হাউজিং ব্যবসার নামে আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান এনামুল হক এর প্রতারণা

4
1232

মো: আবদুল আলীম:
রাজধানীর খিলক্ষেতে ‘৩০০ ফুট রাস্তা’-সংলগ্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে আবাসন প্রকল্প যার মধ্য দিয়েই প্রবাহিত হয়েছে ডুমনী খাল। রাজউকের ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যানেও (ড্যাপ) রয়েছে প্রাকৃতিক এ খালের অস্তিত্ব। ঢাকা জেলা প্রশাসনের তৈরি করা মানচিত্রেও রয়েছে খালটির অস্তিত্ব। অভিযোগ রয়েছে এ খালের পানি প্রবাহ সম্পূর্ণ বন্ধ করে ৭ দশমিক ২৪ বিঘা জায়গা ভরাট করেছে আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশন। জলাধার ভরাটের বিষয়ে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা অমান্য করেই ভরাট করা হয়েছে ডুমনী খাল। ভরাটকৃত জায়গার মালিকানা দাবি করে আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের চেয়ারম্যান এমএম এনামুল হক ও ভাইস চেয়ারম্যান বিলকিস হকের নামে সাইনবোর্ড ঝুলানো হয়েছে। এ অবস্থায় দখলদারদের বিরদ্ধে এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম পরিচালনাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরের সরেজমিন প্রতিবেদনে। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ঢাকা শহরের একমাত্র খাল ডুমনী খাল। খালটি শত শত বছর ধরে পানি নিষ্কাশন, ভূগর্ভস্থ পানি সঞ্চয়, জীববৈচিত্র রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। গুরত্বপূর্ণ এ খাল দখলমুক্ত করে জলাবদ্ধতা নিরসনে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর গত ২৯ আগস্ট আবেদন করে পিংক সিটি হোম ওনার্স মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি। এ অভিযোগটি আমলে নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত মাসে পরিবেশ অধিদপ্তরকে চিঠি দেয় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। পরে সরেজমিন তদন্ত করে পরিবেশ অধিদপ্তরে প্রতিবেদন দাখিল করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

সরেজমিন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিংক সিটি প্রকল্পের পানি ও পয়োনিষ্কাশন লাইন ডুমনী খালের সঙ্গে সংযুক্ত। ড্যাপে প্রদর্শিত প্রাকৃতিক খালের প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে রাস্তাটির নিচ দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে কালভার্ট। এ কালভার্ট-সংলগ্ন অংশে খালটির উৎসমুখ সম্পূর্ণ আটকে ৭ দশমিক ২৪ বিঘা জায়গা ভরাট করা হয়েছে। ভরাটকৃত এ জায়গার মালিকানা দাবি করে সাইনবোর্ড ঝুলানো হয়েছে। খালটির উৎসমুখ ভরাট করায় পানিপ্রবাহ সম্পূর্ণ থেমে গিয়ে আশপাশে তৈরি হয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতার। স্থানীয়দের অভিযোগের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই স্থানটি আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশন (প্রা.) লিমিটেড চলতি রাতারাতি ভরাট করে। এ স্থানে বহুতল ভবন নির্মাণ করে বিক্রির পরিকল্পনা চলছে বলেও অনুসন্ধানে জানা যায়। এতে বলা হয়, ডুমনী খালটি ভরাট করে সম্পূর্ণভাবে পানিপ্রবাহ বন্ধ করা হয়েছে। প্রাকৃতিক এ জলাধারের পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ৬ (ঙ) ও জলাধার সংরক্ষণ আইনের ৫ ধারা ভঙ্গ করা হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (ঢাকা অঞ্চল) বলেন, প্রতিবেদনে এ-সম্পর্কিত দুটি আইন ভঙ্গ হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রতিবেদনটি এরই মধ্যে এনফোর্সমেন্ট শাখায় পাঠানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ৬ (ঙ) ধারা ভঙ্গ করলে দুই বছর কারাদন্ড বা ২ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা কিংবা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে। পাশাপাশি দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে এর পাঁচ গুণ পর্যন্ত শাস্তির বিধানও রয়েছে। অন্যদিকে জলাধার সংরক্ষণ আইনের ৫ ধারা ভঙ্গ করে কোনো জলাধারের শ্রেণী পরিবর্তন করে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করলে তা বিনা ক্ষতিপূরণে ভেঙে ফেলার বিধান রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতের নির্দেশে তা বাজেয়াপ্ত করার বিধানও রাখা হয়েছে আইনটিতে।
এদিকে আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, ভরাটকৃত জায়গাটি গ্রুপ চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীর ক্রয়কৃত ব্যক্তিগত সম্পত্তি। এ বিষয়ে আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ তেলায়েত হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘যেহেতু কোম্পানি ওই জায়গায় এখনো কোনো প্রজেক্ট করেনি, তাই এ-সংক্রান্ত কোনো কিছু তার জানা নেই। পরিবেশ অধিদপ্তর যদি প্রতিবেদন তৈরি করে থাকে, তবে আইনে যা আছে, তা-ই হবে। নোটিস না পেয়ে, না জেনে কিছু বলা ঠিক হবে না।’
এর আগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছেও একই বিষয়ে একটি অভিযোগে বলা হয়, আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশন কোম্পানি ডুমনী খালের মুখ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে। এতে ডুমনীসহ পুরো এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে খালটির উৎস মুখ খুলে দেয়ার আবেদন জানানো হয় অভিযোগে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

16 − 13 =