সাগর-রুনী হত্যা মামলার নিরপেক্ষ তদন্ত নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এত ভয় কেন, উনি সব জানেন : এস কে সিনহা

0
740

আমেরিকার নিউইয়র্ক থেকে সম্প্রচারিত টিভি চ্যানেল টাইম টেলিভিশনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সাগর রুনী হত্যার প্রসঙ্গে এ মন্তব্য করেন আলোচিত-সমালোচিত বাংলাদেশের সাবেক এই প্রধান বিচারপতি। এসকে সিনহা বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী একজন ডায়নামিক লিডার। তাকে হোটেল সোনারগাঁওয়ে একটা সংবর্ধনা দেয়া হলো।

সেখানে আমি ছিলাম।তার (ভারতের প্রধানমন্ত্রী) সাথে আমার অনেক আলাপ-আলোচনা হলো।তখন তিনি বললেন যে ভারতে তার সরকার একটি ফরেন্সিক ইউনিভার্সিটি করছেন।আমি আগ্রহ নিয়ে তার সেই ইউনিভার্সিটি ভিসিট করার অনুমতি চাইলাম।তিনি (ভারতের প্রধানমন্ত্রী) আমাকে নিজ আগ্রহে ওয়েলকাম জানালেন।আমার চাওয়াটা আমি উনাকে (ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে) বললাম। আমি বললাম যে, আমি আমার জুডিসিয়াল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে ফরেন্সিক মেডিসিনের একটি ল্যাব করতে চাই। আমি উনাকে (ভারতের প্রধানমন্ত্রী) বললাম যে আমাদের এখানে অনেকগুলো স্পর্শকাতর মামলা রয়েছে।যেমন সাগর-রুনী হত্যা মামলা, কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট-এর তনু হত্যা মামলা।এই মামলাগুলো নিয়ে বলা হচ্ছে ডিটেকসন হচ্ছে কিন্তু আসলে ডিটেকসন হচ্ছে না।সরকার বলছে হয়ে গিয়েছে, কয়েকদিন কয়েক দিন বলে জনগণের যেটা দাবি এটাকে দমিয়ে রাখার জন্য সরকার ধামাচাপা দিচ্ছে। এটা বলার পর আমাদের প্রধানমন্ত্রী আমার কথায় রি-অ্যাক্ট করলেন।উনি জানালেন এসব কথা ইয়ে করবেন না।এটা তো হয়ে গিয়েছে।এরপর সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা টাইম টিভিকে সাগর রুনী হত্যা মামলা প্রসঙ্গে ‘প্রধানমন্ত্রী তাহলে জানেন’ বলে মন্তব্য করেন। এসময় সাবেক প্রধান বিচারপতি সিনহা টাইম টিভিকে বলছিলেন, প্রধানমন্ত্রী বললেন- ‘সিআইডি ছাড়া ফরেন্সিক মেডিসিন ল্যাব আমি বাংলাদেশে কোথাও করতে দিব না।’ সাক্ষাৎকারে সাগর-রুনী হত্যা মামলার নিরপেক্ষ তদন্ত নিয়ে উনার (প্রধানমন্ত্রী) এত ভয় কেন এটা তার প্রশ্ন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সাক্ষাৎকারের শেষ পর্যায়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা বলেন, ‘উনি (প্রধানমন্ত্রী) একজন আর্মি অফিসারকে দিয়ে একেবারে আমাকে (প্রধান বিচারপতিকে) পা দিয়ে লাথি দিচ্ছে, পদদলিত করছে।আমাকে চার্জ করছে বলছে হসপিটালে যাওয়ার জন্য।’ সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে এসকে সিনহা বলেন, ‘একটা হ-য-ব-র-ল অবস্থা। আমি কিছুই বুঝলাম না। ওয়াহাব মিয়া বলছেন যে তিনি সারারাত ঘুমাননি। অভিযোগগুলো নিয়ে অনেক চিন্তা করেছেন। অভিযোগগুলো সিরিয়াস। আমি বললাম, এসব কি অভিযোগ যে আমি জানলাম না। আমাকে রাষ্ট্রপতি জানালেন না। তোমরা আমার বিচার করবা? সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছো? প্রধান বিচারপতিকে যদি এতো তাড়াতাড়ি সরানো যায়।এতো তাড়াতাড়ি যদি সরকারের ফর্মূলা হয়ে যায়। তাহলে বিচার বিভাগ থাকবে ? ওয়াহাব মিয়া কিছুই বলছেন না।’ তথ্যসূত্র বলছে, নিজের আত্মজীবনীমূলক ‘অ্যা ব্রোকেন ড্রিম’ বই প্রকাশের পর এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে দেশে বিদেশে। যেখানে তিনি দাবি করেছেন বর্তমান সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের চাপ ও হুমকির মুখে দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। এই ইস্যুতে টাইম টেলিভিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন কীভাবে এবং কেন তাকে দেশ ত্যাগে বাধ্য হতে হয়েছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের অব্যাহত চাপ, গৃহবন্দি, বিশেষ বাহিনীর চাপ, সুস্থ থাকার পরও কেন তাকে ক্যান্সারের রোগি বানিয়ে দেয়া হয়েছে তাকে। সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা বলেন, ‘এর মধ্যে ১১টার সময় আমাকে আমার সেক্রেটারি এসে বলছে, স্যার ডিজিএফআই’র প্রধান এসেছেন আপনার সাথে কথা বলবে। তিনি এসে বললেন, স্যার আপনাকে লম্বা ছুটিতে যেতে হবে। হুয়াট? তিনি বললেন, হাই অথরিটি থেকে আমাকে অর্ডার দেয়া হয়েছে। দেখেন, আর্মি অফিসারকে দিয়ে অপদস্ত করা হয়েছে। এরপরে তো কিছুই করার থাকে না। এরমধ্যে আবার ডাক্তার আসলো। আমি বললাম আপনাদের তো ইনভাইটেশন দেই নাই। কেন এসেছেন? বললাম, কই আপনাদের কানে যে দেয়, ওইটা কোথায়? ব্লাড প্রেসার মাপে ওই যন্ত্র কোথায়? কিছুই আনেন নাই। মুছকি হাসতেছে। বলল, স্যার আপনি বুঝেন তো। আপনি তো আমাদের চেয়েও সুস্থ। এভাবে মশকারা করলো। একদিন একজন আসে। আরেকদিন আরেকজন আসে। ৬ তারিখে রাত ১০টার সময় আবার ডিজিএফআইয়ের প্রধান আসলেন। আমাকে চার্জ করছে। স্যার আপনাকে ভর্তি হতে হবে। আপনি অসুস্থ। হোয়াট? আমি কেন ভর্তি হবো? একজন আর্মি অফিসারকে দিয়ে একজন প্রধান বিচারপতিকে একেবারে পা দিয়ে লাথি দেয়া হয়েছে। আমাকে চার্জ করেছে ডিজিএফআই চিফ। স্যার আপনাকে ভর্তি হতে হবে। স্যার আপনি অসুস্থ। তিনি বললেন, আমি যা বলছি তাই ফাইনাল। ওয়াহাব মিয়াসহ সবাইকে প্রধান বিচারপতি করার লোভ দেখানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি ষোড়শ সংশোধনীর রায় দেয়ার আগের দিন পর্যন্ত আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ ছিল না।’

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

5 − 2 =