‘আমিন মোহাম্মদ গ্রুপে চলছে আভ্যন্তরীণ “পঞ্চপান্ডব”র লুটপাটের মহৌৎসব চলছে

0
2322

বিশেষ প্রতিনিধি ‘আমিন মোহাম্মদ গ্রুপে চলছে আভ্যন্তরীণ “পঞ্চপান্ডব”র লুটপাটের মহৌৎসব‘ এই শিরোনামে অনুসন্ধানী ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম পর্ব প্রকাশিত হলো।
বিশ কোটি মানুষের এই দেশে আবাসন সংকট প্রকট। বিশেষ করে বড় বড় নগর-মহানগরীতে এই সংকট আরো বেশী। রাজধানীতে মাত্রাতিরিক্ত। আবাসন সংকট সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য নব্বই দশকের দিকে কিছু কিছু আগ্রহীরা এগিয়ে আসেন। শুরুতে ওই সকল আগ্রহীরা ঢাকা মহানগরীতে পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন এলাকায় দৃষ্টিনন্দন বহুতল অট্টালিকা গড়ে আবাসন সংকট নিরসনে কিছুটা ভূমিকা রাখতে সক্ষম হন, যা জনগণের মাঝে আশার সঞ্চার করে। ঢাকা নগরীতে জনচাপ আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে গেলে ওই সকল আগ্রহীদের পাশাপাশি আরো অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠেন। গড়তে থাকেন ঢাকা মহানগরী ও এর আশপাশে পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা। তাদেরই অন্যতম প্রধা জনৈক এনামুল হক। তার প্রতিষ্ঠিত আবাসন প্রতিষ্ঠান আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশন।

