সারাদেশে আরো চার থেকে পাঁচ দিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে

1
976

মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় থাকায় সারাদেশে আরো চার থেকে পাঁচ দিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। তিনি জানান, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। তিনি বলেন, এ সময় চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের পাহাড়ী এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, রাজশাহী, রংপুর, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, যশোর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝড়ো বা দমকা হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এছাড়া সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আজ সকাল ৬টায় ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ। পূর্বাভাসে আরো বলা হয়, ভারতের উত্তরপশ্চিম ঝাড়খন্ড এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে উত্তর-পশ্চিম মধ্য প্রদেশ এবং তৎসংলগ্ন উত্তর প্রদেশে অবস্থান করছে। মৌসুমী বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে উত্তরপূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বির্স্তত রয়েছে। দক্ষিণপশ্চিম মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় বিরাজ করছে। সাংবাৎসরিক খোঁড়াখুঁড়িতে এবং গত এক দিনের বর্ষণে যানজট ও জলাবদ্ধতায় বেহাল রাজধানী। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে গত কয়েক দিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জনজীবন যখন অতিষ্ঠ তখন গতকাল ভারী বৃষ্টিতে জীবনযাত্রা পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে। রাজধানীর অলিগলির পথ কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। রিকশা-গাড়ি উল্টে দুর্ভোগে পড়তে হয় নগরবাসীকে। যানজটে আটকা পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয় যাত্রীদের। দীর্ঘ দিন থেকেই রাজধানীতে বিভিন্ন সেবা সংস্থার খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকায় রাস্তা খোঁড়া হচ্ছে। আজ একটি সেবা সংস্থা তো পরদিন আরেকটি সেবা সংস্থা রাস্তা খুঁড়ে ফেলে রাখছে। রাজধানী ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে মেট্রোরেল, সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, ডিপিডিসি ও তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ একযোগে বিভিন্ন এলাকার রাস্তা খুঁড়ে রেখেছে। এতে যানজট সৃষ্টি হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। গতকাল দুপুরের তিন ঘণ্টার ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে যানজটের মাত্রা অসহনীয় হয়ে ওঠে। চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় নগরবাসীকে। মেট্রোরেলের কারণে দীর্ঘ দিন থেকে মিরপুরের বিস্তৃর্ণ এলাকাজুড়ে রাস্তা খুঁড়ে কাজ চলছে। এতে ওই এলাকার বাসিন্দাদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। বর্তমানে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়ক, পল্টন, মতিঝিল এলাকায় মেট্রোরেলের কাজ চলছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের বিপরীত দিকের রাস্তায় গতকাল দেখা যায়, অর্ধেক রাস্তায় ফিতা দিয়ে ঘেরাও করে দীর্ঘ নালা খুঁড়ে রাখা হয়েছে। এতে রাস্তা সরু হওয়ায় দিনরাত যানজট লেগেই থাকছে। প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তাও দীর্ঘ দিন ধরে খুঁড়ে রাখা হয়েছে। হাইকোর্ট মোড়ে রাস্তা খুঁড়ে পাইপ স্থাপনের পর রাস্তা আর মেরামত করা হয়নি। এতে উঁচু-নীচু রাস্তা দিয়ে চলতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে মানুষ। বাসাবো বিশ্বরোডে গত কয়েক মাস ধরে ফুটপাথের কাজ চলছে। এ কাজ শেষ না হতেই গত এক মাস ধরে ডিপিডিসি বিদ্যুতের ক্যাবল স্থাপনের জন্য রাস্তার পূর্বপাশ খোঁড়াখুঁড়ি করছে। এতে ওই সড়কে প্রতিনিয়ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে বৌদ্ধ মন্দির মোড় থেকে কদমতলা পর্যন্ত রাস্তার একপাশ খুঁড়ে বিদ্যুতের তার স্থাপনের কাজ চলছে। এ জন্য রাস্তা খুঁড়ে মাটি নালার পাশে রাখার কারণে সড়ক আরো সরু হয়ে সকাল থেকে গভীর রাত অবধি যানজট লেগেই থাকে। এছাড়া খিলগাঁও চৌধুরীপাড়া, মিরবাগ, মধুবাগ, বাংলামোটর, বাড্ডাসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক থেকে অলিগলি পর্যন্ত খুঁড়ে বিভিন্ন সেবা সংস্থা কাজ করছে। এ জন্য অনেক সড়ক বন্ধ রাখা হয়েছে। আবার অনেক সড়ক সরু হয়ে রাতদিন যানজটের ধকল পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে একদিকে যেমন দুর্ভোগ চলছে এর সাথে গতকালের ভারী বৃষ্টি নগরবাসীর ভোগান্তির মাত্রা আরেক ধাপ বাড়িয়ে দেয়। অনেক সড়ক কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। বঙ্গভবন সংলগ্ন দক্ষিণ দিকের সড়কটি দীর্ঘ দিন থেকেই খারাপ অবস্থায় রয়েছে। উঁচু নীচু রাস্তার কারণে চলা দায় হয়ে পড়েছে। গত বর্ষায় এ সড়কে কোমর সমান পানি জমে দীর্ঘসময় জলাবদ্ধতা থাকত। এ বছর গত কিছু দিনের বৃষ্টিতে তেমন জলাবদ্ধতা দেখা যায়নি। কিন্তু গতকাল হঠাৎ করেই আগের রূপে ফিরে এ সড়ক। প্রায় কোমর সমান পানি জমে যায় সড়কটিতে। এতে প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, সিএনজি, রিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন অকেজো হয়ে পড়ে। অনেক রিকশা উল্টে পড়ে যাত্রীরা আহত হন। বেশ কিছু সিএনজি ও মোটরসাইকেল ইঞ্জিনে পানি ঢুকে নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া গুলিস্তান, মতিঝিল, আরামবাগ, রাজারবাগ, মালিবাগ রেলগেটসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। গতকাল বিকেলে গুলিস্তান থেকে স্ত্রী ও ছয় বছরের সন্তানকে নিয়ে টিকাটুলি যাচ্ছিলেন আরিফ হোসেন। কিন্তু বঙ্গভবনের দক্ষিণ পাশের রাস্তায় আসতেই বাধে বিপত্তি। কোমর সমান পানির মধ্যে উঁচ-নীচু রাস্তায় তাদের রিকশাটি উল্টে যায়। কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায় তাদের পোশাক। এ সময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে উচ্চস্বরে বলতে থাকেন, এটি কোনো রাস্তা হলো? অনেক দিন থেকে দেখছি রাস্তায় ইটের খোয়া ফেলে রাখা হয়েছে। কিন্তু কাজ শেষ করা হয়নি। এখন আবার সেই জলাবদ্ধতা। এ ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো: আসাদুজ্জামান নয়া দিগন্ত বলেন, জরুরি প্রয়োজনে বিভিন্ন সেবা সংস্থাকে সড়ক কাটার অনুমতি দিতে হয়। মেট্রোরেল একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প। বাসাবো এলাকায় বিদ্যুতের লোডশেডিং বেশি হওয়ায় বিদ্যুৎ বিভাগ নতুন করে কাজ করছে। সে জন্য তাদের অনুমতি দেয়া হয়েছে। বঙ্গভবন ও আশপাশের রাস্তার স্তর নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়ায় সিটি করপোরেশন, ওয়াসা মিলে সম্মিলিতভাবে কাজ করার উদ্যোগে নেয়া হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই কাজ শুরু করতে পারব আমরা। গুলিস্তান এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে আগামী বছর প্রকল্প নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

4 × 4 =