মাদক কারবারি মিজান দুদকের ডাকে হাজির হননি

0
1076

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ডাকে হাজির হননি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকাভূক্ত মাদক কারবারি ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার মিজানুর রহমান মোল্যা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে দুদকের ঢাকা বিভাগীয় সমন্বিত ফরিদপুর জেলা কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ করা হলেও তিনি উপস্থিত হয়নি। মাদক কারবারি করে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য সম্প্রতি নোটিশ পাঠানো হয়েছিল।

দুদকের সহকারি পরিচালক কমলেশ মন্ডলের সই নোটিশে ১৪ জুন সকাল ১০টায় ফরিদপুর কার্যালয়ে উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়েছিল। অসুস্থতার কথা জানিয়ে মিজান দুদক কার্যালয়ে হাজির হননি জানিয়ে দুদকের একজন কর্মকর্তা বলেন, নোটিশে আজ বৃহস্পতিবার জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা ছিল। কিন্তু মিজানুর রহমান মোল্যা নাকি অসুস্থ। সময় প্রার্থনা করেছেন মৌখিকভাবে। ঈদুল ফিতরের পর তিনি দুদক কার্যালয়ে আসবেন বলে জানিয়েছেন। লিখিতভাবে কিংবা কোনো আইনজীবীর মাধ্যমেও মিজান সময় প্রার্থনা  করেনি, তবে মৌখিকভাবে সময় নিয়েছেন বলে তিনি জানান। জানা গেছে,  মাদক কারবারি মিজানুর রহমান মোল্যার বিরুদ্ধে ভয়ংকর অভিযোগ রয়েছে। কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তাকে কাজে লাগিয়ে অল্প কয়েক বছরেই কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকাভূক্ত মাদক কারবারি। সম্প্রতি মাদক কারবারিদের একটি তালিকা দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়। সেই তালিকা ধরেই যেসব মাদক কারবারিরা মাদক বিক্রি করে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন সেইসব ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। দুদকের তালিকায় মিজানুর রহমান মোল্যা অন্যতম, তাঁর অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে। অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় দুদকের সহকারি পরিচালক কমলেশ মন্ডলকে। ইতিমধ্যে দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে সংশ্লিষ্ট অনুসন্ধান কর্মকর্তা। ওইসব তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য  তলব করে নোটিশ পাঠানো হয় মিজানকে। সেই নোটিশের প্রেক্ষিতেই মিজানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মিজানকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, মিজানুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করার জন্য নোটিশ করা হয়েছে। আজ ১৪ জুন জিজ্ঞাসাবাদ করা কথা ছিল। দুদক সূত্র এবং অনুসন্ধানে জানা গেছে, বোয়ালমারি উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের কদমী গ্রামের আবুল হোসেন মোল্যার ছেলে মিজানুর রহমান মোল্লা ওরফে সোনা মোল্লা। প্রাথমিক গণ্ডি পেরোলেও জেএসসি পরীক্ষা না দিতে পারেনি মিজান। লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে এলাকায় নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড করে বেড়াতেন। এমনকি চুরি ডাকাতিরও অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ডাকাতির অভিযোগে কাশিয়ানি থানায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। সেই মিজান এলাকায় গোপনে মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েন। এলাকার মানুষ ক্ষুদ্ধ হলে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে ঢাকায় চলে যান। সম্প্রতি কয়েক বছর ধরে আবারও এলাকায় আসেন। ধীরে ধীরে এলাকায় গরুর ফার্ম, কৃষি খামার, মাছের খামার, অ্যাপার্টম্যান্ট ব্যবসা, মার্কেটসহ তিন বছরের ব্যবধানে দেড়শত কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তোলেন মিজানুর রহমান ওরফে সোনা মোল্যা। ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য ঢাকা, ফরিদপুর ও গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে পাইকারি বিক্রির মাধ্যমে অল্প কয়েক বছরেই এই সম্পদের পাহাড় গড়েন। দুদকের একজন কর্মকর্তা বলেন, মিজান মাদক কারবারি করে কয়েক বছরের ব্যবধানে প্রায় দেড়শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর রয়েছে গভীর সম্পর্ক। ফরিদপুর এবং গাজীপুর পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তার সহযোগিতা নিয়েই মিজান এই সম্পদ গড়ে তুলেছেন। আমরা আরো অনুসন্ধান করলে আরো অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে। মাদক কারবারির সঙ্গে যত বড় ক্ষমতাধর ব্যাক্তিই থাকুক না কেন, কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না বলে তিনি জানান।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

2 × 3 =