স্টাফ রিপোর্টারঃ
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থানার ওসি আলমগীর হোসেন ও তার পেয়ারে দোস্ত সন্ত্রাসী ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের ভয়ে ৮দিন যাবৎ পালিয়ে বেড়াচ্ছে আলী হোসেনের পরিবার। চেয়ারম্যান জাকিরের মোটা টাকায় ম্যানেজ হয়ে ওসি আলমগীর মামলা করতে আসা নির্যাতিত আলী হোসেনকে পরিকল্পিতভাবে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার করে কোর্টে প্রেরন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আইনের সহযোগিতা না পেয়ে আলী হোসেনের স্ত্রী ফুলমালা তার দুই ছেলে ও দুই কন্যা সন্তানকে নিয়ে চেয়ারম্যান জাকির বাহিনীর ভয়ে অন্যত্র পালিয়ে বেড়াচ্ছে। একারনে চেয়ারম্যান জাকির সহ থানার ওসি আলমগীর হোসেনের প্রতি স্থানীয় জনমনে এক চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ঘটনার বিবরনে জানা গেছে, উপজেলার তন্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের বখাটে ছোট ভাই মিনার হোসেন পানিয়া গ্রামের হতদরিদ্র আলী হোসেনের আলী হোসেনের ৮ম শ্রেনী পড়–য়া সুমাইয়া আক্তারকে স্কুলে আসা যাওয়ার পথে প্রতিনিয়তই বিরক্ত করে। এক পর্যায়ে মিনার হোসেন সুমাইয়াকে কু-প্রস্তাব দেয় এবং রাজি না হলে তুলে নিয়ে গিয়ে নষ্ট করা হবে বলে হুমকি দেয়। সুমাইয়া বিষয়টি তার মা-বাবাকে জানায়। এতে করে ১৬ জুন ঈদের দিন সুমাইয়ার বাবা আলী হোসেন শ্রীনগর থানায় গিয়ে বখাটে মিনার হোসেনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। কিন্তু থানার ওসি আলমগীর হোসেন অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করে বিষয়টি চেয়ারম্যান জাকিরকে অবগত করে। ভাইয়ের নামে মামলা হবে এমন কথা জানতে পেরে চেয়ারম্যান জাকির তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে। তাই ১৮ জুন সোমবার সকালে চেয়ারম্যান জাকিরের নেতৃত্বে তার আরেক ভাই পলাশ, নিজু মল্লিন, ফারুকসহ ২০/২৫ জনের একটি বাহিনী আলী হোসেনের বাড়ীতে গিয়ে হামলা চালিয়ে তাদেরকে মারধর সহ তাদের বসত ঘরবাড়ী ভাংচুর করে এবং বিভিন্ন আসবাবপত্র লুট করে নিয়ে যায়। এঘটনায় ঐ দিনই আলী হোসেন ও তার স্ত্রী ফুলমালা শ্রীনগর থানায় গিয়ে চেয়ারম্যান জাকির সহ তার সহযোগিদের নামে আবারো লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। এবারও ওসি আলমগীর কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি বরং আলী হোসেন ও তার স্ত্রী ফুলমালা অভিযোগ দিয়ে বাড়ী যাওয়ার পথে র্যাব-১১ এর একটি টিম তাদের দুজনকে সিএনজি থেকে নামিয়ে তল্লাশী করে শুধুমাত্র আলী হোসেনের কাছে এক পোটলা ইয়াবা পাওয়ার কথা উল্লেখ করে মাদক মামলা দিয়ে থানায় সোপর্দ করে। পরে ওসি আলমগীর তাকে কোর্টে প্রেরন করে। র্যাব-১১ এর গ্রেফতারের ব্যাপারে আলী হোসেনের স্ত্রী ফুলমালা বলেন, আমি ও আমার স্বামী থানা থেকে বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎ নিমতলা এলাকায় মোটর সাইকেল যোগে র্যাব এসে আমার স্বামী ও আমাকে সিএনজি থেকে নামিয়ে তল্লাশী চালায়। এসময় একজন দূর্বা ঘাসের মধ্যে থেকে একটি পোটলা এনে বলেন, স্যার, স্যার এই পোল্টার মধ্যে ইয়াবা রয়েছে। এর পর র্যাব আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে যায়। এঘটনায় ফুলমালা আরো বেশী অসহায় হয়ে পড়ে এবং বাড়ী ফিরে জানতে পারে জাকিরের লোকজন আবারো তার বাড়ীতে এসে হুমকি দিয়ে গেছে, রাতের বেলায় আবার আসবে।
পুনরায় যে কোন সময় সন্ত্রাসী জাকির বাহিনী আমাদের উপর সন্ত্রাসী হামলা চালাতে পারে এমন ভয়ে ছেলে মেয়ে নিয়ে পালিয়ে এসে নিকট আত্মীয়সহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছি। ঘর-বাড়ি ছাড়া অসহায় পরিবারের ফুলমালা বেগম আরো বলেন, আমার এক ছেলে ফাহাদ ও মেয়ে সুমাইয়া নওপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেনিতে এবং আরেক ছেলে আহাদ ৭ম শ্রেনিতে লেখা পড়া করছেন। সন্ত্রাসী হামলার ভয়ে তারা স্কুলে যেতে পারছে না। এভাবেই প্রতি মুহুর্ত আতংকে দিন পার করছেন বাড়িঘর ছাড়া অসহায় পরিবারটি। বাদীর অভিযোগ বিষয়ে মোবাইল ফোনে শ্রীনগরে থানার অফিসার ইনচার্জ আলমগীর হোসেনের কাছে জানতে চাইলে ঘরবাড়ী ভাংচুরের কথা স্বীকার করে বলেন, চেয়ারম্যান জাকিরের নেতৃত্বে কোন ভাংচুরের ঘটনা ঘটেনি। জাকির সম্পূর্ন নির্দোষ। এখানে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই। তবে মামলা কেন রেকর্ড হয়নি জানতে চাইলে বলেন, অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত চলছে। কিন্তু আলী হোসেনের পুরো পরিবারটাই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত।
এদিকে, চেয়ারম্যান জাকিরের নেতৃত্বে আলী হোসেনের ঘরবাড়ী ভাংচুর, তাকে পরিকল্পিতভাবে মাদক মামলায় ফাসানো, তার মেয়েকে শ্লীতাহানীর চেষ্টা ও তার পরিবারের সদস্যরা অহায়ভাবে পালিয়ে বেড়ানোর ঘটনায় স্থানীয় জনমনে ব্যাপক চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট দাবী জানাচ্ছে সরেজমিনে তদন্ত করে চেয়ারম্যান জাকির হোসেন ও ওসি আলমগীরের ক্ষমতার অপব্যবহারের রহস্য উদঘাটন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করে অসহায় পরিবারটিকে ন্যায় বিচার পেতে সহযোগিতা করা।