দেশে হেড-নেক ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের পরিসংখ্যান নেই

0
1292

দেশে হেড-নেক ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের কোনও সঠিক পরিসংখ্যান নেই। ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বল্প পরিসরে জরিপ চালানো হলেও জাতীয়ভাবে এখনও এই রোগের পরিসংখ্যান তৈরির কার্যক্রম শুরু হয়নি। ধুমপান ও তামাকজাত পণ্য সেবনকেই হেড-নেক ক্যান্সারের প্রধান কারণ উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন পরিসংখ্যান তৈরি করা গেলে সে অনুযায়ী চিকিৎসার উদ্যোগ নেয়া যেত। এমন পরিস্থিতিতে শুক্রবার (২৭ জুলাই) দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব হেড অ্যান্ড নেক ক্যান্সার দিবস। সামগ্রিক পরিসংখ্যান তৈরি না হলেও সম্প্রতি স্বল্প পরিসরে হেড-নেক ক্যান্সার নিয়ে জরিপ চালিয়েছে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। এই হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যে চালানো জরিপে দেখা যায়, ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের শতকরা ৪০ থেকে ৪৫ ভাগ হেড-নেক ক্যান্সারে আক্রান্ত। গত এক বছরে হাসপাতালটির বহির্বিভাগে ক্যান্সারের চিকিৎসা নেওয়া ৮ হাজার ৯২১ রোগীর মধ্যে হেড-নেক ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন তিন হাজার ৮৩৬ জন।

কোন ধরনের ক্যান্সারকে হেড-নেক ক্যান্সার বলা হবে এমন প্রশ্নের জবাবে ‘সোসাইটি অব হেড নেক সার্জনসের’ সভাপতি ডা. বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মুখ, গলার, সাইনাস, থাইরয়েডের ক্যান্সারকে একত্রে হেড-নেক ক্যান্সার বলা হয়। মুখ, মুখ-গহ্বর, নাক, শ্বাসনালি, সাইনাস ও খাদ্যনালির উপরি ভাগসহ বিভিন্ন লালা গ্রন্থিও এ ক্যান্সারের অন্তর্গত।
তিনি বলেন, এই রোগের কারণ বেশির ভাগই ধুমপানজনিত। পান, সুপারি, জর্দাতে যারা অভ্যস্ত তাদের এই রোগ বেশি হয়। শিশুদের মধ্যে এই রোগের হার কম। তবে এই রোগে আক্রান্তদের নিয়ে সঠিক পরিসংখ্যান নেই জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এই চিকিৎসক বলেন, ‘কমিউনিটি বেজড ডাটা আমাদের কাছে নেই। আমরা আমাদের আউটডোর ঘিরে স্টাডি করছি।’ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) হেড-নেক ক্যান্সার বিষয়ক ? একটি বিশেষায়িত শাখা রয়েছে। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (মিটফোর্ড হাসপাতাল) এর নাক, কান ও গলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. মণিলাল আইচ লিটু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই রোগ সংক্রান্ত জাতীয় পরিসংখ্যান থাকলে তা চিকিৎসা সহায়তা, অর্থব্যয়সহ সব কাজে ব্যবহার করা যেত।
জাতীয় ক্যান্সার রিসার্চ হাসপাতাল ইন্সটিটিউটের সহকারি অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দেশে পুরুষদের মধ্যে ফুসফুসের পরেই এই ক্যান্সারের অবস্থান। তামাকজাত দ্রব্যের (জর্দা, গুল) কারণে এই রোগ বেশি হয়। এছাড়া বংশগত কারণেও কেউ কেউ আক্রান্ত হয়।
এর চিকিৎসা সম্পর্কে ডা. বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকী বলেন, কেউ যদি ধুমপান বা তামাক ব্যবহার ছেড়ে দেয় তাহলে তিনি এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হবেননা। আক্রান্ত হওয়ার শুরুতে ধরা পড়লে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি জানিয়ে তিনি বলেন পরবর্তী পর্যায়ে আসলে বড় ধরণের সার্জারি, রেডিওথেরাপি লাগে। তবে সবক্ষেত্রে আশানুরুপ ফলাফল পাওয়া যায় না।
এই ক্যান্সারের চিকিৎসা ব্যয়বহুল জানিয়ে ডা. বেলায়েত বলেন, আমাদের বিএসএমএমইউতে এর সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা হয়। এছাড়া মেডিক্যাল কলেজগুলোতে এর চিকিৎসা হলেও সেখানে এ সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই।
ডা. বেলায়েত জানান হেড-নেক ক্যান্সারের অস্ত্রোপচারের পর রেডিওথেরাপির প্রয়োজন পড়ে। তবে এই রেডিওথেরাপির সুযোগ আমাদের দেশে সীমিত। তিনি বলেন, ‘আমরা মহাখালীতে অবস্থিত ক্যান্সার হাসপাতালে রেডিওথেরাপি নিতে পাঠাই। সাধারণত নিয়ম দুই সপ্তাহ পরে রেডিওথেরাপি দেওয়ার নিয়ম থাকলেও সেখানেন রোগীর সিরিয়াল পড়ে প্রায় তিনমাস পর। একারণে তা কার্যকর ফলাফল বয়ে আনে না।
হেড-নেক ক্যান্সার প্রতিরোধের বিষয়ে ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, ধুমপান পরিহার, তামাকজাত পণ্য পরিহার ও মদ্যপান পরিহারের মাধ্যমে এই ক্যান্সার থেকে দূরে থাকা যেতে পারে। তিনি জানান যে কটি ক্যান্সারে গণহারে স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে সনাক্ত করা যায় এর মধ্যে এই ক্যান্সার অন্যতম। এটি নিজে নিজেই স্ত্রিনিং করা যায়।
তিনি জানান, একটি নির্দিষ্ট বয়সের পরে তিনটি জিনিস দেখলেই এটি সনাক্ত করা সম্ভব। মুখগহ্বরের ভিতরে ঝিল্লিতে লাল লাল ছোপ ছোপ দাগ যদি দেখা যায়, জিহ্বা বা মাড়ি বা ঝিল্লির মধ্যে সাদা খসখসে আস্তরের মতো হয় এবং ঝিল্লির নিচে ছোট্ট দানার মতো ওঠে এবং পরে ঘা হয়ে যায়। এই তিনটি জিনিস কারো মুখের মধ্যে দেখা গেলে পরবর্তী পরীক্ষার জন্য নিয়ে গেলে খুব প্রাথমিক অবস্থায় এই ক্যান্সার নির্ণয় করা যায়। স্বাস্থ্য শিক্ষার মাধ্যমে এই স্ক্রিনিং নিজেরাই করা যেতে পারে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

8 + three =