মীরসরাই উপজেলার বারইয়াহাট, জোরারগঞ্জ, বড়তাকিয়া বাজারসহ বিভিন্ন বাজারের কলার আড়তগুলোতে বিষাক্ত রাসায়নিক দিয়ে পাকানো হচ্ছে কলা। মাঝে মাধ্যে ভেজালবিরোধী অভিযান হলেও ফলের হাটগুলোতে এখানে অভিযান চোখে পরে না।
তবে প্রশাসন বলছে অভিযান হবে। সরেজমিন পরিদর্শনকালে বড়তাকিয়া বাজারের কলার আড়তদার আক্তার হোসেন বলেন, আগের থেকে বিক্রি এখন অনেক কম, আগে বছরে চার-পাঁচ লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছি। গত দু’বছরে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার কলা বিক্রি করাও মুশকিল। এসব কচি ও কাঁচকলা কি মেডিসিন দিয়ে পাকানো হয়? এমন প্রশ্নে তিনি কোনোভাবে স্বীকার করতে নারাজ। অথচ আড়তের এক পাশে ঠিকই কালো প্লাস্টিক পলিথিন মোড়ানো অর্ধশতাধিক কলার ছড়া মেডিসিন দিয়ে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে। অদূরেই তার মেডিসিন দেয়ার বালতিসহ অন্যান্য সরঞ্জাম দেখা যাচ্ছিল। কোনো মেডিসিনই দেয়া হয় না, জানালেন অপর আড়তের মামুন মিয়াও। কিন্তু সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বিভিন্ন স্থান থেকে কাঁচকলা সংগ্রহ করে এইসব পাইকাররা। মীরসরাই উপজেলার মীরসরাই সদর, বারইয়াহাট বাজার, মিঠাছড়া, আবুতোরাবসহ গুরুত্বপূর্ণ সকল বাজারেই এই ভাবেই বিষাক্ত রাসায়নিক দিয়ে পাকানো হচ্ছে কলা। পরে বাজার থেকে ইথিফন রাসায়নিক কিনে তা এক বালতি পানির সঙ্গে মিশিয়ে তাতে কলার ছড়াগুলো চুবিয়ে রাখেন। এরপর কলাগুলো প্লাস্টিকের ঝুঁড়িতে রেখে চটের বস্তা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। দুদিনেই কলাগুলো পেকে সুন্দর রঙ ধারণ করে । শুধু মীরসরাই নয় চট্টগ্রামের সর্বত্রও সারা দেশেই অপরিণত কলা পাকাতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিকর এই রাসায়নিক ইথিফন ব্যবহার করছেন। এ রাসায়নিক থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি সম্পর্কে তারা অবগত নন। জানা গেছে, বিভিন্ন ফল পাকাতে ইথিফন ব্যবহার হলেও এক্ষেত্রে কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। কিন্তু অতি মুনাফার লোভে ব্যবসায়ীরা এসব নিয়ম মেনে চলছেন না। দ্রæত পাকাতে তারা ফলে সরাসরি ইথিফন প্রয়োগ করে থাকেন। এতে সংশ্লিষ্ট ফলের পুষ্টিগুণ লোপ পায়। এছাড়া অ্যাসিডিটিসহ বিভিন্ন পরিপাক তন্ত্র-সংক্রান্ত্র রোগ এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে। ফলে এ রাসায়নিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে কোনো মাত্রা নির্ধারণ করা হয়নি এখনো। অথচ শরীরের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় পাশবর্তী দেশ ভারতে কলায় ইথিফনের ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ফল পাড়ার পর তাতে সরাসরি ইথিফন প্রয়োগের কোনো সুযোগ নেই। এটি করা হলে রাসায়নিকটি ফলটিতে থেকে যায়। বিশেষ করে সরাসরি প্রয়োগের ফলে কলায় ইথিফন থেকে এক ধরনের অ্যালডিহাইড উৎপন্ন হয়। কলার মাধ্যমে এ রাসায়নিক শরীরে প্রবেশ করলে তা মানুষের মস্তিষ্কে অক্সিজেন পরিবহনে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। মীরসরাই উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ কর্মকর্তা বুলবল আহমেদ বলেন, ইথিফন ফল পাকাতে ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে ফল গাছে থাকা অবস্থায়ই স্প্রের মাধ্যমে তা প্রয়োগ করতে হয়। এরপর নির্দিষ্ট সময় পর ওই ফল গাছ থেকে পাড়তে হয়। এ নিয়ম কলার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কিন্তু দেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দ্রুত মুনাফা লাভের আশায় অপরিণত কলা গাছ থেকে পেড়ে তাতে ইথিফন প্রয়োগ করছেন। এটি একেবারেই উচিত নয়। নির্দিষ্ট সময়ের আগে ইথিফন ব্যবহৃত ফল খেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হবে। ফলে মাত্রাতিরিক্ত ইথিফন ব্যবহার রোধে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বর্তমানে ইথিফন বাজারজাতের লাইসেন্স প্রদান বন্ধ রেখেছে বলে জানা গেছে। অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের তথ্য মতে, বর্তমানে নতুন করে কাউকে লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে না। কিন্তু এই নিয়ন্ত্রণ কি হবে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে এই বিষয়ে শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করব।