উল্লেখিত আবাসন প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে গড়ে তুলেছে পরিকল্পিতভাবে একে একে অগণিত আবাসন প্রকল্প। প্রকল্পগুলে হচ্ছে- আশুলিয়া মডেল টাউন, গ্রীণ মাডেল টাউন, গ্রীণ ভিলেজ, আশুলিয়া অবকাশ, আশুলিয়া বর্ণালী, আশুলিয়া লাবণী, আশুলিয়া প্রভাতী, আশুলীয়া স্বর্ণালী, আশুলিয়া কিংডম, আমিন মোহাম্মদ সিটি, রাজধানীর বাইরে সিলেটে শ্যামল ছায়া প্রভৃতি। এছাড়াও আরো বেশকিছু প্রতিষ্ঠান নিয়ে আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের আত্মপ্রকাশ। তবে উক্ত আবাসিক প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা মহানগরীর অভিজাত ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে সু-উচ্চ দৃষ্টিনন্দন আবাসিক ভবন নির্মাণের মাধ্যমে পথচলা শুরু করে জনপ্রত্যাশা পূরণে বহুলাংশেই সফল হয়। ফলে এক পর্যায়ে আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ সমর্থ হয় রাজধানীতে বসবাসকারীদের দৃষ্টি কাড়তে। শুরুর ক্ষুদ্র পরিসর অতিক্রম করে সেই আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ এখন বিশালাকার আয়াতন ধারন করেছে। সাথে সাথে প্রতিষ্ঠিানটি সুনাম ও দুর্নামের সমঅংশিদারও হচ্ছে। তবে দুর্নামের অংশিদারের কারণ যত না মালিক পক্ষের তার থেকে বহুগুন কারণ উক্ত প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরের কয়েকটি সিন্ডিকেট। প্রতিটি সিন্ডিকেটে একজন করে প্রধান ব্যক্তি রয়েছেন, যারা প্রতিষ্ঠানিটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। প্রধান ব্যক্তিরা আবার মালিকপক্ষের চাটুকারিতায় স্বিদ্ধহস্ত। তৈলমর্দনে অপ্রতিদ্বন্দ্বি। একদিকে উক্ত সিন্ডিকেট প্রধানরা মালিকপক্ষের চাটুকারিতা করে তাদের মন জয় করেন, অপরদিকে পরিকল্পিতভাবে কোটি কোটি টাকা লোপাট করে প্রতিষ্ঠানের বারোটা বাজাবার উপক্রম করছেন।
শুরুতেই প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ছিলো ঢাকাবাসীর মুখে মুখে। সময়ের আবর্তে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তা দেশের গন্ডি পেরিয়ে যায়। কিন্তু কতিপয় শীর্ষ ও মধ্যম সারির কর্মকর্তাদের অনৈতিকতার কারণে এখন আর পূর্বের সুনাম ধরে রাখতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি।
অত্র পত্রিকা দীর্ঘদিনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের আভ্যন্তরীণ এক ভয়ঙ্কর চিত্র। অত্র পত্রিকার দীর্ঘদিনের তথ্যানুসন্ধানে পাওয়া তথ্য-উপাত্তের আলোকে সৃষ্ট ধারাবহিক প্রতিবেদনের এটা প্রথম পর্ব।
প্রতিষ্ঠানটির বর্তমানে কর্মরত অগণিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে পাঁচজন শীর্ষ ও মধ্যম সারির কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানটিকে কুরে কুরে খাচ্ছেন, যা অপরাধ বিচিত্রা চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু মলিকপক্ষকে তারা সর্বক্ষেত্রে অন্ধকারে রাখতে সক্ষম হচ্ছেন। তারা মলিকপক্ষের কাছে বর্তমানে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা। বিশেষ করে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের নিকট সবচেয়ে বেশী আস্থাভাজন হিসেবে বিবেচিত আলোচিত উক্ত পাঁচ কর্মকর্তা। অনুসন্ধানে তাদের অনৈতিক কর্মকান্ড দেখে উক্ত পাঁচ কর্মকর্তাকে “পঞ্চপান্ডব” হিসেবেই দেখছে অপরাধ বিচিত্রা। ওই “পঞ্চপান্ডব” প্রত্যেকেই আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের অভ্যন্তরে নিজস্ব একটি করে শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে অতিচাতুরতার সাথে লুটপাট চালাচ্ছেন। কিন্তু চলনে বলনে “মিষ্টার ক্লিন” হয়ে আছেন তারা প্রত্যেকেই। আলোচিত “পঞ্চপান্ডব” প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আরো কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে দলে ভিড়িয়ে রেখেছেন। এছাড়াও আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ সংশ্লিষ্ট বহিরাগত কিছু ব্যক্তি “পঞ্চপান্ডব” গঠিত সিন্ডিকেটগুলোর স্বক্রিয় সদস্য।
উল্লেখিত আবাসন প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে বসেই “পঞ্চপান্ডব” চাকুরীর পাশাপশি অতিসুক্ষভাবে নিজন্ব অনৈতিক ব্যবসা ও কমিশন বাণিজ্য পরিচালনা করে হাতিয়ে নিচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকা। তবে এক্ষেত্রে মালিকপক্ষকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রাখা হয়েছে। সিন্ডিকেটগুলো বিভিন্ন প্রকল্পে চালাচ্ছেন মহাহরিলুট। বিশেষ করে প্রকল্পের জমি ক্রয়ে কমিশন, কম মূল্যে জমি ক্রয় করে অধিক মূল্য প্রতিষ্ঠানকে দেখানো, জমির মালিকদের প্রাপ্য টাকা পরিকল্পিতভাবে আত্মসাৎ, বিক্রয়ে কমিশন, প্রকল্প উন্নয়ন যেমন মাটিভারট কাজে কমিশন, দ্রবাদী ক্রয়-বিক্রয়ে কমিশন, দালালদের কমিশন আত্মসাৎ করে নিজেদের পকেটে নেওয়া, প্রকল্পের প্লট হস্তান্তরে কাল্পনিক সমস্যা সৃষ্টি করে টালবাহানার মাধ্যমে অর্থ আদায়, প্রকল্পের বিপুল সংখ্যক গাছ চোর দিয়ে চুরি করিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, ভূয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে টাকা চুরি, বিজ্ঞাপনে কমিশন প্রভৃতি অনৈতিকতার আশ্রয়ে কোটি কোটি টাকা লোপাট হচ্ছে।
এ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের জমি নেওয়ার ক্ষেত্রেও জমির মালিকদের নিকট থেকে গোপনে মোটা অংকের টাকা গ্রহণ করেন দায়িত্বশীলরা। এক্ষেত্রে আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের মালিক পক্ষকে প্রকৃত বিষয়ে অন্ধকারে রাখা হয়। মিথ্যা ধারণা দিয়ে নিজেরা মোটা অংকের টাকা পকেটলব্ধ করছেন। প্রতিটি পুরাতন ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রেও চুরি করা হয় মোটা অংকের টাকা। এবিষয়ে পরবর্তি সংখ্যায় বিষদ তথ্য প্রকাশ করা হবে।
অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে, মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে প্রতিদ্বন্দ্বি ব্যবসায়ী ও গণমাধ্যমের কাছে তথ্য বিক্রির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে “পঞ্চপান্ডব” এর চারজন সদস্যের বিরুদ্ধে। তবে একজন মালিকপক্ষের নিকটাত্মীয় হওয়ায় তিনি তথ্য বিক্রি করেন না, তবে আভ্যন্তরীণ ও বহিরাগতদের নিয়ে গঠিত নিজস্ব সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লোপাট করছেন। মোদ্দা কথা আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের অভ্যন্তরে সৃষ্টি হয়েছে পাঁচজন আলোচিত “জাইল্লা নজরুল (আসিয়ান সিটির)”। এটাই আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের জন্য সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয়।
আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের অভ্যন্তরে থাকা অতিদাপুটি “পঞ্চপান্ডব” প্রত্যেকেই নিজস্ব বলয় বা সিন্ডিকেট গড়ে প্রতিষ্ঠানটির বারোটা বাজিয়ে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। ওই “পঞ্চপান্ডব” দাপুটে হওয়ায় তাদের গঠিত সিন্ডিকেটগুলোর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারেন না অনেকেই। এই মুখ খুলতে না পারা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতিনিয়তই চাকুরী হারানোর ভয়ে থাকেন। তবে “পঞ্চপান্ডব” চাটুকার, তাই তাদের চাকুরী হারাবার ভয় নেই। ফলে তারা আছেন অনেকটা আয়েসি ভঙ্গিতে। আগামীতে আরো বিস্তারিত।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

11 − nine =