যৌতুকের জন্য গৃহবধূর ওপর বর্বরতা

32
837

প্রথমে পাষণ্ড শ্বশুর সুন্দর আলী গৃহবধূ নাজমুন্নাহারের দুই হাত পিছমোড়া করে বাঁধে। এরপর মাটিতে শুইয়ে পেটের ওপর পা দিয়ে চেপে ধরে। ইয়াবা ট্যাবলেট পানিতে গুলে জোর করে মুখে পুরে দেয় শাশুড়ি জানু বেগম, ননদ আসমা, সালমা ও রাজিয়া।

এরপর সবাই মিলে বেধড়ক পেটায় অসহায় গৃহবধূকে। একপর্যায়ে গোপনাঙ্গ ও শরীরের রক্তাক্ত ক্ষত স্থানগুলোতে ঢেলে দেয় মরিচের গুঁড়া। বেধড়ক পিটুনির একপর্যায়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে নাজমুন্নাহারের শরীর। সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন তিনি। মৃত ভেবে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তাকে বাড়ির পাশের নর্দমার ডোবায় ফেলে দেয় তারা। এরপর তার শ্বশুর-শাশুড়ি প্রচার করে- বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে তাদের পুত্রবধূ। কিন্তু প্রতিবেশীরা জড়ো হলে গোংগানির শব্দ শুনতে পায়। নর্দমার ডোবায় আবিষ্কার করে অর্ধমৃত গৃহবধূকে। সেখান থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন প্রতিবেশীরা। হাসপাতালে সংজ্ঞা ফিরে ওই গৃহবধূর। পরে দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করানো হয়। গত ১৪ই অক্টোবর মেঘনা উপজেলার চালিভাঙ্গা ইউনিয়নের রামপ্রাসাদেরচর গ্রামে বর্বর এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতিত গৃহবধূ নাজমুন্নাহার জানান, দুই বছর আগে সুন্দর আলীর ছেলে আলমগীর হোসেনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের সময় স্বর্ণালংকারসহ নগদ এক লাখ টাকা দেয়া হয়। বিয়ের কিছুদিন পর স্বামী আলমগীর সৌদি আরবে চলে যায়। কিন্তু শ্বশুর সুন্দর আলী ছেলেকে বিদেশে পাঠাতে অনেক টাকা লেগেছে জানিয়ে আরো দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। এ নিয়ে প্রায়ই তার ওপর নির্যাতন চালাতে থাকে। তিনি বলেন, গত ১৪ই অক্টোবর রাত ১০টার দিকে যৌতুকের টাকার জন্য তার ওপর নির্যাতন শুরু করে। একপর্যায়ে শ্বশুর-শাশুড়ি, ননদরা মিলে তার হাত-পা বেঁধে গোপনাঙ্গসহ সারা শরীরে মরিচের গুঁড়া লাগিয়ে দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকে। একপর্যায়ে তিনি সংজ্ঞা হারান।এ ব্যাপারে নাজমুন্নাহারের পিতা মিজানুর রহমান থানায় মামলা করেন। কিন্তু এখন গৃহবধূর শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে এবং প্রভাব খাটিয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করে মামলাটি ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন নির্যাতিত গৃহবধূর পিতা মিজানুর রহমান। এ ব্যাপারে মেঘনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবদুল মজিদ বলেন, এ ঘটনায় মামলার পরপরই আসামিদের ধরতে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু এর আগেই বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় তারা। পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করলে একজনকে কারাগারে পাঠিয়ে বাকিদের জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। ভিকটিমকে হুমকির বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

1 × 3 =