নাজনীন:
প্রতারনার এক নাম আদম ব্যবসা। আর আদম ব্যবসার সাইনবোর্ড ব্যবহার করে রাজধানীর মতিঝিলে বসে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা করে কোটিপতি বনে গেছে জেড লাইনস লিমিটেডের মালিক শাহজাহান মুন্সী। কাগজ টোকাই দিয়ে ঢাকা শহরে প্রথম জীবন শুরু করলেও আদম ব্যবসার নামে মানব পাচার, মাদক ব্যবসা, আমদানী-রপ্তানীর আড়ালে ভ্যাট-ট্যাক্স ফাঁকি সহ চোরাকারবারী করে এখন চলাফেরা করেন কোটি টাকার গাড়িতে। যা রীতিমতো শাহজাহানের গ্রামের বাড়ী শরীয়তপুর সহ দেশের ভিআইপি মহলে এক বিস্ময়কর ঘটনা। র্যাব-পুলিশ, আইজি-ডিআইজি, মন্ত্রী-মিনিষ্টারের সাথে তার উঠাবসা। যখন যা ইচ্ছে হয় তা তিনি এক তুরিতেই করতে পারেন বলে প্রচারিত।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শরীয়তপরের জাজিরা থানার লক্ষীকান্তপুর গ্রামের এক অসচ্ছল জন্ম নেয়া শাহজাহান মুন্সী ঢাকায় এসে শুরু করে কাগজ কুড়ানো। কাগজ কুড়াতে কুড়াতে গেন্ডারিয়া রেল লাইন বস্তি সহ অন্যান্য বস্তি এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে মাদকদ্রব্য আনা নেয়া কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। মাদক ব্যবসায় অনেক লাভ বলে এক সময় সে নিজেই মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। এরপর শাহজাহান মুন্সীকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। অধিক লাভের আশায় মাদকের পাশাপাশি অস্ত্র ও গোলাবারুদের ব্যবসায়ও জড়িয়ে পড়েন। অবৈধ পথে উপার্জন করে অল্প দিনেই অগাধ সম্পদেও মালিক বনে যান। গেন্ডারিয়া এলাকায় স্কুলের পাশে বিশাল বাড়ি সহ রাজধানীর বিভিন্ন এরাকায় একাধিক প্লট, ফ্লাটের মালিক হন। তার রয়েছে একাধিক দামী গাড়ী। বিশ্বস্ত সুত্রে জানা যায়, সুচতুর শাহজাহান মুন্সী আইনী জটিলাতা এড়াতে অধিকাংশ ষম্পত্তি নামে বেনামে কিনে রেখেছেন। গ্রামেও কোটি টাকা খরচ করে আলীশান বাড়ী নির্মান করে চমক সৃষ্টি করেছেন। তবে সে নীতি নৈতিকতা বির্বজিত একজন ভন্ড, শঠ ও প্রতাররক ধরনের মানুষ। মদ জুয়া নারী নিয়ে বেশীর ভাগ সময় কাটান। একারনে সে তার আত্মীয় স্বজন থেকে পরিচিত মহলে জুয়াড়ী শাহজাহান নামে অধিক পরিচিত। একটি সুত্র জানায়, শাহজাহান মুন্সী ভীষন চালাক ও কৌশলী, প্রশাসনের চোখ কর্তা ব্যক্তিদের ম্যানেজ করেই তিনি বহাল তবিয়তে আছেন। স্বভাবে বাকপটু। বিদেশে লোক পাঠানোর নামে শত শত মানুষের নিকট থেকে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়ে বানিয়েছেন রাস্তার ফকির। ১২৭ মতিঝিলে শাহজাহান মুন্সীর জেড লাইন লিমিটেডের অফিসে গেলে দেখা যায়, বিদেশে গমনেচ্চুক কয়েকজন তরুনের সাথে কথা বললে তার জানায় বিদেশে যাওয়ার জন্য তারা শাহজাহান মুন্সীকে তারা কেউ ৩ লাখ, কেউ ৫ লাখ টাকা দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু এখন বিদেশ না পাঠিয়ে টালবাহানা শুরু করছে। ইদানিং অফিসে এসেও তাকে ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না। তারা শাহজাহান মুন্সীর বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলেও জানান।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে শাহজাহান মুন্সীর বাটন ফেয়ার ইন্ডাষ্ট্রিজ লিঃ নামক একটি আমদানী রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যার মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন কুট কৌশলে ভ্যাট ট্যাক্স ফাকি দিয়ে বিভিন্ন পন্য আমদানী রপ্তানি করে যাচ্ছেন। অন্তরালে বিভিন্ন কালো বাজারীদের অবৈধ পন্য পাচার করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এর মধ্যে স্বর্ন চোরাচালান অন্যতম। শাহজাহান মুন্সীর আরো একটি অবৈধ ব্যবসা হচ্ছে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার। প্রবাসীরা যে টাকাটা দেশে পাঠাবে ঐ টাকাটা বিভিন্ন দেশে তার সিন্ডিকেটের লোকজন কালেকশন করে ওই খানেই জমা রাখে। এরপর বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন বিভিন্ন অর্থ পাচারকারীর নিকট থেকে মোট কমিশনে টাকা নিয়ে প্রবাসীদের বাড়ীতে তা পরিশোধ করেন। আর পাচারকারীদের টাকা ঐ সব দেশেই পরিশোধ করেন। এতে পাচারকারীদের টাকা এদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন ও সরকারের নজর এড়িয়ে বিদেশে পাচার হয়। শাহজাহান মুন্সীদের মতো হুন্ডি ব্যবসায়ীদের কারনে দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা প্রতিনিয়ত পাচার হয়ে যাচ্ছে। বিগত সময়ে ডিবি পুলিশ শাহজাহান মুন্সীর বাসায় অফিসে তল্লাশী করে বিপুল পরিমান হুন্ডির অর্থ উদ্ধার করেন। এসময় শাহজাহান মুন্সী মোটা টাকায় ডিবি পুলিশকে ম্যানেজ করে সেই যাত্রায় রেহাই পান। চলবে….