এবছর রাজধানীতে বন্যার ভয়াবহ ঝুঁকিতে রয়েছে

0
953

চারপাশের নদীগুলো খনন এবং ভিতরের খালগুলো দখলমুক্ত এবং সংস্কার না করায় এবছর রাজধানী বন্যার ভয়াবহ ঝুঁকিতে রয়েছে। একই সাথে ঢাকার চারপাশের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের যে বেহাল দশা এ ঝুঁকির মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এবার সামান্য বৃষ্টিপাত এবং নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেই রাজধানী তলিয়ে যাবে। আবহাওয়া অধিপ্তর আগাম বন্যার সম্ভবনার কথা জানিয়েছে।

সেই সাথে চলতি মাসে প্রবল বৃষ্টিপাতের কথাও বলা হয়েছে। এমনিতে সমান্য বৃষ্টি হলে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে জমে হাঁটু পানি। কোথাও কোথাও নৌকা চলাচল করতেও দেখা যায়। এ অবস্থায় টানা কয়েকদিন বৃষ্টি হলে পানিবদ্ধতার পাশাপাশি আশপাশের নদীর পানি ঢুকে রাজধানী বন্যার কবলে পড়বে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা। বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজধানী ঢাকার পশ্চিমাঞ্চল এবং পূর্বাঞ্চল শহর রক্ষা বাঁধ রয়েছে। তবে বাঁধ নির্মাণের জন্য যে পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, তার অধিকাংশ জমিই এখনও বেদখলে আছে। আবার সংস্কারের অভাবে বাঁধের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে মাটি ধসে গেছে। ফলে এই বাঁধ রয়েছে ঝুঁকির মুখে। অন্যদিকে, রাজধানীর পূর্বাঞ্চল একেবারেই অরক্ষিত। ‘ঢাকা পূর্বাঞ্চলীয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও বাইপাস’ প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। এ অবস্থায় বুড়িগঙ্গা, তুরাগ,বালু এবং শীতলক্ষার পানি বৃদ্ধি হলে যেকোন সময় রাজধানী ঢাকা খুব সহজেই বন্যাকবলিত হয়ে পড়তে পারে বলে নগর পরিকল্পনাবিদরা আশঙ্কা করছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, ১৯৮৮ সালের বন্যায় রাজধানী ঢাকা আক্রান্ত হয়। এরপর ঢাকা জেলা রক্ষা বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। সেই উদ্যোগেই মিটফোর্ড হাসপাতালের পেছন থেকে ঢাকার পশ্চিমাঞ্চলের নবাবগঞ্জ, হাজারিবাগ, গাবতলী, মিরপুর হয়ে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ফলে ১৯৯৮, ২০০৪ ও ২০০৭ সালে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা হলেও রাজধানী ঢাকায় বন্যার পানি ঢুকতে পারেনি। তবে সংস্কারের অভাবে এ বাঁধের ১৪ কিলোমিটার জুড়ে বেশ কয়েকটি পয়েন্টে মাটি ধসে গেছে। এতে পুরো বাঁধ অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো, মাহফুজুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৫শ ২২ কোটি ৬৪ লাখ ৮৫ টাকার কাজ করেছে। সারাদেশে ৭০টি জোনের মধ্যে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, উপক‚লীয় বাঁধ , ডুবন্ত বাঁধ এবং সেচ খালের বাঁধের মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে। আসলে বরাদ্দ কম থাকার কারণে এ অধিদপ্তরে কাজ করা যাচ্ছে না। গতবছরের মতো বন্যা হলে অনেক ঝুকিতে থাকতে হবে। কারণ অনেক প্রকল্পের কাজ চলামান রয়েছে। আবার নতুন নতুন প্রকল্প নেয়া হয়েছে। সে গুলো কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছুটা ঝুঁকিতে থাকতে হবে। শুধু বেড়ি বাঁধের কারণেই নয় ঢাকার সিটির পানি বের হওয়ার জন্য সেব খাল ছিল সেগুলো আজ অস্তিত্বহীন। যে কয়টা খালের সামান্য অস্তিত্ব আছে সে গুলোও দখলে দূষনে মৃত প্রায়। ঢাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থাও এখন বেহাল অবস্থা। রাজধানী জুড়ে চলছে ড্রেনেজ সংস্কারের কাজ। তবে এগুলো সংস্কার করেও কোন লাভ হয়না। পরিবেশ দূষনের প্রধান বস্তু পলিথিনের যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে অল্প কিছুদিনের মধ্যে ড্রেনেজ ব্যবস্থা বিকল হয়ে পড়ে। এতে সামান্য বৃষ্টিতেই রাজধানী সড়কগুলো পানিতে থৈ থৈ করে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) তথ্য অনুসারে বাংলাদেশে শুধু রাজধানীতেই প্রতিদিন দুই কোটি পলিথিন জমছে। