কষ্ট করি আমরা আর মজা খায় চাঁদাবাজরা, পুলিশের সঙ্গে আঁতাত করে

0
572

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার মোগরাপাড়া বাসস্ট্যান্ডে সিএনজিচালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ড বানানো হয়েছে। একে তো মহাসড়কে অটোরিকশা নিষিদ্ধ, এর ওপর অবৈধ স্ট্যান্ড। এই স্ট্যান্ড থেকে স্থানীয় একটি চক্র দিনরাত চাঁদা তোলে। পাশেই হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু তাঁরা ব্যবস্থা নেন না। গতকাল সোমবার সকাল থেকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়কের জায়গা দখল করে স্ট্যান্ড তৈরি করায় যানজট তৈরি হয়েছে।

দূরপাল্লার যাত্রীদের বাসের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হচ্ছে। শত শত যাত্রীর চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঈদ সামনে রেখে এ যানজট আরো তীব্র আকার ধারণ করতে পারে বলে মনে করছে স্থানীয় লোকজন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মহাসড়কের মোগরাপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে বৈদ্যের বাজার, আনন্দ বাজার, বারদী, হোসেনপুর, বটতলা, নবীগঞ্জ, পাঁচআনীসহ ১৫টি সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশাগুলো চলাচল করে। গাড়ির সংখ্যা আনুমানিক দুই হাজার। চালকদের কাছ থেকে গড়ে ৫০ টাকা করে প্রতিদিন চাঁদা তোলা হয়। এ হিসাবে চাঁদা ওঠে এক লাখ টাকা। মোগরাপাড়া বাসস্ট্যান্ডের পূর্ব পাশে স্থানীয় মনির হোসেন, মাসুম মিয়া ও দরপন এ চাঁদা আদায় করেন। বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিম পাশে আনিছ মিয়া ও রবিউল হোসাইন চাঁদা তোলেন। এ ছাড়া বারদীতে খোকন মিয়া ও গোলজার হোসেন; তালতলায় ওসমান মিয়া, দৌলত হোসেন ও মনির হোসেন; বস্তলে মনির মিয়াসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি প্রকাশ্যে চাঁদা তোলেন। কোনো চালক যদি চাঁদার টাকা দিতে না চায় তাদেরকে পিটিয়ে আহতসহ নানা রকমের হয়রানি করা হয়। গত এক মাসে ৩০ জন চালককে পিটিয়ে আহত করেছে চাঁদাবাজরা। প্রতিদিন চাঁদাবাজির টাকা স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ, পুলিশ, প্রশাসন, কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশসহ বিভিন্ন মহলে ভাগবাটোয়ারা হয়ে থাকে। বৈদ্যের বাজারের সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘চাঁদাবাজদের অত্যাচারে আর পারছি না।’ চালক সজিব মিয়া বলেন, ‘সারা দিন গাড়ি চালিয়ে সব খরচসহ আমাদের পকেটে আর কিছুই থাকে না।’ চালক শামিম মিয়া বলেন, চাঁদা দিতে বাধ্য করা হয়। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় গত এক মাসে ৩০ জন চালককে পিটিয়ে আহত করে চাঁদাবাজরা। চালক আমিরুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা রাস্তায় গাড়ি চালালেই চাঁদা দিতে হয়। আমরা চাঁদাবাজদের কাছে এক প্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছি।’চালক সাইফুল আলম বলেন, ‘কষ্ট করি আমরা আর মজা খায় চাঁদাবাজরা। পুলিশের সঙ্গে আঁতাত করেই চাঁদা উত্তোলন করে তারা। ফলে আমরা প্রতিবাদ করেও কোনো লাভ হয় না।’ সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক রফিকুল ইসলাম ও সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, এমনিতেই ব্যবসা খারাপ। এর ওপর চাঁদাবাজ ও পুলিশের অত্যাচার। ফলে তাঁরা এ ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে অন্য ব্যবসা করার চিন্তা করছেন। উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীনুর ইসলামের সভাপতিত্বে গত মাসের আইন-শৃঙ্খলা সভায় চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। এর পরও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে চাঁদাবাজরা বহাল তবিয়তে প্রকাশ্যে চাঁদা উত্তোলন করছে। অভিযুক্ত দরপন মিয়া বলেন, পুলিশ, প্রশাসন ও সংগঠনের নামে চাঁদা তোলা হয়। রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নেতাদেরসহ সব মহলকে ম্যানেজ করেই টাকা উত্তোলন করা হয়। বোরাক পরিবহনের যাত্রী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মহাসড়কের একাংশ দখল করে অটোরিকশা স্ট্যান্ড গড়ে তোলায় প্রতিদিন এ এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমাদের বসে থাকতে হয়।’ কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি কাইয়ুম আলী সরদার বলেন, ‘পরিবহনের চাঁদা উত্তোলনের সঙ্গে আমরা কোনোভাবে জড়িত নই। মহাসড়ক থেকে অটোরিকশা স্ট্যান্ড সরাতে এরই মধ্যে চালক ও মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে।’ সোনারগাঁর ইউএনও শাহীনুর ইসলাম জানান, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সোনারগাঁর সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা বলেন, চাঁদাবাজদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

four × one =