শ্রীনগরে চেয়ারম্যান জাকিরের নেতৃত্বে বাড়িঘর-ভাংচুরের ঘটনায় মামলা রেকর্ড করেনি ওসি আলমগীর

0
601

স্টাফ রিপোর্টারঃ
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার তন্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের বখাটে ছোট ভাই মিনার হোসেন পানিয়া গ্রামের দারিদ্র ঘরের এক ৮ম শ্রেনী পড়–য়া স্কুলছাত্রীকে কু-প্রস্তাব দিলে তাতে রাজি না হওয়ায় চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে তার বুলডুজার বাহিনী ওই ছাত্রীর ঘরবাড়ী ভাংচুর করে মাটির সাথে গুড়িয়ে দেয়ায় ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেয়েও মামলা রেকর্ড করেনি থানার ওসি আলমগীর হোসেন। বরং চেয়ারম্যান জাকিরের কালো টাকায় ওসি আলমগীর ম্যানেজ হয়ে কু-প্রস্তাবের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ঐ ছাত্রীর বাবা আলী হোসেনকে অভিযোগ দিয়ে বাড়ী ফেরার পথে পরিকল্পিতভাবে মাদক মামলায় আটক করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে স্থানীয় সাধারন মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এলাকাবাসী জানায়, পানিয়া গ্রামের আলী হোসেনের মেয়ে সুমাইয়া। সে ৮ম শ্রেনীর একজন মেধাবী ছাত্রী। আর গরীবের ঘরে চাঁদের আলো। এটাই তার আজন্ম পাপ। তাইতো সে তার এলাকার চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের বখাটে ছোট ভাই মিনার হোসেনের কু-নজরে পড়ে। সুমাইয়া প্রতিনিয়ত স্কুলে আসা যাওয়া পথে মিনার হোসেন তাকে বিরক্ত করে কু-প্রস্তাব দেয় এবং ভয়ভীতি দেখায়, কু-প্রস্তাবে রাজী না হলে তুলে নিয়ে গিয়ে নষ্ট করা হবে। বিষয়টি সুমাইয়া তার বাবা-মাকে জানায়। সুমাইয়ার বাবা আলী হোসেন ১৬ জুন ঈদের দিন মিনারের নামে শ্রীনগর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। বরং ছোট ভাইয়ের নামে অভিযোগের বিষয়ে জানতে পেরে তন্তর বাসীর আতংক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে। ভাইকে মামলার হাত থেকে বাচাতে ১৮ জুন সোমবার সকালে চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের নেতৃত্বে তার আরেক ভাই পলাশ, নিজু মল্লিক, মিনার, ফারুক সহ ২০/২৫ জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ আলী হোসেনের বাড়িতে গিয়ে হামলা চালিয়ে ঘরবাড়ী ভাংচুর করে এবং ঘরের ভিতরে থাকা ফ্রিজ, হাড়ি-পাতিলসহ বিভিন্ন আসবাব পত্র পুকুরে ফেলে দেয়। এঘটনায় আলী হোসেন ও তার স্ত্রী ফুলমালা ঐ দিনই শ্রীনগর থানায় গিয়ে চেয়ারম্যান জাকির ও তার সহযোগিদের নামে ঘরবাড়ী ভাংচুরের ঘটনাকে উল্লেখ করে আরো একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। কিন্তু অভিযোগ দায়ের করে আলী হোসেন ও ফুলমালা সিএনজি যোগে বাড়ী ফেরার পথে নিমতলা স্থানে পৌছালে র‌্যাব-১১ এর একটি টিম তাদেরকে সিএনজি থেকে নামিয়ে তল্লাশী চালায় এবং তাদের কাছে এক পোটলা ইয়াবা পাওয়ার কথা উল্লেখ করে আলী হোসেনকে থানায় সোপর্দ করে। পরে থানা পুলিশ আলী হোসেনকে কোর্টে প্রেরন করে। এদিকে, র‌্যাব-১১ এর গ্রেফতারের ব্যাপারে ফুলমালা বলেন, আমি ও আমার স্বামী থানা থেকে বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎ নিমতলা এলাকায় মোটর সাইকেল যোগে র‌্যাব এসে আমার স্বামী ও আমাকে সিএনজি থেকে নামিয়ে তল্লাশী চালায়। এসময় দূর্বা ঘাষের মধ্যে থেকে একটি পোল্টা এনে বলেন, স্যার, স্যার এই পোল্টার মধ্যে ইয়াবা রয়েছে। এর পর র‌্যাব আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে যায়। থানায় চেয়াম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার পথে র‌্যাবের হাতে আটক নিয়ে এলাকায় সাধারন মানুষের মনে বিভিন্ন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এলাকাবাসী আরো জানায়, আলী হোসেন মাদক ব্যবসা করলে আইনে তার শাস্তি হবে। তাই বলে চেয়ারম্যান তার ঘরবাড়ী ভাংচুর করবে, চেয়ারম্যানের বখাটে ভাই তার মেয়েকে শ্লীতাহানীর চেষ্টা করবে। আর পুলিশ কোন ব্যবস্থা গ্রহন করবে না। এটা হতে পারেনা। একজন অপরাধ করে আরামে বুক ফুলিয়ে ঘুরাফেরা করবে আর অপরজন অপরাধ না করে জেল খাটবে এটা কেউ আশা করে না। এভাবেই সমাজে চেয়ারম্যানদের মতো প্রভাবশালী বাহিনী কর্তৃক অসহায় মানুষের উপর নির্যাতনের মাত্রা দিন দিন বেড়ে চলছে।
চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বাড়ীঘর ভাংচুরের ঘটনায় মামলা রেকর্ড করেনি পুলিশ। এব্যাপারে শ্রীনগর থানার ওসি আলমগীর হোসেনের নিকট জানতে ঘরবাড়ী ভাংচুরের কথা স্বীকার করে বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তবে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চেয়ারম্যান জাকির নির্দোষ। এঘটনায় তার কোন সম্পৃক্ততা নেই। অভিযোগকারী পুরো পরিবারটাই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

eleven + twenty =