মানহানি মামলায় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন গ্রেপ্তার

0
425

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল সোমবার রাতে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

রংপুরের একটি মানহানি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ছিল। সেই ওয়ারেন্টেই উত্তরায় আ স ম আবদুর রবের বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আবদুর রবের বাসায় একটি বৈঠকে অংশ নিতে গিয়েছিলেন মইনুল হোসেন। তিনি গতকাল সন্ধ্যায় সেখানে যাওয়ার পর থেকেই গোয়েন্দা পুলিশ আ স ম রবের বাড়ি ঘিরে রাখে। পরে তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য ডিবি পুলিশ রবের বাসায় প্রবেশ করে। সেখানে ডিবি পুলিশ উপস্থিত হওয়ার পর মইনুলকে গ্রেপ্তার নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বাগিবতণ্ডা হয়। ডিবি পুলিশ রংপুরের মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কপি দেখায়। পরে তাঁকে ডিবির গাড়িতে তুলে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, ‘তাঁকে রংপুরের একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ গতকাল রাতে মইনুলের নম্বরে ফোন করলে তা ধরেন তাঁর ব্যক্তিগত সচিব রাজু আহমেদ। তিনি বলেন, ‘সন্ধ্যার পর আ স ম রব সাহেবের বাসায় স্যার দেখা করতে যান। তখন রব সাহেব ছিলেন না। ১৫ মিনিট পর রব সাহেব আসেন বাসায়। তার কিছুক্ষণ পরই পুলিশ পুরো বাসা ঘিরে ফেলে। তারা বলে, মইনুল স্যারের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে। রব সাহেব পুলিশকে বলেন, ‘উনি বাসায় এসেছেন, একটু চা খেয়ে প্রয়োজনে আপনাদের সঙ্গে চলে যাবেন। কিন্তু পুলিশ প্রচণ্ড খারাপ আচরণ করে তর্ক-বিতর্ক করে তাঁকে গাড়িতে তুলে ডিবি অফিস নিয়ে যায়।’ গত ১৬ অক্টোবর টক শোতে মাসুদা ভাট্টিকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। সাংবাদিক মাসুদ ভাট্টিকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার মানহানির অভিযোগে কুড়িগ্রামের অ্যাডভোকেট মাকসুদা বেগম বেবি কুড়িগ্রাম আদালতে মামলাটি করেন। এই মামলায় গতকাল কুড়িগ্রাম আদালত আগামী ২২ নভেম্বর তাঁকে হাজির হতে সমন জারি করেছেন। এ অবস্থায় গতকালই হাইকোর্টে হাজির হয়ে জামিন নেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। এর আগে ২১ অক্টোবর ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মাসুদা ভাট্টি এবং জামালপুর আদালতে যুব মহিলা লীগের জামালপুর শাখার আহ্বায়ক ফারজানা ইয়াসমীন লিটা ২০ হাজার কোটি টাকার মানহানির অভিযোগে মামলা করেন। এ মামলায় আদালত পৃথকভাবে মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এই আদেশের পর ওই দিনই হাইকোর্টে হাজির হয়ে জামিন নেন মইনুল হোসেন।

মইনুলের বিরুদ্ধে আরো তিন মামলা

নারী সাংবাদিককে কটূক্তি করার অভিযোগে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে গতকাল সোমবার আরো তিনটি মামলা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ভোলা ও রংপুরে দায়ের করা মানহানির মামলাগুলোতে একমাত্র আসামি তিনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে জারি হয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। অন্যদিকে হাইকোর্ট থেকে গতকাল একটি মামলায় জামিন পেয়েছেন তিনি। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালত। ডেইলি অবজারভার পত্রিকার ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি আয়েশা আহমেদের দায়ের করা মানহানির মামলায় গতকাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আহমেদের আদালত এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। নারী সাংবাদিককে কটূক্তির অভিযোগে মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে রংপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা হয়েছে। গতকাল মামলাটি দায়ের করেছেন নগরীর মুলাটোল এলাকার মিলি মায়া বেগম। বিচারক আরিফা ইয়াসমিন মুক্তা মামলাটি আমলে নিয়েছেন। তবে আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেননি। মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে ৫০ কোটি টাকার মানহানির মামলা হয়েছে ভোলায়। মামলাটি করেছেন জেলা যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক খাদিজা আক্তার স্বপ্না। বিচারক শরীফ মোহাম্মদ ছানাউল হক মামলাটি গ্রহণ করে বিচারিক তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে। ২৫ অক্টোবর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

three − three =