সরকারের খাদ্যগুদামগুলোতে খাদ্যশস্য পাচারের ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না

0
643

বড় অপরাধের ছোট বা নামমাত্র শাস্তি দেওয়ার কারণেই সরকারের খাদ্যগুদামগুলোতে খাদ্যশস্য পাচারের ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না। সেই সঙ্গে এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত মূল হোতাদের খুঁজে বের না করার কারণে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। গত শনিবার রাজধানী থেকে ২১৫ টন খাদ্যশস্য জব্দ করার আগে র‌্যাব গত বছরের ২৭ আগস্ট ওজনে কম দেওয়ার কারণে তেজগাঁও সিএসডির একটি গুদাম সিলগালা করে দিয়েছিল।

সেই ঘটনা তদন্ত করার জন্য খাদ্য অধিদপ্তর তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিত করে তাদের শাস্তির আওতায় আনার জন্য বিভাগীয় মামলা করার সুপারিশ করে। বিভাগীয় মামলায় ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের নামমাত্র শাস্তি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। গত বছরের ২৭ আগস্ট রাজধানীর একজন এমপির নামে বরাদ্দ করা ৩০ টন জিআর চাল উত্তোলন করতে এমপির একজন প্রতিনিধি তেজগাঁও সিএসডিতে যান। সেখানে তাঁকে ৩০ টন চাল বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তিনি গুদাম থেকে দুটি ট্রাকে করে চাল নিয়ে বের হয়ে আসার পর তা আটক করে র‌্যাব। সেই চাল ফের তেজগাঁও সিএসডিতে নিয়ে ওজন করালে সাড়ে ৯ টন কম পাওয়া যায়। এ ঘটনা তদন্ত করে কমিটি সিএসডির ৩ নম্বর গুদামের ইনচার্জ মো. নান্নু মিয়া, ১৩ নম্বর গুদামের ইনচার্জ মুহাম্মদ হোসেন মামুন ও তল্লাশি শাখার ইনচার্জ পাপিয়া সুলতানাকে দায়ী করে। একই সঙ্গে ৩ ও ১৩ নম্বর গুদামের শ্রমিকদের কালো তালিকাভুক্ত করে শ্রমিক সরবরাহের নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করার মতামত দেয়। পরে বিভাগীয় মামলায় মো. নান্নু মিয়া ও মুহাম্মদ হোসেন মামুনকে তাঁদের পদের এক ধাপ নিচে নামিয়ে দেওয়া হয়। আর পাপিয়া সুলতানার একটি ইনক্রিমেন্ট বাতিল করা হয়। কিন্তু শ্রমিকদের কালো তালিকাভুক্ত করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়নি। খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যে কর্মকর্তা একটি সিন্ডিকেটের যোগসাজশে জিআর ও ওএমএসের চাল কম দেন তাঁর কঠোর শাস্তি হওয়া দরকার। জিআর হচ্ছে গ্র্যান্ড রিলিফ। এই গ্র্যান্ড রিলিফ এতিমদের মধ্যে বিতরণের জন্য এমপিকে দেওয়া হয়েছিল। আর ওএমএস হচ্ছে খোলা বাজারে চাল বিক্রি। এটি সরকারের একটি জনপ্রিয় কর্মসূচি। প্রতি কেজি চাল ৩৯ টাকা কেজি দরে কিনে ২৮ টাকায় বিক্রি করে। এসব চাল যারা ওজনে কম দেয় তাদের শাস্তি নিচের পদে নামিয়ে দেওয়া বা একটা ইনক্রিমেন্ট না দেওয়া পর্যাপ্ত নয়। চাল ওজনে কম দেওয়ার ঘটনায় শ্রমিকদের কালো তালিকাভুক্ত করে শ্রমিক সরবরাহকারী ঠিকাদার পরিবর্তনের সুপারিশ করা হলেও তা করা হয়নি। এখনো আগের ঠিকাদারই শ্রমিক জোগান দিয়ে যাচ্ছেন। খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আরিফুর রহমান অপু  বলেন, ‘বিভাগীয় মামলায় বিধি অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সরকারি চাকরিজীবীদের বিধির বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।’ তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে, র‌্যাব জব্দকৃত ৩০ কেজি ওজনের চালের আলাদা একটি খামাল ছিল।  ওই খামালের কোনো বস্তাই ৩০ কেজি ওজনের পাওয়া যায়নি। বস্তাগুলো ছিল ১৬ কেজি, ১৭ কেজি, ২০ কেজি, ২২ কেজি এবং ২৫ কেজি ওজনের। তদন্ত করার সময় দেখা যায়, জব্দকৃত চালের বস্তার ৫০ শতাংশেরই মুখ হাতে সেলাই করা ছিল। অথচ হাতে সেলাই করা কোনো বস্তা থাকার কথা নয়। কোনো কোনো কর্মচারী ১০ বছরের বেশি সময় তেজগাঁও সিএসডিতে কর্মরত রয়েছেন। কিন্তু কারোই এক জায়গায় তিন বছরের বেশি সময় থাকার কথা নয়। খাদ্য অধিদপ্তরের আরেকজন কর্মকর্তা  বলেন, ‘দেশে বর্তমানে ১৩টি সিএসডি  রয়েছে। এসব সিএসডির ম্যানেজার পদে ফুড ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদায়ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এই পদটি ফুড ক্যাডার কর্মকর্তাদের চাকরিতে প্রবেশপদ। কিন্তু দেশের ১৩ সিএসডির কোনোটিতেই ক্যাডার কর্মকর্তারা নিয়োগ পান না। নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের এসব পদে সংযুক্তি দেওয়া হচ্ছে। শুধু সিএসডিতেই নয়, বর্তমানে ১৫টি জেলার ডিসি ফুড পদেও নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা বসে আছেন। ক্যাডার কর্মকর্তা না দিয়ে নন-ক্যাডারদের এসব পদে পদায়ন করার কারণ হচ্ছে অবৈধ টাকা লেনলেন করা। নন-ক্যাডারদের দিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এসব সিএসডি থেকে সংগৃহীত টাকা বিভিন্ন পকেটে চলে যায়।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

5 + 7 =