদককে ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। মাদকাসক্তদের চিকিৎসা করতে গিয়ে নিজের পর্যবেক্ষণ বিষয়ে কোরেশী বলেন, ‘কিছুদিন ধরে অবাক হয়ে লক্ষ্য করছি, ৩৫ বা ৪০ বছরের অনেকে মাদকাসক্ত হয়ে আমাদের কাছে চিকিৎসার জন্য আসছে, যারা মাত্র কয়েক বছর ধরে নেশা করতে শুরু করেছে। সাধারণত যে বয়সে নেশাসক্ত হয়, সেই বয়সে তারা ভালো থাকলেও এই পরিণত বয়সে এসে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে।’ কোরেশী আরো বলেন, ‘অনেক সময় আশপাশে বন্ধুদের দেখে কৌতুহলের বশে হয়তো নেশা করতে শুরু করেছে। কিন্তু একবার শুরু করার পর তারা আর বেরিয়ে আসতে পারছে না।’

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

eight + 17 =