রামগতি ও কমলনগরে মেঘনার রোষ এক মাসে বিলীন হাজার বাড়ি

0
693

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
লক্ষ্মীপুরের মেঘনায় ভাঙ্গনে নদীগর্ভে কৃষি জমি বিলীন হয়ে এক মাসে ৫শ পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে গৃহহীন হয়ে পড়েছে। ২৫০ হেক্টর কৃষি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে হুমকির মুখে রয়েছে কমলনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকাসহ মাতাব্বরনগর এলাকায় বেড়িবাধঁসহ সরকারী-বেসরকারী বহু স্থাপনাও। ভাঙ্গন প্রতিরোধ ও ভিটামাটি রক্ষায় আন্দোলনে নেমেছে স্থানীয়রা। দ্রুত বেড়ি বাঁধ সংস্কার করে রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় বসবাসকারী লক্ষ্য জনতার স্বপ্নসাধ ও বসত বাড়ি রক্ষা করার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবী জানিয়েছেন ভাঙ্গন কবলিত ক্ষতিগ্রস্তরা। তবে লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) স্থানীয় সংসদ সদস্য মাহাম্মদ আব্দুল্ল্হা আল মামুন জানান, ভাঙ্গন প্রতিরোধে আরো ১৪০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদনের কথা রয়েছে। তাসহ আরো ১৭শ কোটি টাকা বরাদ্ধ চাওয়া হয়েছে। তা হলে করি খুব অল্প সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করা হবে। তখন আর নদী ভাঙ্গন থাকবে না বলে জানান তিনি।

জানাগেছে,এক মাসে নদীগর্ভে ২৫০ হেক্টর কৃষি জমিসহ প্রায় ৫’শত পরিবার ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। জেলায় ৯৬ কিলোমিটার বন্যা প্রতিরোধ বেড়ি বাঁধ থাকলেও মেঘনার ভয়ঙ্কর থাবায় ইতিমধ্যে ৩৭ কিলোমিটার বেড়ি বাঁধ বিলীন হয়ে গেছে। গত এক মাসে এসব এলাকার প্রায় ৫শত পরিবার ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে বহু মানুষ। এছাড়া ভাঙ্গন হুমকির মুখে রয়েছে কমলনগর উপজেলা পরিষদ, হাসপাতাল,স্কুল কলেজসহ সরকারী,বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও বসত বাড়ি,ফসলি জমিসহ নানান গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা ও সম্পদ।
অপরদিকে নতুন করে বেড়ি বাঁধ রক্ষা ও ভাঙ্গন প্রতিরোধের দাবীতে প্রতিদিনই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী, স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন বিক্ষোভ সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসুচি পালন করে আসছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী মোহাম্মদ মুছা কালিমুল্লা,দিদার হোসেন ও রফিক আনোয়া বেগম জানান, ভাঙ্গন প্রতিরোধে স্থানীয়জনপ্রতিনিধিরা আশ^াস দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এর মধ্যে এক মাসে কমলনগর উপজেলার সাহেবেরহাট,পাটওয়ারীরহাট ভাঙ্গনের ফলে ৫শ পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এছাড়া নতুন কমলনগর উপজেলার কাদির পন্ডিতেরহাট, চরফলকন,মাতব্বরহাট,লুধুয়া ও তালতলি ও রামগতিউপজেলার বড়খেরী,আসলপাড়া এলাকার ১০ কিলোমিটার এলাকায় ঝুড়ে নতুন করে ভয়াভহ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে তারা ক্ষতিগ্রস্ত এখনও সরকারি-বেসরকারি কোনো সাহায্য পাননি ।
কথা হয় চর জগবন্দু এলাকার সফি উল্যাহ ও তার স্ত্রী শাজিয়া আক্তারের সাথে।তারা জানান,নদী ভাঙনসহ বর্ষণে নদীর পানি বেড়ে ভাঙনের তীব্রতা আরো বেড়েছে। ভাঙ্গন প্রতিরোধে বারবার এলাকার চেয়ারম্যান ও মেম্বারা তাদের আশ^াস দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ করেন তারা।
একই এলাকার ভাঙ্গনের শিকার আবু ছায়েদ,বিবি হাজেরা,সিরাজুল হকসহ আরো অনেকের সাথে তারা জানান,তাদের মুখের ভাষা কেড়ে নিয়েছে ‘নদী’ একসময় গোলা ভরা ধান ছিলো তাদের ঘরে, গোয়াল ভরা গরু ছিল । সে সব এখন সকলের নিকট গল্প মনে হলেও নদীর ভাঙনে আজ তারা পথের ভিখারি। তারা নদীর পাশে ঝুপড়ি ঘর তুলে নতুন ঠিকানা করেছেন।
স্থানীয় সাহেবের হাট ইউপি চেয়ারম্যান আবুল খায়ের জানান, নদীর ভাঙ্গন ও কয়েকদিনের বৃষ্টির পানির স্রোতের আরো ব্যাপক হারে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে কালকিনি,সাহেবের হাট এলাকার বেশ ফসলি জসি নদীর গর্ভে চলে গেছে। এর আগে নদী ভাঙ্গন রোধে ওই এলাকার কিছু অংশে বেড়িবাধ নির্মানে ব্লকদিয়ে বাধ দেয়া হলে ওই বাধের আশপাশ ভাংছে। এখন আশপাশ বাধ নির্মান বন্ধ থাকায় হুমকিতে রয়েছে বাড়িঘরসহ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাও। ভাঙ্গন রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমতিয়াজ হোসেন জানান, ইতিমধ্যে কমলনগর উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। দ্রুত ভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মুছা জানান,ভাঙনের তীব্রতা এবার বেশি। তবে নদী ভাঙ্গন রোধ হচ্ছে ব্যবস্থা শীঘ্রই হবে বলে জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

3 × two =