কারাবন্দি রোহিঙ্গা নারীরা যৌন নিপীড়নের শিকার

0
414

ইউরোপীয় রোহিঙ্গা কাউন্সিল অভিযোগ করে বলেছে, শতাধিক রোহিঙ্গা নারী ও শিশুকে মিথ্যা অভিযোগে বুথিয়াডং কারাগারে আটকে রেখেছে মিয়ানমার সরকার। তুর্কি সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে কাউন্সিলের মুখপাত্র আনিতা শাগ দাবি করেন, নারী কারাবন্দিরা সেখানে সহিংসতা ও যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। তাদের মুক্তি নিশ্চিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টিতে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের প্রতিও আহŸান জানিয়েছেন শাগ ।

 

তিনি আরো বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গাকে জোরপূর্বক অনাহারে রাখা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তারা। তাছাড়া, ১০২ জন রোহিঙ্গা নারী ও শিশুকে ‘মিথ্যা’ অভিযোগে বুথিয়াডং কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। নারী কারাবান্দিরে ওপর সেখানে যৌন নিপীড়ন চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। শাগ আরও জানান, গত পাঁচ বছর ধরে ৭০০ থেকে ৮০০ রোহিঙ্গা সউদী আরবের কারাগার থেকে মুক্তির জন্য দিন গুনছে। এর আগে ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের অনাহারে রেখে বিতাড়নের কৌশলের কথা জানানো হয়েছিল। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানিয়েছিল,পশ্চিম রাখাইনের খাবারের দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাধা দেওয়া হয়েছে ত্রাণ বিতরণেও। ২০১৮ সালের মার্চে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সহকারী মহাসচিব অ্যান্ড্রু গিলমোর বলেছিলেন,রোহিঙ্গা বিতাড়নে ‘সহিংসতা ও অভুক্ত রাখার’কৌশল ব্যবহৃত হচ্ছে। মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংগঠন ডক্টর্স উইদাউট বর্ডারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে অন্তত ৯,৪০০ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। গত ডিসেম্বরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সংগঠনটি আরও জানায়, নিহতদের ৭১.৭ শতাংশ অর্থাৎ ৬,৭০০ জনের মৃত্যু হয়েছে সহিংসতার কারণে। এর মধ্যে ৫ বছরের কম বয়সী ৩০টি শিশুও রয়েছে। উল্লেখ্য, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রোহিঙ্গারা রাখাইনে থাকলেও মিয়ানমার তাদের নাগরিক বলে স্বীকার করে না। উগ্র বৌদ্ধবাদকে ব্যবহার করে সেখানকার সেনাবাহিনী ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে স্থাপন করেছে সা¤প্রদায়িক অবিশ্বাসের চিহ্ন। ছড়িয়েছে বিদ্বেষ। ৮২-তে প্রণীত নাগরিকত্ব আইনে পরিচয়হীনতার কাল শুরু হয় রোহিঙ্গাদের। এরপর কখনও মলিন হয়ে যাওয়া কোনও নিবন্ধনপত্র,কখনও নীলচে সবুজ রঙের রশিদ,কখনও ভোটার স্বীকৃতির হোয়াইট কার্ড,কখনও আবার ‘ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড’ কিংবা এনভিসি নামের রং-বেরঙের পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষকে। ধাপে ধাপে মলিন হয়েছে তাদের পরিচয়। ক্রমশ তাদের রূপান্তরিত করা হয়েছে রাষ্ট্রহীন বেনাগরিকে। আনাদোলু।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

3 × 2 =