নেশাজাতীয় বুপ্রেনোরফাইন ইনজেকশন ভারত থেকে সীমান্তপথে ঢুকছে বাংলাদেশে

0
477

নেশাজাতীয় বুপ্রেনোরফাইন ইনজেকশন ভারত থেকে সীমান্তপথে ঢুকছে জয়পুরহাটে। র‌্যাব ও পুলিশের অভিযানে গত ৯ মাসে জেলায় আমদানি নিষিদ্ধ বুপ্রেনোরফাইন ইনজেকশন অ্যাম্পুল উদ্ধার হয়েছে ১৪ হাজার ৫৫টি।

 

র‌্যাব ও পুলিশ জানায়, হেরোইনে আসক্তদের কাছে বিক্রি করতে চোরাকারবারিরা সহজে বহনযোগ্য বুপ্রেনোরফাইন ইনজেকশন গোপনে ভারত থেকে আনছে। জয়পুরহাট র‌্যাব গত পাঁচ মাসে সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বুপ্রেনোরফাইন ইনজেকশন অ্যাম্পুল উদ্ধার করেছে চার হাজার ১৩১টি। আর পুলিশের অভিযানে চলতি বছরের আট মাসে উদ্ধার হয়েছে ৯ হাজার ৯২৪ অ্যাম্পুল বুপ্রেনোরফাইন ইনজেকশন। পাচারের সঙ্গে জড়িতদের আটক করে মামলাও দেওয়া হয়েছে। মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর জেলায় প্রকাশ্যে ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজা ও হেরোইন পাচার কিছুটা কমেছে। তবে বুপ্রেনোরফাইন ইনজেকশন পাচার রোধ হয়নি বলে একটি সূত্র জানায়। জয়পুরহাট র‌্যাব ক্যাম্প সূত্র বলছে, বহনে সুবিধা হওয়ায় এবং মাদকসেবীদের কাছে চাহিদা থাকায় ভারত থেকে মাদক কারবারিরা বুপ্রেনোরফাইন ইনজেকশন বাংলাদেশে পাচার করছে। এটি সহজে পাওয়া যাচ্ছে, যা মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের নেওয়া জিরো টলারেন্স পদক্ষেপকে বাধাগ্রস্ত করছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, বুপ্রেনোরফাইন ইনজেকশন মাদক হিসেবে ব্যবহার মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। আমদানি, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ এই ওষুধ কোনো চিকিৎসকই রোগীর ব্যবস্থাপত্রে লেখেন না। মাদক হিসেবে যারা এই ইনজেকশন শরীরে নিয়ে থাকে, তাদের কিডনি ও হার্ট অকেজো হয় এবং রক্তচাপ বেড়ে যায়। ফলে দ্রুত তারা মৃত্যুঝুঁকিতে পড়ে। র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ আগস্ট পাঁচবিবি উপজেলার বাগজানা গ্রামের একটি রাস্তা থেকে ৪০টি বুপ্রেনোরফাইন ইনজেকশনসহ নওগাঁ সদরের চকদেবপাড়ার তারাজুল ইসলাম (৪৮) নামের এক চোরাকারবারিকে, ৬ আগস্ট উপজেলার গোপালপুর গ্রাম থেকে ৮৩টি বুপ্রেনোরফাইন ইনজেকশনসহ নওগাঁর শেখপাড়া গ্রামের রেজাউল ইসলামকে এবং ১৩ আগস্ট পাঁচবিবির কোকতারা বাজার থেকে ৩৭৫টি বুপ্রেনোরফাইন ইনজেকশনসহ চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের জিয়া উদ্দীনকে (২৯) আটক করে র‌্যাব। একইভাবে তারা সেপ্টেম্বর মাসে উদ্ধার করে ৬৪৯টি বুপ্রেনোরফাইন ইনজেকশন। আটককৃতদের বিরুদ্ধে র‌্যাব বাদী হয়ে পাঁচবিবি থানায় পৃথক মামলা করেছে। এ ছাড়া জয়পুরহাট জেলা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা ৩ আগস্ট পাঁচবিবির উত্তর গোপালপুরের জনি মিয়াকে আটকের পর তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার করেন ২৫টি বুপ্রেনোরফাইন। সূত্রটি জানায়, ইনজেকশনগুলো পাঁচবিবি উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে আনার পর বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয় চোরাকারবারিদের কাছে। জয়পুরহাট র‌্যাব-৫ ক্যাম্পের অধিনায়ক আবুল খায়ের জানান, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে মাদক কারবারিরা গাঢাকা দিলেও কিছু মাদক কারবারি অনুমোদনহীন বুপ্রেনোরফাইন ইনজেকশন পাচার করে আনছে। এসব মাদকসেবীরা ব্যবহার করে। জয়পুরহাট পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান বলেন, ‘শক্তভাবে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করার কারণে চোরাকারবারিরা সহজে মাদক কেনাবেচা করতে পারছে না।’ বুপ্রেনোরফাইন ইনজেকশন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জেলা থেকে মাদকের মূলোৎপাটনে পুলিশ বাহিনী তৎপর আছে বলেই গত আট মাসে অন্যান্য মাদকের সঙ্গে বিপুল পরিমাণ বুপ্রেনোরফাইন ইনজেকশন উদ্ধার হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি জয়পুরহাটকে মাদকমুক্ত করার।’ জয়পুরহাট উদয় মাদকাসক্ত নিরাময়কেন্দ্রের পরিচালক মারুফ হাসান জানান, তাঁর নিরাময়কেন্দ্রে ১০০ জন মাদকাসক্ত চিকিৎসা নিতে এলে তার মধ্যে ২০ জনই বুপ্রেনোরফাইন ইনজেকশন নেওয়ার রোগী। সৃষ্টি মাদকাসক্ত নিরাময়কেন্দ্রের পরিচালক রশিদুল হাসান বলেন, বিশেষ করে যারা হেরোইনে আসক্ত তারা হেরোইন না পেলে বুপ্রেনোরফাইন ইনজেকশন নির্ভর হয়ে পড়ে। একটি ইনজেকশন অ্যাম্পুল তিন-চারজন মাদকসেবী সিরিঞ্জের মাধ্যমে শরীরে নেয়। এতে তাদের অনেকে হেপাটাইটিস বি রোগে আক্রান্ত হয়। জয়পুরহাট সিভিল সার্জন হাবিবুল আহসান তালুকদার বলেন, মাদকসেবীরা বুপ্রেনোরফাইন তাদের শিরায় পুশ করে। এতে তাদের কিডনি ও হার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়ে তারা।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

ten − 1 =