দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার প্রবেশপথ হিসেবে পরিচিত ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক। তবে এ সড়কে তদারকির অভাবে অবৈধভাবে চলছে ঘোড়ার গাড়ি, শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নছিমন, করিমন, মাহেন্দ্রসহ বিভিন্ন যান। সেই সঙ্গে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর থেকে দৌলতদিয়া ঘাট পর্যন্ত প্রায় ১৮ কিলোমিটার মহাসড়কে যানবাহনগুলোর মধ্যে চলে ভয়ংকর গতি প্রতিযোগিতা।
হাইওয়ে পুলিশের অবহেলার কারণে এ প্রতিযোগিতা থামছে না। অন্যদিকে অবৈধ যান চলাচলও কমছে না। ফলে এ মহাসড়কের রাজবাড়ী অংশ মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। জানা গেছে, রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে অতিরিক্ত গাড়ির চাপ লেগেই থাকছে। তা ছাড়া মহাসড়কের এ এলাকায় এসে যানবাহানগুলো নদী পার হওয়ার জন্য কার আগে কে ফেরিতে ওঠার সিরিয়ালে নাম লেখাবে—সেই চেষ্টায় বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে একে অন্যকে অতিক্রম করে। ফলে এ সড়কে প্রায়ই দুর্ঘটনায় হতাহতের খবর শোনা যায়। সম্প্রতি মহাসড়কের দৌলতদিয়া ঘাটের পেট্রলপাম্পের সামনে দ্রুতগামী পণ্যবাহী ট্রাকের ধাক্কায় পারভেজ নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর মহাসড়কের গোয়ালন্দ ফিডমিল এলাকায় বরিশাল থেকে ছেড়ে আসা হানিফ পরিবহনের একটি বাস ঘোড়ার গাড়িকে ধাক্কা দিলে তিনজন আরোহী ছিটকে মহাসড়কের পাশে পড়ে গুরুতর আহত হয়। এ ঘটনায় একটি প্রাইভেট কারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এভাবে নিয়মিত সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানিসহ পঙ্গু হচ্ছে শত শত মানুষ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগের প্রবেশদ্বার দৌলতদিয়া ঘাট। প্রতিদিন অন্তত পাঁচ-ছয় হাজার বিভিন্ন যানবাহন এ ঘাট দিয়ে পারাপার হয়। দক্ষিণের বরিশাল, খুলনা ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার যানবাহনগুলো আলাদা আলাদা সড়ক হয়ে রাজবাড়ী সদর উপজেলার গোয়ালন্দ মোড়ে এসে এক মহাসড়কে মিলিত হয়। এখান থেকে ফেরিঘাটে পৌঁছে আগে ফেরির নাগাল পেতে চালকরা এক প্রকার গতির ভয়ংকর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। একইভাবে ফেরি পার হয়ে আসা যানবাহনের চালকরাও দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালায়। উভয়মুখী যানবাহনের এ প্রতিযোগিতায় পথচারীরাও ঝুঁকিতে থাকে। কিন্তু মাহাসড়কের দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় মাত্র দুই কিলোমিটার চার লেন হলেও বাকি এলাকা দুই লেন বিশিষ্ট। তা ছাড়া দুই লেন এলাকার মহাসড়কের দুই পাশে হার্ড সোল্ডার নেই। কোনো কোনো স্থানে মূল কার্পেটিংয়ের পাশে ভেঙে গেছে। কোথাও কোথাও সড়কের পাশের মাটি সরে গিয়ে পথচারীদের হাঁটার জায়গা পর্যন্ত নেই। এ কারণে অবৈধভাবে চলা ছোট যানবাহনগুলোকেও মূল মহাসড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে। এতে প্রায়ই এ যানগুলো দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। এদিকে গুরুত্বপূর্ণ এ এলাকার পাশে বসন্তপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়, বসন্তপুর বাজার, নিমতলা বাজার, গোয়ালন্দ মোড় বাজার, গোয়ালন্দ উপজেলা কমপ্লেক্স, হাসপাতাল, পৌর ভবনসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ কারণে সাধারণ মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন মহাসড়কের এ এলাকা দিয়ে চলাচল করতে হয়। সদর উপজেলার আহলাদিপুর হাইওয়ে থানার ওসি মাসুদ পারভেজ জানান, গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে ঘোড়ার গাড়ি, নছিমন, করিমন কিংবা মাহেন্দ্র চলাচলের বৈধতা নেই। এখন থেকে মহাসড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এ ছাড়া বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে মহাসড়কে সার্বক্ষণিকভাবে স্পিডগান যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করে বেপরোয়া গতির যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরই মধ্যে বেপরোয়া গতিতে চলাচল করা বেশ কিছু যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।