নাক-মুখ ও গলাটিপে হত্যা করা হয়েছে স্কুল ছাত্রীকে

0
728

ধর্ষণের চেষ্টার সময় চিৎকার করায় নাক-মুখ ও গলাটিপে হত্যা করা হয়েছে স্কুল ছাত্রী তাসনিম সুলতানা তুহিনকে (১৩)। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন যুবককে আটকের পর স্বীকারোক্তি মোতাবেক রবিবার রাত ৯টার পর ওই স্কুলছাত্রীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

চট্টগ্রামের হাটহাজারী পৌরসভার ফটিকা গ্রামের শাহজালাল পাড়া এলাকায় নিজ বাসভবন থেকে শুক্রবার ৮ম শ্রেণির ছাত্রী তুহিন নিখোঁজ হবার দুদিন পর নিজেদের বাসভবনের চুতর্থ তলায় থাকা ভাড়াটিয়ার ছেলে শাহনেওয়াজ মুন্নার বাসার সোফার নিচ থেকে তার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয়। তুহিন সালাম ম্যানশন নামে পাঁচ তলাবিশিষ্ট ভবনের মালিক উপজেলার গড়দুয়ারা ইউনিয়নের নেয়ামত আলী সারাং বাড়ির আবু তৈয়বের কন্যা ও হাটহাজারী গালর্স হাই স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্রী। শাহানেওয়াজ মুন্না একই পৌরসভার চন্দ্রপুর গ্রামের পল্লী চিকিৎসক মোহাম্মদ শাহাজানের পুত্র। দীর্ঘদিন ধরে তারা সালাম ম্যানশনের চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাটে ভাড়ায় থাকতো বলে জানান হাটহাজারী মডেল থানা পুলিশের এস. আই জসিম উদ্দিন। এস আই জসিম উদ্দিন জানান, তুহিনের বাবা-মা হজ্ব পালনের জন্য বর্তমানে সৌদি আরব অবস্থান করছেন। প্রতিদিনের মতো শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রাইভেট শিক্ষক তুহিনকে পড়াতে আসেন। এ সময় ভবনের নিচ তলা থেকে ২য় তলায় পড়তে যাওয়ার কথা থাকলেও সে যায়নি।  পরে অনেক খোঁজাখুঁজি করে তাকে পাওয়া যায়নি। ওই দিন সন্ধ্যায় থানায় তুহিনের নিখোঁজ হওয়ার একটি ডায়েরি রুজু করেন তার মামা এরশাদ মাসুম। এরশাদ মাসুম জানান, তুহিন নিখোঁজের পর থেকে একই ভবনের চতুর্থ তলার ভাড়াটিয়া ডা. শাহজাহানের ছেলে মাদকসেবী বখাটে মুন্না ও তার সহযোগীদের সন্দেহে আনা হয়। বিষয়টি অবহিত করার পর পুলিশ শুক্রবার রাতে মুন্নার বসতঘরে তল্লাশী চালিয়ে ব্যর্থ হয়। কিন্তু রবিবার রাতে মুন্নার বসতঘর থেকে পঁচা দুর্গন্ধ বের হতে শুরু করে। খবরটি দিলে পুলিশ মাদকসেবী বখাটে মুন্নাকে রবিবার বিকেলে আটক করে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদ করলে একপর্যায়ে সে নিজে তুহিনকে হত্যা করে লাশ তার বাসায় সোফার নিচে লুকিয়ে রেখেছে বলে জানায়। মুন্না জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানায়, স্কুলছাত্রী তুহিন তার চাচাত খালাত বোন হয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় তাদের বাসায় তুহিন আসলে তার লালসার জন্ম হয়। এরপর তাকে ধর্ষণের চেষ্টায় ¯পর্শ করাহলে সে চিৎকার দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তুহিনকে হাত দিয়ে নাক-মুখ চেপে ধরে গলাটিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে সোফার নিচে লুকিয়ে রাখা হয়। এসময় মুন্নার বাবা-মা বাসায় ছিলেন না বলে পুলিশকে জানায় সে। হাটহাজারী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বেলাল উদ্দীন জাহাঙ্গীর ও পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শামিম শেখের নেতৃত্বে একদল পুলিশ রবিবার রাত ৯টার পর শাহজালাল পাড়া সালাম ম্যানশনের চতুর্থ তলার ডা. শাহজাহানের ভাড়া বাসা থেকে স্কুলছাত্রী তুহিনের বস্তাবন্দি গলিত লাশ উদ্ধার করে। এ সময় তুহিনের সারা শরীর ফুলা ছিল। এ ঘটনায় এলাকায় মর্মান্তিক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এরপর পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে গেলেও রাত সাড়ে ১০টার দিকে উত্তেজিত জনতা চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কে হাটহাজারী থানার সামনে ব্যারিকেড দেয় এবং হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করে। ফলে দুই পার্বত্য এলাকা চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় ওই দুই মহাসড়ক ব্যবহারকারী হাজার হাজার যাত্রী চরম দুর্ভোগে পড়ে। চট্টগ্রাম অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাটহাজারী সার্কেল) আব্দুল্লাহ আল মাসুম এ প্রসঙ্গে বলেন, স্কুল ছাত্রী হত্যাকান্ডের ঘটনায় উত্তেজিত জনতা সড়কে ব্যারিকেড দেয়। তবে হাটহাজারী মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক বেলাল উদ্দীন জাহাংগীর ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিলে আধঘন্টা পর উত্তেজিত জনতা মহাসড়ক থেকে ব্যারিকেড তুলে নেয়।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

5 × 5 =