মাদকাসক্তরা ভিড় করছে ওষুধের দোকান বা ফার্মেসিগুলোতে

0
716

মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকায় নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলায় মাদকাসক্তরা ঝুঁকছে বিকল্প নেশার দিকে। এখন তাদের চলাচল ও ভিড় বেড়েছে ওষুধের দোকান বা ফার্মেসিগুলোতে। এসব দোকানে কম মূল্যে ও সহজে মাদকাসক্তরা পাচ্ছে নেশাজাতীয় দ্রব্য। এ বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষসহ স্থানীয় প্রশাসন কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

জলঢাকা থানা সূত্রে জানা যায়, গত জানুয়ারি থেকে ৫ সেপ্টেম্বর (গতকাল বুধবার) পর্যন্ত জলঢাকা থানায় প্রায় ৮৪টি মাদক মামলা হয়েছে এবং নামীয় আসামি ১৩২ জন। এতে গ্রেপ্তার হয়েছে ৯৬ জন। উদ্ধার হয়েছে ইয়াবা এক হাজার ৬০৯টি, চোলাই মদ ১০৫ লিটার, গাঁজা চার কেজি ৭০০ গ্রাম ৮ পুরিয়া, হেরোইন পাঁচ গ্রাম ৩৮ পুরিয়া ও ফেনসিডিল ২১ বোতল। গত ১ জুন সবচেয়ে বড় চালান ৬০০টি ইয়াবা ট্যাবলেটসহ বড়ঘাট পেট্রল পাম্প এলাকায় গ্রেপ্তার হন পার্শ্ববর্তী গঙ্গাচড়া উপজেলার কিশামত শেরপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম ও ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার খোলাবাড়ী গ্রামের ইসমাইল হোসেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক মাদকসেবী জানায়, পুলিশি তৎপরতায় মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকার কারণে মাদকদ্রব্য কেনাবেচা করতে পারছে না মাদকসেবী ও বিক্রেতারা। তাই মাদকসেবীরা বিকল্প নেশার দিকে ঝুঁকছে। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে উপজেলার এক শ্রেণির অসাধু ফার্মেসি মালিক ঝিমুনি, তন্দ্রা কিংবা ঘুম আসে, এমন ওষুধগুলো বিক্রি করছে দেদার। অনেক সময় তারা সরবরাহ সংকটের অজুহাত তুলে এসব ওষুধ-দ্রব্য চড়া দামে বিক্রি করে। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই বেশির ভাগ ফার্মেসিতে নেশাজাতীয় উচ্চমাত্রার ঘুমের ওষুধ অধিক হারে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া মাদকসেবীরা ফার্মেসি থেকে কফ-কাশির সিরাপ সংগ্রহ করে এর সঙ্গে ভিটামিনজাতীয় বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে তৈরি করছে এক ধরনের মাদক। এর নাম হয়েছে সামপ্যাক বা ঝাক্কি অথবা মিকশ্চার।সূত্রে জানা যায়, ওষুধ কম্পানি প্রতিনিধিদের ড্রাগ লাইসেন্সবিহীন কোনো ফার্মেসিতে ওষুধ সরবরাহের নিয়ম নেই। কিন্তু তারা সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসি মালিকদের কাছে এসব ওষুধ বিক্রি করছে। এ ছাড়া ওষুধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষের তৎপরতা ও নজরদারি না থাকায় ওষুধ ব্যবসার আড়ালে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই অসৎ কিছু ব্যবসায়ী বিক্রি করছে মাদকের উপকরণ ঘুমের ওষুধ ও কাশির সিরাপ। বিভিন্ন ওষুধ কম্পানির চলতি বছরের কয়েক মাসের ইনভয়েস বা তাদের পণ্য বিক্রির রসিদগুলো দেখলেই বোঝা যাবে, কতগুলো এমন নেশাজাত পণ্য জলঢাকা উপজেলায় বাজারজাত করা হয়েছে। জলঢাকা উপজেলা আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. দেবাশীষ সরকার বলেন, ‘যারা এমনটি করছে, তারা সাময়িকভাবে তন্দ্রা, ঝিমুনি কিংবা ঘুমের ভাব পাচ্ছে। কিন্তু এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই ভয়াবহ। এমন আসক্তদের দাম্পত্যজীবন অসুখী হয়। পরে শরীরে পানি লাগবে, কিডনি নষ্টসহ নানা রকম জটিল রোগে আক্রান্ত হবে তারা এবং এর পরিণাম অকাল মৃত্যু।’জলঢাকা থানার ওসি মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘এমন কথা শোনা যাচ্ছে। তবে ফার্মেসিগুলোর ওপর আমরা কড়া দৃষ্টি রাখছি।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়  বলেন, ‘জানলাম তাদের বিকল্প নেশার কথা। বিষয়টি আমি দেখছি।’

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

2 × 2 =