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এই পলিথিনকে ঢাকার জলাবদ্ধতার জন্যও দায়ী হিসেবে চিহ্নিত করেছে পবা। পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও পবার সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুস সোবহান বলেন, রাজধানীসহ সারা দেশে প্রায় ১২০০ কারখানায় নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরি হচ্ছে। এগুলোর বেশিরভাগই পুরান ঢাকাকেন্দ্রিক। ঢাকায় প্রতিদিন দুই কোটির বেশি পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া হয় যেগুলো পলিথিন বর্জ্য। এ বর্জ্য সামান্য বৃষ্টিতে নগরে জলাবদ্ধতার প্রকোপ বাড়িয়ে দিচ্ছে। পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন ও বাজারজাতকরণের উপর ২০০২ সালে নিষেধাজ্ঞা জারি হলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের ‘নিষ্ক্রিয়তায়’ সেই আইন কার্যকর করা যায়নি বলে অভিযোগ করেন অধিদপ্তরের সাবেক কর্মকর্তা সোবহান। ঢাকার অনেকগুলো খাল যেমন দখলে দূষনে বিলিন হয়ে পড়েছে তেমনি এর চার পাশের নদীগুলো এখন মৃত প্রায়। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষা এগুলো নিষ্প্রাণ। দখলে দূষনে এগুলো প্রবাহহীন। এ ছাড়া দখলের ফলে বালুনদী এখন প্রায় মৃত। এ সব নদী দিয়ে ঢাকার পানি প্রবাহিত হয়। এসব নদীর প্রবাহ না থাকায় রাজধানীর পানি সহজে বের হতে পারে না। ঢাকা মহানগর এলাকায় ৫৮টি খাল চিহ্নিত করেছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে ৩৭টি খালের অংশবিশেষ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ (রাজউক) তিনটি সরকারি ও সাতটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল এবং ২৪৮ জন ব্যক্তি দখল করে নিয়েছে। ফলে খালগুলোর প্রবাহ আর স্বাভাবিক নেই। জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২২টি খালের মধ্যে একমাত্র ধোলাইখালের একটা অংশ (সূত্রাপুর লোহারপুল থেকে বুড়িগঙ্গা পর্যন্ত) ও মেরাদিয়া খাল সচল আছে। বাকি সব কটি খালের জায়গায় এখন রাস্তা। প্রতিবেদনে এমনটা বলা হলেও নন্দীপাড়া খাল এখনো সচল আছে। প্রবাহ আছে কুতুবখালী খালেও। যে খালগুলো এখনো টিকে আছে সেগুলোর অধিকাংশ ময়লা-আবর্জনার চাপে স্বাভাবিক প্রবাহ ধরে রাখতে পারছে না। দখল আর ভয়াবহ দূষনের ফলে ঢাকার পানি প্রবাহ মারাত্মক ব্যহত হয়। সামান্য বৃষ্টিতেই ঢাকার রাস্তায় হাঁটু পানি জমে যায়। পানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আইনুন নিশাত ইনকিলাবকে বলেন, আসলে ঢাকাসহ সারাদেশের প্রধান প্রধান নদীর পানির প্রবাহ গতি পথ গুলো সংস্কারের অভাবে দিনের পর দিন ভরাট হয়ে গেছে। কোন সরকার নদী গুলো খনন করার উদ্যোগ না নেয়ার কারণে আজ এ অবস্থা। বর্ষাকালে প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টিপাতের কারণে বুডগিঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষা এসব নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পায় কিন্তু বেড়ি বাঁধ গুলো সংস্কার না করা হলে ঢাকা সহ আশপাশ এলাকা গুলো বড় ধরণের বন্যায় তলিয়ে যাবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

13 + seventeen =